ইয়েমেনে যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, প্রতিশোধের হুমকি হুথির
১২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৫০
ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের উপর যৌথভাবে হামলা শুরু করেছে যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। লোহিত সাগরে ইসরাইলগামী জাহাজে হামলার কারণে হুথি যোদ্ধাদের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় দেশ দুটি। এদিকে বোমা হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইয়েমেন। খবর বিবিসি ও আলজাজিরা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) জানিয়েছে, ইয়েমেনে লজিস্টিক্যাল হাব, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং অস্ত্র সংরক্ষণের স্থানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
এদিকে বার্তা সংস্থা আল মায়াদিন জানিয়েছে, ইয়েমেনে লক্ষ্যবস্তুতে বোমা হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন হুথি উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুসেইন আল-ইজি। তিনি বলেন, ‘আমেরিকান-ব্রিটিশ যুদ্ধ জাহাজ, সাবমেরিন এবং যুদ্ধবিমান দ্বারা ব্যাপক ধ্বংসাত্মক আক্রমণের শিকার হয়েছে আমাদের দেশ। এজন্য তাদের একটি কঠিন মূল্য দিতে হবে এবং এই নির্মম আগ্রাসনের জন্য সব রকমের ভয়ঙ্কর পরিণতি ভোগ করতে হবে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স’র (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে হুথি রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ফাদল আবু-তালিবও লিখেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ‘যেকোনো যুদ্ধ বা সংঘর্ষের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত’ তারা।
হুথি পরিচালিত টিভি চ্যানেল আল-মাসিরাহ’র বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, দেশটির রাজধানী সানা’সহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে আল-দুলাইমি বিমান ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে। এছাড়া সাদা শহরের পূর্বে একটি সেনা ঘাঁটি, হুদাইদাহ বিমানবন্দরের আশেপাশের এলাকা, তাইজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং উপকূলীয় আবস জেলায় হামলা করা হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘ইয়েমেনের বেশ কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। যা ব্যবহার করে হুথি বিদ্রোহীরা বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলপথে চলাচলের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করেছিল।’
হোয়াইট হাউসের দেওয়া ওই বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) ও ‘যুক্তরাজ্য মিলে অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কানাডা এবং নেদারল্যান্ডের সমর্থনে’ এই হামলা পরিচালিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এই হামলাগুলো একটি স্পষ্ট বার্তা বহন করে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের অংশীদাররা তাদের কর্মীদের উপর আক্রমণ সহ্য করবে না বা বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক রুটে চলাচলের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কোনো কর্মকাণ্ডকে সমর্থন দেবে না।’
বাইডেন আরও বলেন, ‘আমাদের জনগণকে রক্ষা করার জন্য এবং প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অবাধ প্রবাহকে রক্ষা করার জন্য আরও পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করব না।’
প্রসঙ্গত, গাজায় হামলার প্রতিবাদে ও ফিলিস্তিনের সমর্থনে লোহিত সাগরে ইসরাইলের মালিকানাধীন ও দেশটির বন্দরগামী জাহাজগুলোতে আক্রমণ শুরু করে ইয়েমেনের হুমি বিদ্রোহীরা। এতে করে ইসরাইলের আমদানি-রফতানি কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে আসছিল ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। এ পরিস্থিতির মধ্যে ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালাল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
এর আগে, গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এ ঘটনায় সংশোধিত নিহতের সংখ্যা এক হাজার ১৩৯ জন বলে জানিয়েছে ইসরাইল। এদিকে ইসরাইলের হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ২৩ হাজার ৪৬৯ ফিলিস্তিনি হয়েছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ৫৯ হাজার ৬০৪ জন।
সারাবাংলা/এনএস