কমলা বনাম ট্রাম্প— পররাষ্ট্রনীতি বদলাবে বাংলাদেশের জন্য?
৫ নভেম্বর ২০২৪ ১১:০০
ঢাকা: সংঘাতময় বিশ্ব বাস্তবতার মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন একেবারেই দোরগোড়ায়। এরই মধ্যে আগাম ভোট পড়েছে অনেক রাজ্যেই। তবে স্থানীয় সময় অনুযায়ী ঘণ্টা চব্বিশেক পরেই শুরু হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটযুদ্ধ। ডেমোক্র্যাট দলের কমলা হ্যারিস নাকি রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্প— সারা বিশ্বই যে প্রশ্ন নিয়ে তাকিয়ে আছে, সেই প্রশ্নের মীমাংসাও হতে চলেছে এই ভোটের মাধ্যমেই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিভিন্ন দেশে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি অনেকটাই নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রের এই নির্বাচনের ওপর। একইভাবে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলমান বাংলাদেশের ওপরও এই নির্বাচনের ফলাফলের প্রভাব রয়েছে কি না কিংবা সেই প্রভাবের গতিপ্রকৃতি কেমন— এ নিয়েও বিভিন্ন মহলেই রয়েছে জোর আলোচনা, নানা ধরনের গুঞ্জন।
মার্কিন নির্বাচন ঘিরে এসব আলোচনায় নতুন করে ঘি ঢেলেছে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক হ্যান্ডেলের একটি পোস্ট, যেখানে তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে অভিযোগ করে তার নিন্দা জানিয়েছেন। ট্রাম্প আবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ মনে করেন, যেটি তিনি প্রেসিডেন্ট থাকার সময় যেমন দেখিয়েছিলেন, তেমনি এক্স হ্যান্ডেলের পোস্টেও উল্লেখ করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে— ট্রাম্প নির্বাচনে জয় পেলে কি তাহলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হবে?
এদিকে প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট নেতা হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘনিষ্ঠতার কথাও সুবিদিত। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও একই দলের। এবারের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে তিনি ড. ইউনূসকে আন্তরিকতার সঙ্গেই স্বাগত জানিয়েছেন। একই দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিস নির্বাচনে জিতলে কি তাহলে ইউনূস সরকার বাড়তি সুবিধা পাবে— এমন কৌতূহলও কাজ করছে অনেকের মধ্যে।
রাজনীতি পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা দুই প্রার্থীর কারও জয়ের ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ নিয়ে চলমান মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির তুলনায় বড় কিছু পরিবর্তন আশা করছেন না। তবে কমলা হ্যারিস বা ট্রাম্পের জয়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই নীতিতে যে কিছু মাত্রায় হলেও বদল হবে, সেটিও মনে করছেন তারা।
কমলা ও ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি কেমন
কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সার্বিক নীতিমালার মূল পার্থক্যের জায়গাটি তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, “কমলা হ্যারিসের নীতিমালা অনেক বেশি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আবর্তিত। অন্যদিকে ট্রাম্পের নীতিমালার মূলে রয়েছে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বা সবার আগে আমেরিকার অভ্যন্তরীণ স্বার্থ। ফলে কমলা হ্যারিস যেখানে বহির্বিশ্বে অনেক বেশি মনোযোগী হবেন, বিপরীতক্রমে ট্রাম্প মনোযোগী হবেন আমেরিকার অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো নিয়ে।’
নির্বাচনি প্রচার শুরুর পর থেকে কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প যেসব সভা-সমাবেশে অংশ নিয়ে বক্তব্য-বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন, সেখানেও দুজনের কথায় ঠিক এ বিষয়টিরই প্রতিফলন পাওয়া গেছে। কমলা হ্যারিস ইউক্রেনকে ‘যতদিন প্রয়োজন’ সমর্থন দিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধেরও আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি বর্তমান বাইডেন প্রশাসন যেভাবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রেখে চলেছে, একই ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখার কথাই বলেছেন কমলা।
এদিকে ট্রাম্প যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তিনি অনেকটাই বিচ্ছিন্নতাবাদী কৌশল নিয়েছিলেন। যেখানে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ নেই, সেখানে খানিকটা গুটিয়েই রেখেছেন কূটনৈতিক সম্পর্ক। বিভিন্ন দেশ বা আঞ্চলিক সংঘাত থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে দূরে সরিয়ে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। এবারের নির্বাচনি প্রচারেও তিনি বলেছেন একই কথা। বারবার বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধ করবেন তিনি। ন্যাটো থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার হুমকি এবারও দিয়ে রেখেছেন। আর বারই বলেছেন, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’, সবার আগে অগ্রাধিকার আমেরিকার নিজেদের বিষয়ে।
