৭ মাসে রেলপথে ঝরল ১৭৮ প্রাণ
৩০ জুলাই ২০২২ ১৪:৩৩
ঢাকা: গত ৭ মাসে রেলপথে ছোটবড় ১ হাজার ৫২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ সব দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ১৭৮ জনের, আহত হয়েছেন ১ হাজার ১৭০ জন। এরমধ্যে অধিকাংশ দুর্ঘটনাই ঘটেছে গেট কিপারদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে বলে জানিয়েছেন সেভ দ্য রোড।
এক বিবৃতিতে শনিবার (৩০ জুলাই) সেভ দ্য রোডের মহাসচিব শান্তা ফারজানা এ তথ্য জানান।
সেভ দ্য রোড-এর চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম, প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদী, ভাইস চেয়ারম্যান বিকাশ রায়, জিয়াউর রহমান জিয়া, শওকত হোসেন ও ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের সহ-সভাপতি আনজুমান আরা শিল্পী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তারা জানান, অপরাধ-দুর্নীতির কারণে রেলের ২ হাজার ৮৫৬টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। অবৈধ ১ হাজার ৩৬১টি। অর্থাৎ, প্রায় ৪৮ শতাংশ অবৈধ। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে-৩৩টি ক্রসিং কে বা কারা ব্যবহার করছে, তা কেউ জানে না।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়- বৈধ লেভেল ক্রসিংগুলোর মধ্যে ৬৩২টিতে গেটকিপার নেই। অবৈধ লেভেল ক্রসিংগুলোয় যেমন গেটকিপার নেই, নেই কোনো সুরক্ষা সরঞ্জামও।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ১ থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত রেলপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৬টি। আহত হয়েছেন ৫২ জন, নিহত হয়েছেন ১৪ জন। ১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রেলপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪১টি। এতে আহত হয়েছেন ১১১ জন, নিহত হয়েছে ২৭ জন। ১ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত রেলপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ২২২টি। এতে আহত হয়েছেন ১৮৬ জন, নিহত হয়েছে ৩১ জন। ১ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত রেলপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ১১২টি। আহত হয়েছেন ১৬৬ জন, নিহত হয়েছে ৪২ জন। মে মাসে ২১২টি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ২২১ জন, নিহত হয়েছে ২৩ জন।
জুন মাসে রেলপথে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৯৭টি। এতে আহত হয়েছেন ১৭২ জন, নিহত হয়েছেন ১৭ জন। জুলাই মাসে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৪২টি, ঈদুল আজহার যাত্রাসহ বিভিন্ন ঘটনায় আহত হয়েছে ২৩২ জন, নিহত হয়েছে ২৪ জন।
২৪টি জাতীয় দৈনিক, ১৮টি ইলেকট্রনিক্স গণমাধ্যম, ২২টি নিউজ পোর্টাল এবং সারাদেশে সেভ দ্য রোড-এর বিভিন্ন শাখার স্বেচ্ছাসেবিদের তথ্যর ভিত্তিতে তৈরি করা এই প্রতিবেদনে যে তথ্য উঠে এসেছে।
সারাদেশে সংঘটিত এ সব দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি নিহতদের পরিবারকে কমপক্ষে ১০ লক্ষ এবং আহতদের সরকারি অর্থায়নে চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন সেভ দ্য রোড নেতারা। একইসঙ্গে রেলওয়ের বর্তমান পরিস্থিতির উত্তরণে সেভ দ্য রোড-এর পক্ষ থেকে ৭ টি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো অবৈধ ক্রসিংগুলোর সমাধান করা; দুর্নীতিবাজ রেল কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া; সরকারি লেজুড়ভিত্তিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগের নামে নেতাকর্মীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করে রেলকে গণমুখী বাহন হিসেবে প্রতিষ্ঠায় আত্ম নিয়োগ করা; যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশ রেলওয়েকে বেসরকারি খাত থেকে মুক্ত করে রাষ্ট্রীয় তত্বাবধায়নে পরিচালনার সুপরিকল্পিত উদ্যেগ গ্রহণ করা; সচিব-কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সব রকম আরাম-আয়েশ বাতিল করে সারাদেশে রেলওয়ের উন্নয়নে নিবেদিত থাকা; যাত্রী সেবার মান উন্নয়নে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর নজরদারি বাড়ানো এবং সারাদেশের সকল স্থানে কার্যকর সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা; প্রতি ৩ কিলোমিটারে পর্যবেক্ষণ করার জন্য রেলওয়ে পুলিশ-এর বিশেষ বুথ স্থাপন করা।
উল্লেখ্য, ২৯ জুলাই চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় গেটম্যান মো. সাদ্দামকে আসামি করে মামলা করেছে রেলওয়ে পুলিশ।
শুক্রবার (২৯ জুলাই) রাতে সিআরপি থানায় এএসআই জহির বাদী হয়ে অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে ৩০৪ ধারায় মামলা করেছে।
ছবি: শ্যামল নন্দী, স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট, সারাবাংলা।
আরও পড়ুন
রাজবাড়ীতে বেআইনিভাবে রেলের ট্রলি তৈরির অভিযোগ, শেষে দুর্ঘটনা
রেলের গেটম্যান সাদ্দামকে আসামি করে মামলা
মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কা: রেলের ২ তদন্ত কমিটি
রেল দুর্ঘটনা এড়াতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি
রেলের প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা, সংসদীয় কমিটির অসন্তোষ
শ্রীমঙ্গলে তেলবাহী ট্রেন দুর্ঘটনায়, ‘মাগনা’ তেল নিতে বাড়ছে ভিড়
‘ট্রেন দুর্ঘটনার পেছনে চক্রান্ত আছে কি না, তা তদন্ত হবে’
সিগনালে ভুল বোঝাবুঝি থেকে দুর্ঘটনা, প্রাথমিক ধারণা
সারাবাংলা/একে