বিএনপি কখনোই রাজনৈতিক দল হতে পারেনি: খায়রুজ্জামান লিটন
৩১ আগস্ট ২০২২ ২২:৩৮
বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ১ সেপ্টেম্বর। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, সন্ত্রাসবাদে মদদ, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, দুর্নীতিতে একের পর এক চ্যাম্পিয়ন হওয়া, জনস্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুপস্থিতি প্রভৃতি কারণে বিএনপির রাজনীতি এখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এ ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে গাঁটবাধার কারণে সমালোচনার মুখে ছিল বিএনপি।
বিএনপির রাজনৈতিক আদর্শ কতটুকু? দল হিসেবে বিএনপি কতটুকু গ্রহণযোগ্য, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কীভাবে দেখছে বিএনপির রাজনীতিকে— এরকম নানা মূল্যায়ন উঠে এসেছে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন- এর সাক্ষাৎকারে। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সারাবাংলার জয়েন্ট নিউজ এডিটর কবীর আলমগীর।
বিএনপি ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ১ সেপ্টেম্বর। তাদের রাজনীতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
মুখগুলো সেই পুরনো। তাদের আদর্শিক অবস্থানও কখনই স্পষ্ট ছিল না। স্বাধীনতার বিরুদ্ধশক্তির সঙ্গে একজোট হয়ে মুলধারার রাজনীতিতে ফিরতে পারেনি তারা। বিএনপির কথাই বলছি। মির্জা ফখরুলেরা কি নিজের মুখ আয়নায় দেখেন? খুব তো ‘আয়নাঘর’ নিয়ে মেতেছেন! ‘আয়নাঘর’ প্রথার প্রচলনই তো আপনাদের হাত ধরে। আর কত খেলবেন? জিততে তো পারেন না। নিজেদের মুখ আয়নায় দেখেন, দেখবেন বিএনপির রাজনৈতিক ইতিহাসটা কী? লজ্জা পেয়ে যাবেন।
খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত, তারেক রহমান ফেরারি— এই অবস্থায় ফখরুল তো সক্রিয়…
মির্জা ফখরুলকে দেখি মাঝেমাঝে চোখের জল, নাকের জল ফেলে ভালো মানুষ সাজতে চান। একজন সৎ রাজনৈতিক সত্তা হতে হলে, দেশের মানুষের স্বার্থ উদ্ধারে নিজস্ব বা গোষ্ঠীগত চিন্তা-কল্পনা থাকতে হয়। ফখরুলের উদ্দেশে বলতে চাই, এটি করতে পারলে মানুষ তখন আপনার জন্য কাঁদবে। আপনি মানুষের জন্য ভাবেন— তা প্রমাণ করতে পেরেছেন বলে কাঁদবে। এখন চোখের জল, নাকের জল ফেলে কাঁদেন কেন? এতে মানুষ হাসে। কাজেই কান্না করারও যোগ্যতা থাকতে হয়। আপনি কার জন্য কাঁদেন? বেগম জিয়ার বিলাসজীবন সামান্য ব্যাহত বলে? তারেক রহমান আরেকটি হাওয়া ভবন খুলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারছে না বলে কাঁদেন?
মির্জা ফখরুলকে সতর্ক করে দিয়ে বলছি— আপনি গোষ্ঠীগত রাজনৈতিক সমালোচনায় থাকুন। অসুবিধে নেই। কিন্তু একজন শেখ হাসিনা সম্পর্কে কিছু বলতে যাবেন না। অতবড় মুখ আপনার হয়নি। চাকরি করছেন, করেন। তারেক রহমানের মত ব্যক্তির হয়ে যে চাকরি করে, আর যাই হোক তিনি সৎ রাজনৈতিক সত্তা হিসসেবে নিজেকে দাবি করতে পারেন না। ধার ও ভার বলে কিছু আছে, সেই বিবেচনায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে আপনার কিছু বলারই অধিকার নেই।
বিএনপির দাবি তারা ‘জাতীয়তাবাদী’ দল। আসলেই কি তাই? তাদের জাতীয়তাবাদের ধরন কী?
জাতীয়তাবাদ তো একটি গভীর শব্দ। এটি উপলব্ধির বিষয়, যাপনের বিষয়, সর্বোপরী বিশ্বাসের বিষয়। তারা মুখে মুখে জাতীয়তবাদ বলে, কিন্তু জীবনযাপনে তার ছোঁয়া নেই। বিএনপির তথাকথিত জাতীয়তবাদের স্বরূপ কী, কী তার আকার-প্রকার; আমি নিশ্চিত এ বিষয়ে বিএনপির কোনো নেতারই ধারণা নেই। তারা হাওয়ায় ভেসে কল্পনার ফানুস ওড়ায়। একটু পেছন ফিরে তাকাতে হয়— এই দলের কথিত প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হত্যার মাস্টারমাইন্ড। কথিত প্রতিষ্ঠাতাই বলতে হবে জিয়াকে। জিয়া তো বিএনপি প্ল্যাটফর্ম করতে পেরেছিলেন মশিউর রহমান যাদু মিয়াদের জন্য। এই যাদু মিয়া মওলানা ভাসানীর অনুসারী ছিল। তখন ন্যাপকে বিলুপ্ত করে যাদু মিয়া নির্বাচনী প্রতীক ধানের শীষও বিএনপিকে প্রদান করেন। বিএনপির তো নিজস্ব কিছু কখনোই ছিল না। আজও নেই। এটি একটা ভাড়াটেদের দল। এরা খুন করে, এরা নিকৃষ্ট শাসক হতে চেয়ে যেভাবেই হোক ক্ষমতার মসনদ চায়।
এরা ২১ আগস্ট করে, একদিনে ৬৪টি জেলায় বোমা মারে, এরা আওয়ামী লীগের সম্মানিত কৃতি রাজনীতিকদের হত্যা করে। কাকে মারেনি তারা? আমাদের শাহ এম এস কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমাম কিংবা মমতাজ সাহেবদের কে এরা মেরেছে। এখন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি নারী শেখ হাসিনাকে এখন মারতে চায়। কেন আমাদের মহান নেত্রী শংকা প্রকাশ করে বলবেন, ‘ওরা আবার আঘাত আনবে!’ কেন? আমি বলব বিএনপি জাতীয়তাবাদের দল কখনোই নয়, এরা সন্ত্রাসবাদের দল-জঙ্গিবাদের দল।
বিএনপি জাতীয়তাবাদী নয়, তাহলে খালেদা জিয়ার আদর্শ কী?
জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী বেগম জিয়াও কোনো রাজনৈতিক আদর্শকে ধারণ করেননি। তিনিও জাতীয়তাবাদী হতে পারেননি। তিনি জামায়াতবাদী হয়ে জিয়া চরিত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান, তাদের রাজ-সুবিধা দিয়েছিলেন। জিয়ার মতোই খালেদা জিয়াও রাজাকারদের আশ্রয় দিয়েছেন। দেশে মৌলবাদী শক্তির উত্থানে কাজ করে গেছেন খালেদা জিয়া। তাই বিএনপি কখনোই রাজনৈতিক দল হতে পারেনি।
এই দলের নেতাটা কে? আমরা তো জানি না। যাকে তারা নেতা বলে দাবি করে, সে শুধু খুনের নির্দেশ দেয়। ২১ আগস্ট থেকে ২০০৪ সাল থেকে এই কুখ্যাত ছেলে আজ অব্দি এখনও ষড়যন্ত্রমূলক কাজ করে যাচ্ছে। বিএনপি তো নপুংসুকদের দল। ১৬ বছরে তারা একজন নেতা দলের মধ্য হতে বের করতে পারেনি। তারা সবসময় ক্ষমতায় আসার জন্য পেছনের অলি-গলি খোঁজে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা এখন তেমন নেই। অনেক পট-পরিবর্তন হয়েছে। স্পষ্টভাবে বলতে চাই, পেছনের রাস্তা দিয়ে ক্ষমতায় আসা যাবে না। আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মানুষগুলোকে হত্যা করতে চায় সে। সাবধান করে দিয়ে বলছি, কোনো ধরনের নাশকতা বরদাশত করা হবে না।
বিএনপির ‘সন্ত্রাসবাদ’ চর্চার বিপক্ষে আওয়ামী লীগের করণীয় কী তাহলে?
আমি বলতে চাই, সারাদেশের তৃণমূল রাজনৈতিক কর্মীদের, রাজপথে পাহারা দেওয়ার জন্য ময়দানে নামতে হবে। ওই বিএনপির কথিত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ১ সেপ্টেম্বর। নতুন মাসের শুরুর দিন থেকেই বাংলাদেশের দল, জনমানুষের দল, মুক্তিযুদ্ধের দল আওয়ামী লীগের কাছেই তাই রাজপথ থাকতে হবে। মানুষের কাছে না গিয়ে ওরা কার স্বার্থ উদ্ধার করতে চায়? ওরা কি জনস্বার্থ সংরক্ষণের রাজনীতি করেছে কখনো? জিয়া সামরিক অফিসারদের মেরে নিজের মসনদ ধরে রেখেছিল। একজন খুনি হয়ে সে বঙ্গবন্ধুর চিহ্নিত খুনিদেরকে নিয়ে রাজনীতি করে গেছে।
ছাত্রলীগকে বলব, তোমরা শেখ হাসিনার ওপর লেখাপড়া বাড়িয়ে তার ওপর পথনাটিকা তৈরি করে রাজপথে বসে যাও। যুবলীগকে বলব, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার জীবন পরিক্রমা নিয়ে কয়েক হাজার প্রবন্ধ রচনা করে পেশাজীবীদের নিয়ে প্রত্যেক জেলায় সভা সেমিনার করে রাজপথে থাকুন।
আর স্বেচ্ছাসেবক লীগকে দিতে হবে পাহারা। পুলিশ প্রশাসনের কিছু কিছু জায়গায় ওই রাজনৈতিক অপশক্তির লোক আছে। তাই সতর্ক থাকতে হবে। অন্যদিকে বিদেশি টাকা পেয়ে কিছু কিছু ফ্রন্ট তৈরির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যারা বিনষ্ট করতে চায়, দাঁত ভাঙা জবাব দিয়ে তাদের কথিত সভাগুলোকে পণ্ড করতে হবে।
সারাবাংলাকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
আপনাকেও ধন্যবাদ
আরও পড়ুন
আওয়ামী লীগ কারও দয়ায় ক্ষমতায় নেই: খায়রুজ্জামান লিটন
আগস্ট মাসেই ঘুরে ফিরে আঘাতটা আসে: খায়রুজ্জামান লিটন
ভারত সফররত খায়রুজ্জামান লিটন আলোচনায়
রাজশাহী মহানগর আ.লীগের দায়িত্বে ফের লিটন-ডাবলু
আতিকুল পেলেন মন্ত্রীর পদমর্যাদা, লিটন-খালেক প্রতিমন্ত্রীর
চার নেতা হত্যায় জাতি যা হারিয়েছে তা পূরণীয় নয়: মেয়র লিটন
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিজড়িত বেকার হোস্টেলে খায়রুজ্জামান লিটনের শ্রদ্ধা
সারাবাংলা/একে