‘আগুন আর ছড়ানোর আশঙ্কা নেই, পুরোপুরি নিভতে সময় লাগবে’
৬ জুন ২০২২ ০০:২১
ঢাকা: ২৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন জ্বলছে। সেই আগুন অবশ্য এখন আর ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা নেই। তবে আগুন পুরোপুরি নিভতে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
রোববার (৫ জুন) দিবাগত রাত ১২টায় সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. নূরুল আলম দুলাল সারাবাংলাকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলছেন, বর্তমানে ওই ডিপোতে আগুন যে অবস্থায় রয়েছে, তাকে তারা বলেন ‘ড্যাম্পিং ডাউন’।
ওই ডিপোতে দিনভর দায়িত্বপালন শেষে মধ্যরাতে ফিরছিলেন নূরুল আলম দুলাল। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ডিপোতে আগুন এখনো পুরোপুরি নেভেনি। কোথাও কোথাও ছোট ছোট আগুন রয়ে গেছে। তবে তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা এই অবস্থাকে বলি ‘ড্যাম্পিং ডাউন’। এ অবস্থা থেকে আগুন আর ছড়ানোর খুব একটা আশঙ্কা নেই। আশা করি সকাল নাগাদ আগুন সম্পূর্ণরূপে নেভানো সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন-
- ১৩টি মরদেহ শনাক্ত হয়েছে: জেলা প্রশাসক
- ২০ ঘণ্টাতেও নেভেনি আগুন, নিহত বেড়ে ৪৯
- রাত ১০টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসবে: সেনাবাহিনী
- সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ, পুলিশ সদস্যসহ ৩ জন বার্ন ইনস্টিটিউটে
- ডিপোতে বিস্ফোরণ: ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের মধ্যে নিহত ও নিখোঁজ যারা
- নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ, আহতদের ৪-৬ লাখ টাকা দেবে ডিপো কর্তৃপক্ষ
সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশনের এই কর্মকর্তা জানালেন, বর্তমানে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ৭০ জন কর্মী বিএম কনটেইনার ডিপোতে কাজ করছেন। এছাড়া ঢাকা থেকে একটি সার্চ টিমও পৌঁছেছে সেখানে। দুলাল বলেন, রাতের বেলা তো উদ্ধার তৎপরতা চালানো খুব একটা সহজ হবে না। দিনের বেলা তারা গোটা এলাকায় তল্লাশি ও উদ্ধার তৎপরতা চালাবে।
শনিবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগুন লাগে ওই কনটেইনার ডিপোতে। সেখানে বিভিন্ন কনটেইনারভর্তি রাসায়নিক দ্রব্য থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সেইসঙ্গে কনটেইনারগুলোও বিস্ফোরিত হতে থাকে। রাতভর ফায়ার সার্ভিসের ১৬টিরও বেশি ইউনিট সেখানে কাজ করে। একপর্যায়ে ফায়ার সার্ভিসের ২৯টি ইউনিট মিলে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়। রোববার সকালে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৫০ সদস্যের একটি ইউনিট।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, মূলত রাসায়নিক দ্রব্যের উপস্থিতির কারণেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়েছে তাদের। এর মধ্যে বিকেলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের (চট্টগ্রাম) জিওসি মেজর জেনারেল সাইফুল আবেদীন জানান, আগুন মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে এনেছেন তারা। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাত ১০টা পর্যন্ত সময় লাগবে।
এদিকে, ভয়াবহ এই আগুন ও বিস্ফোরণে এরই মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৯ জন। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী রয়েছেন কমপক্ষে ৯ জন। আহত ও দগ্ধ হয়ে প্রায় দুইশ মানুষ চিকিৎসাধীন রয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে। এর মধ্যে ১৪ জনকে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটেও ভর্তি করা হয়েছে। দগ্ধদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন বার্ন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন।
রোববার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমের তথ্যও বলছে, এখন পর্যন্ত এই আগুনে প্রাণহানি ঘটেছে ৪৯ জনের। এছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, পার্কভিউ হাসপাতাল ও অন্যান্য হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৮২ জন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও পার্কভিউ হাসপাতাল থেকে অন্তত ১২ জনকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। আরও শতাধিক ব্যক্তি বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
আরও পড়ুন-
- ডিএনএ পরীক্ষার পর মরদেহ হস্তান্তর: পুলিশ
- গুরুতর আহতদের ঢাকায় আনার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
- সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ: ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের
- ‘হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছড়িয়ে পড়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসছে না’
- ৭ ফায়ার ফাইটারসহ নিহত ৩৯, হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হচ্ছে আহতদের
- বিএম কনটেইনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড মজুতের অনুমতি ছিল না
সারাবাংলা/টিআর