তবে যে প্রার্থীর ঘরেই জয় যাক না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি কারও জন্যই আমূল বদলে যায় না— এমন মন্তব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানের। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে যেই থাকুক না কেন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্কগুলোতে জাতীয় স্বার্থই অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। কমলা হ্যারিস বা ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষেত্রে কাজের ধরন হয়তো আলাদা হবে, কিন্তু মোটাদাগে পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।’
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ইতিহাস অনেক পুরনো এবং সরলরৈখিক নয়। একাত্তরে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান স্পষ্টতই ছিল পাকিস্তানের দিকে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সে অবস্থান ভুলে বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়তে খুব একটা সময় নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও প্রবাসী আয় মিলিয়ে দুই দশকের মধ্যে সেই যুক্তরাষ্ট্র দেশের অর্থনীতির অন্যতম নির্ভরতায় পরিণত হয়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও বেশি দৃঢ় হয়েছে। গত বছরের শেষার্ধের পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকের বাজারে তৃতীয় বড় সরবরাহকারী দেশ। আর বাংলাদেশ থেকে রফতানির ক্ষেত্রে এককভাবে বৃহত্তম বাজার যুক্তরাষ্ট্র। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট পাঁচ হাজার ২০৮ কোটি ডলারের পণ্য রফতানির মধ্যে এক হাজার ৪২ কোটি ডলারের পণ্যই গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। অর্থাৎ মোট পণ্যের প্রায় পাঁচ ভাগের একভাগই রফতানি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।
বাংলাদেশের জন্য সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) প্রধান উৎসও যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত হিসাব বলছে, বাংলাদেশে এফডিআইয়ের স্থিতি দুই হাজার ২৪ কোটি ডলার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রের— ৩৫০ কোটি ডলার। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে ৮০০ কোটি ডলার সহায়তাও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অন্যতম ভরসা প্রবাসী আয়েও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দ্বিতীয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান— ২০২১-২২ অর্থবছরে সৌদি আরবের প্রবাসীদের সর্বোচ্চ ৪৫৪ কোটি ডলারের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৪৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকেই। ২০২২-২৩ অর্থবছরেও সৌদি আরব থেকে আসা ৩৭৭ কোটি ডলারের পরই শীর্ষে ছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে ৩৫২ কোটি ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আবার রেমিট্যান্সে শীর্ষে ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত (৪৫৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার)। ২৯৬ কোটি ১৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স নিয়ে এ অর্থবছরেও দ্বিতীয় স্থানে ছিল যুক্তরাষ্ট্রই।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের কী প্রভাব বাংলাদেশের ওপর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলছেন, জনসংখ্যা এবং অর্থনৈতিক ও সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে ‘ক্ষুদ্র রাষ্ট্র’ বলা হয়। তবে ভূকৌলশগত অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের গুরুত্ব রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। রাশিয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক ও চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সংঘাতে জড়িয়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেখান থেকে দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রকে অনেকটাই নির্ভর করতে হয় ভারতের ওপর। অনেক চেষ্টা করেও চীনের প্রভাবের কারণে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। ফলে বাংলাদেশের গুরুত্ব নেহায়েত কম নয়।
