টাঙ্গাইল শাড়িসহ ১৪টির সনদ হস্তান্তর, জিআই পণ্য বেড়ে হলো ৩১
২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৪১
ঢাকা: বহুল আলোচিত টাঙ্গাইল শাড়ি অবশেষে জিওগ্রাফিক ইনডিকেটর (জিআই) তথা ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের সনদ পেয়েছে। একই সনদ পেয়েছে গোপালগঞ্জের রসগোল্লা, নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা, রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আমসহ ১০টি পণ্য। তাতে দেশে জিআই সনদ পাওয়া পণ্যের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১টিতে।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর (ডিপিডিটি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে নতুন সনদ পাওয়া ১০টিসহ মোট ১৪টি পণ্যের জিআই নিবন্ধন সনদ তুলে দেওয়া হয় আবেদনকারী কর্তৃপক্ষের কাছে। রাজধানীর বেইলি রোডে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমির মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন সনদগুলো বিতরণ করেন।
বাংলাদেশের জিআই পণ্য হিসেবে প্রথম স্বীকৃতি পেয়েছিল জামদানি শাড়ি। এরপর একে একে বিভিন্ন পণ্য এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে। তারপরও জিআই স্বীকৃতির বিষয়টি বৃহত্তর পরিসরে অনালোচিত ছিল। এ বছরের শুরুর দিকে ভারতের শিল্প মন্ত্রণালয় ‘টাঙ্গাইল শাড়ি অব বেঙ্গল’কে তাদের নিজেদের জিআই পণ্যের স্বীকৃতি দিলে ব্যাপক সমালোচনা হয়। বিষয়টি অনলাইন-অফলাইনে টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়।
আরও পড়ুন- জিআই স্বীকৃতি কী-কেন-কীভাবে, এর গুরুত্বই বা কতটুকু
টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের নিজস্ব সৃষ্টি ও ঐতিহ্য হলেও একে ভারত নিজেদের জিআই পণ্যের স্বীকৃতি দিলে টনকও নড়ে কর্তৃপক্ষের। ওই সময় টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতির আবেদন করে ডিপিডিটিতে। ডিপিডিটি থেকেও বিভিন্ন এলাকার জিআই পণ্যের স্বীকৃতির আবেদনকে উৎসাহিত করা হয়। এতে বেশকিছু পণ্যের আবেদন জমা পড়েছিল। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে জার্নাল আকারেও প্রকাশ পেয়েছিল। এর মধ্যে ১০টি পণ্য গত কয়েক দিনের মধ্যে জিআই সনদ পেয়েছে, যেগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার।
ডিপিডিটির মহাপরিচালক মুনিম হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ৬ ফেব্রুয়ারি জামদানি শাড়ির জিআই আবেদন জমা পড়েছিল ডিপিডিটিতে। গত বছরের কিছু আবেদন জমা ছিল। এর আগের আবেদনও ছিল। এর মধ্যে বেশকিছু পণ্যের আবেদন যাচাই-বাছাই করে জিআই জার্নালেও প্রকাশ করা হয়েছিল। জিআই জার্নালে প্রকাশের দুই মাসের মধ্যে ওই আবেদনের বিপক্ষে কোনো আবেদন না পড়লে সেটি জিআই সনদ পায়। এই পণ্যগুলোও একই ধারাবাহিকতায় জিআই সনদ পেয়েছে।’
মুনিম হাসান আরও বলেন, ‘জামদানি শাড়ি থেকে শুরু করে নাটোরের কাঁচাগোল্লা পর্যন্ত ১৭টি পণ্যের জিআই সনদ আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়েছিল আগেই। এরপর বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, কুমিল্লার রসমালাই ও কুষ্টিয়ার তিলের খাজা জিআই সনদ পেয়েছিল। তবে এগুলোর সনদ আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়নি। আজ (বৃহস্পতিবার) নতুন জিআই সনদ পাওয়া ১০টি পণ্যসহ এগুলোর সনদও হস্তান্তর করেছেন শিল্পমন্ত্রী। এর ফলে এখন দেশে জিআই সনদধারী পণ্যের সংখ্যা বেড়ে ৩১-এ উন্নীত হলো।’
আরও পড়ুন-
- জিআই সনদ পাচ্ছে টাঙ্গাইল শাড়িসহ ৬ পণ্য
- টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতি পেতে আবেদন
- জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেল রংপুরের হাঁড়িভাঙা আম
- টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই জার্নাল প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর
- টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতির আবেদন প্রকাশ পেল জার্নালে
- জিআই নিয়ে ভারতের ঘোষণা সাংঘর্ষিক হলে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ
- নরসিংদীর লটকন ও অমৃত সাগর কলার জন্য জিআই স্বীকৃতির আবেদন
ডিপিডিটির মহাপরিচালক জানান, আরও কিছু পণ্যের জিআই স্বীকৃতির আবেদন অধিদফতরে জমা রয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাইসহ বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। কোনো কোনোটির জার্নালও প্রকাশ পেয়েছে। পর্যায়ক্রমে সেগুলোও জিআই সনদ পাবে।
মুনিম হাসান বলেন, ‘আমরা জিআই সনদকে গুরুত্ব দিচ্ছি। বিভিন্ন এলাকার যোগ্য পণ্যগুলোর জিআই আবেদনকে উৎসাহিত করছি। আশা করছি খুব শিগগিরই আমাদের জিআই পণ্যের সংখ্যা আরও বাড়বে।’
নতুন জিআই সনদ পেল যেসব পণ্য
নতুন করে ১০টি পণ্যকে জিআই সনদ দিয়েছে ডিপিডিটি। এই পণ্যগুলো হলো— রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আম, মৌলভীবাজারের আগর, মৌলভীবাজারের আগর আতর, মুক্তাগাছার মন্ডা, যশোরের খেজুরের গুড়, নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা, রাজশাহীর মিষ্টি পান, গোপালগঞ্জের রসগোল্লা, জামালপুরের নকশিকাঁথা ও টাঙ্গাইল শাড়ি।
আগের জিআই স্বীকৃতি পাওয়া ২১ পণ্যের তালিকা
২০১৬ সালে জামদানি শাড়ি দেশের প্রথম পণ্য হিসেবে জিআই স্বীকৃতি পায়, তা আগেই বলা হয়েছে। এরপর সেটিসহ এখন পর্যন্ত ২১টি পণ্যকে জিআই স্বীকৃতি দিয়েছে ডিপিডিটি। এই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের ইলিশ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম, বিজয়পুরের সাদামাটি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ, বাংলাদেশের কালোজিরা, রংপুরের শতরঞ্জি, রাজশাহীর সিল্ক, ঢাকার মসলিন, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম, বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি এবং বাংলাদেশের শীতলপাটি।
জিআই স্বীকৃতি পাওয়া পণ্যের মধ্যে আরও রয়েছে— বগুড়ার দই, শেরপুরের তুলশীমালা ধান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা আম, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, কুমিল্লার রসমালাই এবং কুষ্টিয়ার তিলের খাজা।
অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, মাটি, বায়ু, পানি, পরিবেশ, কারিগরদের দক্ষতা প্রভৃতি স্বতন্ত্র ও অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে ছোট এ ভূখণ্ডের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব পণ্যকে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি এর গুণগত মান ও টেকসই সংরক্ষণের দিকে নজর দিতে হবে।
সারাবাংলা/টিআর
জিআই পণ্য জিআই স্বীকৃতি টাঙ্গাইল শাড়ি ডব্লিউআইপিও ডিপিডিটি ফজলি আম বাংলাদেশের ইলিশ ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য