Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘হিরোইজম’ দেখাতে গিয়েই শিক্ষক উৎপল সরকারকে হত্যা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩০ জুন ২০২২ ১৪:৪৮

ঢাকা: ‘হিরোইজম’ দেখাতে গিয়েই শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে ছাত্র আশরাফুল আহসান জিতু। এক ছাত্রীর সঙ্গে অযাচিতভাবে ঘোরাফেরার বিষয়ে শিক্ষক উৎপল কুমার আপত্তি জানানোয় এতে ক্ষুব্ধ হয়ে এবং ওই ছাত্রীর কাছে ‘হিরোইজম’ দেখাতে গিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে র‌্যাবের কাছে শিকার করেছে জিতু।

বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। এর আগে, বুধবার (২৯ জুন) রাতে আশরাফুল আহসান জিুতকে গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরে সে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য দেয়।

বিজ্ঞাপন

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদ সম্মেলনে জানান, ঘটনার কয়েকদিন আগে আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক ছাত্রীর সাথে জিতু’র অযাচিতভাবে ঘোরাফেরা থেকে বিরত থাকার বিষয়ে বর্ণিত শিক্ষক প্রেষণা দেন। এই ঘটনায় জিতু ক্ষুব্ধ হয়ে এবং ওই ছাত্রীর কাছে নিজের হিরোইজম দেখাতে তার শিক্ষকের ওপর হামলার পরিকল্পনা করে।

আরও পড়ুন-

তিনি বলেন, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সে গত ২৫ জুন ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প স্কুলে নিয়ে আসে এবং তা শ্রেণি কক্ষের পেছনে লুকিয়ে রাখে ও তার শিক্ষককে আঘাত করার সুযোগ খুঁজতে থাকে। পরবর্তী সময়ে কলেজ মাঠে ছাত্রীদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালীন শিক্ষক উৎপল কুমারকে মাঠের এক কোণে একাকী দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিতু তার কাছে থাকা স্ট্যাম্প দিয়ে অতর্কিতভাবে বেধড়ক আঘাত করে গুরুতর জখম করে। পরে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে সাভারের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (২৭ জুন) ভোরে মৃত্যুবরণ করেন উৎপল কুমার।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, উৎপল কুমার সরকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্লাতকোত্তর সম্পন্ন করে ২০১৩ সালে আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ওই কলেজের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের স্কুল ইউনিফর্ম, চুলকাটা, ধূমপান করা ও ইভটিজিংসহ বিভিন্ন নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত বিষয়ে প্রেষণা দিতেন। এছাড়াও, তিনি ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলাধুলা পরিচালনাসহ শিক্ষার্থীদের সুপরামর্শ, মোটিভেশন ও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সৃজনশীলতা বিকাশে ভূমিকা রাখতেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, উৎপল কুমারকে পেটানোর পর জিতু এলাকায় সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান করলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতারের আশঙ্কায় সে রাতে এলাকা ত্যাগ করে। প্রথমে সে বাসযোগে মানিকগঞ্জ গিয়ে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাত যাপন করে। পরদিন সে তার অবস্থান পরিবর্তন করে আরিচা ফেরিঘাটে পৌঁছায় এবং ট্রলারযোগে নদী পার হয়ে পাবনার আতাইকুলাতে তার এক পরিচিতের বাড়িতে আত্মগোপন করে। কিন্তু পরদিন ভোরে সে আবারও তার অবস্থান পরিবর্তন করার জন্য আতাইকুলা থেকে বাসযোগে কাজিরহাট লঞ্চ টার্মিনালে এসে লঞ্চযোগে আরিচাঘাট পৌঁছায় এবং সেখান থেকে বাসযোগে গাজীপুরের শ্রীপুরে ধনুয়া গ্রামে আত্মগোপন করে। সেখান থেকেই র‌্যাব-১ জিতুকে গ্রেফতার করে।

জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত জিতু হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। সে শিক্ষা জীবনে বিরতি দিয়ে প্রথমে স্কুল, পরে মাদরাসা ও সর্বশেষ আবার স্কুলে ভর্তি হয়। সে ওই স্কুলে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। জিতু স্কুলের সবার কাছে উচ্শৃঙ্খল ছাত্র হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন সময় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, মারামারিসহ স্কুলের পরিবেশ নষ্টের জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। সে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ও স্কুল চলাকালীন ছাত্রীদের ইভটিজিং ও বিরক্ত করতো। এছাড়া স্কুলে সবার সামনে ধূমপান, ইউনিফর্ম ছাড়া স্কুলে আসা-যাওয়া, মোটরসাইকেল নিয়ে বেপরোয়াভাবে চলাফেরার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

আরও জানা গেছে, জিতুর নেতৃত্বে এলাকায় একটি কিশোর গ্যাং গড়ে উঠেছে। এই গ্যাং সদস্যদের নিয়ে মাইক্রোবাসে করে যত্রতত্র আধিপত্য বিস্তার করতো সে। পরিবারের কাছে তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে জিতু তার অনুসারী গ্যাং সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে তাদের উপর চড়াও হতো। এছাড়া বিভিন্ন সময় এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির লক্ষ্যে হামলা ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে শোডাউন দিত বলেও জানা যায়।

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

উৎপল কুমার সরকার টপ নিউজ স্ট্যাপ হত্যা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ইনজুরিতে মৌসুম শেষ রদ্রির
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:২৮

সম্পর্কিত খবর