জেকেজির কেউ নই—আমি নির্দোষ, খালাস চাই: ডা. সাবরিনা
১৮ জুলাই ২০২২ ১৫:১৪
ঢাকা: জেকেজি হেলথকেয়ারের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন প্রতিষ্ঠানটির ‘চেয়ারম্যান’ ডা. সাবরিনা শারমিন হোসেন। জেকেজিকাণ্ডে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে অপরাধের দায় থেকে খালাস চেয়েছেন তিনি।
আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারা মতে পরীক্ষাকালে প্রদত্ত বক্তব্য ডাক্তার সাবরিনা শারমিন হোসেন এই দাবি করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আমার কর্ম জীবনে যে উপার্জন করতাম সেখান থেকে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ টাকা দরিদ্র মানুষের জন্য ব্যয় করতাম । সেই কারণে জীবনে বাড়ি-গাড়ি কোনো কিছু করতে পারিনি। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে এই বিষয়টি প্রমাণ হয়েছে।’
লিখিত বক্তব্যে সাবরিনা আর উল্লেখ করেন, আমি সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এম বি বি এস পাস করেছি। এরপর ২৪তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেছি। আমি এফসিপিএস পার্ট ওয়ান করে গাইনি প্র্যাকটিস শুরু করি। পরে দেখতে পাই যে, আমাদের দেশে মহিলাদের হার্টের চিকিৎসা প্রদানের জন্য উপযুক্ত ডাক্তারের সংকট রয়েছে। সে কারণে কার্ডিও ভাস্কুলার অ্যান্ড থোরাসিক সার্জারির ওপরে এমএস করেছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর আমি রেজিস্ট্রার হিসেবে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতাল কার্ডিওলজি বিভাগে জয়েন করি। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে অন্যদের মতো আমার ডাক্তারি চেম্বার বন্ধ করে দেইনি। আমি ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা এমনকি বস্তিতে গিয়েও রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে এসেছি।
সাবরিনা উল্লেখ করেন— এই মামলা হয়েছে, জুন মাসের ২৩ তারিখে। এই মামলার বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা নেই। সে কারণে আমি হাসপাতালে আমার স্বাভাবিক ডিউটি করে গেছি। আমাকে যেদিন আটক করা হয় সেদিন হাসপাতাল থেকে ডেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। সেদিন দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে ডিসি অফিস থেকে ফোন করা হয়, সেখানে যাওয়ার জন্য এবং আমি সেখানে গেলে তারা আমাকে আটক করে। আমি সেখানে হাসপাতাল থেকে গিয়েছি। সেখানে তেমন কোনো কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। শুধু বলা হয়েছিল যে, আমি কোনো মেডিকেলে পড়ালেখা করেছি এবং কততম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকেছি। এর কিছু সময় পরে আমাকে আটক করা হয়।
এরপর আমাকে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। আমাকে জেকেজির চেয়ারম্যান/কনভেনার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু জেকেজি একটি প্রোপাইটরশিপ কোম্পানি এবং এই কোম্পানি চলে শুধুমাত্র সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স নিয়ে। আমি জেকেজির মালিক বা লাইসেন্স হোল্ডার না। জেকেজি আমার স্বামীর দাদির নামে দাতব্য উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল। এ বিষয়ে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না।
‘তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাকে একটি ভিজিটিং কার্ড দেখিয়েছিল। সেই কার্ডে আমার নাম ছিল। তবে সেই কার্ড আমি বানাইনি। তদন্তকারী কর্মকর্তা কোথায় সে কার্ড পায় তা জানি না। কোনো ব্যক্তিকে আমি সার্টিফিকেট দিয়েছি বা কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়েছি এমনটি নয়। আমি কোনো ব্যাংকের বা কোনো অ্যাকাউন্টের সিগনেটরিও না। আমি নির্দোষ তাই খালাস প্রার্থনা করছি।’
ডা. সাবরিনার স্বামী আরিফুল চৌধুরী ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৩৪২ ধারায় লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আমি জেকেজি হেলথ কেয়ার নামীয় প্রতিষ্ঠানের চিফ এক্সিকিউটিব অফিসার। জেকেজি হেল্থ কেয়ার সেন্টারটি আর্তমানবতায় নিয়োজিত সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। যা সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে নিবন্ধিত। বিশ্বব্যাপী করোনা প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে প্রতিষ্ঠানটি (জেকেজি) বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। সরকারের নির্দেশনা মেনে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেশের জনগণকে করোনাকালীন সেবা দিয়েছি।’
আরিফুল আরও বলেন, ‘জেকেজি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী হুমায়ুন কবির ওরফে হিমু প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করার কারণে গত ৯ জুন তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর হুমায়ুন কবির ওরফে হিমু জেকেজি কেউ নন। হুমায়ুনের কোনোরূপ কার্যকলাপের দরুণ জেকেজি বা তার কর্মচারী-কর্মচারীরা দায়ী নন। এই বক্তব্যও জেকেজির ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়। তথ্যটি নিম্নরূপ- জেকেজি হেলথ কেয়ার কখনও বাসা থেকে কোভিড-১৯ স্যাম্পল (নমুনা) সংগ্রহ করে না। যদি কেউ জেকেজি হেলথ কেয়ারের নাম ভাঙিয়ে বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তবে তার কোনো দায়-দায়িত্ব জেকেজি হেলথ কেয়ার গ্রহণ করবে না।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই মামলার এজহারে আমার নাম নেই, বাদী আমাকে সন্দেহ করেননি। এ মামলায় যে সব সাক্ষী বিজ্ঞ আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা কেউ আমার সঙ্গে বা আমার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিংবা আমার প্রতিষ্ঠানকে টাকা দিয়েছে এরকম কোনো সাক্ষ্য আদালতে দেননি।
এদিকে আগামীকাল ১৯ জুলাই মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য ধার্য রয়েছে। দুপুর ১২ টায় ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন।
চার্জশিটভুক্ত অপর আসামিরা হলেন, ডা. সাবরিনার স্বামী আরিফুল চৌধুরী, সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ুন কবির ও তার স্ত্রী তানজীনা পাটোয়ারী, জেকেজি হেলথকেয়ারের নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম, প্রতিষ্ঠানটির ট্রেড লাইন্সেসের স্বত্বাধিকারী জেবুন্নেছা রিমা ও বিপ্লব দাস। তারা সবাই কারাগারে আছেন।
আরও পড়ুন
অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ধমক দিয়ে কাজ করাত জেকেজি হেলথকেয়ার
সরকারি খরচে বেসরকারি ‘প্রতারণা’ জেকেজি হেলথ কেয়ারের
কোভিড-১৯ পরীক্ষা: জেকেজি’র সব অনুমোদন বাতিল
করোনা পরীক্ষা নিয়ে জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রতারণার জাল
চিকিৎসকরা পেত না পিপিই, জেকেজির জন্য ‘আনলিমিটেড’
রিমান্ডে থেকেও ‘ইয়াবা চাইছেন’ জেকেজি’র আরিফুল
জেকেজি’র ব্যবহৃত বিছানা-পিপিই ফেরত দেওয়ার নির্দেশ
জেকেজি’র প্রতারণা নিয়ে যা বলছে স্বাস্থ্য অধিদফতর
জেকেজির ফেলে যাওয়া ৩ হাজার ৪৪৬ সেট পিপিই উদ্ধার
জেকেজির ভুয়া স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতেন ডা. সাবরিনা
সরকারি চাকরি করেও ছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেকেজি’র চেয়ারম্যান
সারাবাংলা/এআই/একে