ড. সাজ্জাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভূকৌশলগত অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের যতটুকু গুরুত্ব, তাতে ট্রাম্প নাকি কমলা প্রেসিডেন্ট হবেন, তাতে খুব একটা নীতিগত পার্থক্য হয়তো আসবে না। চীনের ওপর চোখ রাখতে হলে ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বড় শক্তি হতে পারে। এতদিন বাংলাদেশের সঙ্গে চীন ও রাশিয়ার সখ্যের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অম্লমধুর সম্পর্ক ছিল। এখন দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে মিলিয়ে বাংলাদেশের চোখ দিয়ে এই অঞ্চলকে দেখার সুযোগ যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে। সে সুযোগ কমলা বা ট্রাম্প কেউই হয়তো ছাড়বেন না।’
অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খানও ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের আরও এগিয়ে আসার সম্ভাবনার কথা বলছেন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প বা কমলার মধ্যে কে বাংলাদেশের জন্য ভালো হবেন, ইস্যুটি এমন না। যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য যা প্রয়োজন, সেটা করার চেষ্টা করবে। সেখানে প্রেসিডেন্ট কে হবেন, সেটা মুখ্য নয়। কমলা বা ট্রাম্পের কাজের ধরন হয়তো আলাদা হবে, পার্থক্য এটুকুই। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যুর কথা যদি বলি, কমলা নির্বাচিত হলে হয়তো বাইডেনের এখনকার নীতির মতোই ধীরগতিতে কাজ করবেন। ট্রাম্প হলে হয়তো সেটি আরও অনেক বেশি আগ্রাসী ভঙ্গিতে করার চেষ্টা করবেন।’
এক্স হ্যান্ডেলের পোস্টে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ইস্যুটিতে অধ্যাপক তানজিম দেখছেন ট্রাম্পের নির্বাচনি কৌশল হিসেবে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভোটারের সংখ্যা কম নয়। একদিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে উল্লেখ করে, অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদিকে ভালো বন্ধু অভিহিত করে সেই ভোটারদেরই নিজের দিকে টানার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প। ওই পোস্টেই তিনি কমলা হ্যারিসের নীতিরও তীব্র সমালোচনা করেছেন। পুরো পোস্টটিই মূলত ছিল নির্বাচনি কৌশল।’
যে প্রার্থীই ভোটে জয় পান না কেন, জাতীয় স্বার্থ মাথায় রেখে বাস্তবসম্মত কূটনীতির পথেই হাঁটবে যুক্তরাষ্ট্র— এমন মন্তব্য ড. সাজ্জাদেরও। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোন দেশের কোন দলের সঙ্গে অন্য দেশের কোন দলের সম্পর্ক ভালো, এই হিসাব স্থির কিছু নয়। কংগ্রেসের সঙ্গে যেমন আওয়ামী লীগের ভালো সম্পর্ক ছিল শুরু থেকেই। সবাই ভাবত, বিজেপি ক্ষমতায় এলে হয়তো বিএনপির জন্য ভালো হবে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। বিজেপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের ভালো সম্পর্ক হলো। তারপরও কিন্তু ভারতও শেখ হাসিনাকে আশ্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সর্বদলীয়ভাবে, মোদি বা বিজেপির একক সিদ্ধান্তে নয়। বাংলাদেশের জন্য পররাষ্ট্রনীতিতেও যুক্তরাষ্ট্র এ রকম জাতীয় স্বার্থ বা সর্বদলীয় সিদ্ধান্তই নেবে বলেই মনে হয়।’
তবে মার্কিন এই নির্বাচনের ফলাফলের অন্য একটি প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়তে পারে বলে মনে করছেন ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সাব্বির। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘রিপাবলিকান তথা ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সুসম্পর্ক রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ট্রাম্প ভোটে জিতলে তার সঙ্গে মোদির সুসম্পর্কের জের ধরে প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে। সে ক্ষেত্রে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হয়তো একচেটিয়া সুবিধা পাবে না। নির্বাচন দিয়ে দ্রুত একটি সহাবস্থানের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।’
এ ক্ষেত্রে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরার পথও তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ভারতের চাওয়া থাকতে পারে, শেখ হাসিনাকে মাইনাস করে হলেও না আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন করানো। ট্রাম্প জিতলে আঞ্চলিক রাজনীতিতে মোদির প্রভাব বাড়বে। ডেমোক্র্যাটরা ভারতকে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করতে দেয়নি, কিন্তু রিপাবলিকানরা সেটা দিতে পারে। মোদি সেভাবে ক্ষমতায়িত হলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এর প্রভাব হবে অনস্বীকার্য।’
অধ্যাপক সাব্বির মনে করেন, কমলা হ্যারিস ভোটে জিতলে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে সম্পর্ককে ড. ইউনূস পরোক্ষভাবে হলেও কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন। তিনি বলেন, ‘ড. ইউনূস হয়তো তার মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করতে পারেন। সেটা আবার বিএনপির জন্য কৌশলগত ডিলেমা তৈরি করবে। কারণ বিএনপিরও প্রো-আমেরিকান লবি আছে। আমেরিকা ক্ষুব্ধ হোক সেটা তারা চাইবে না, আবার দ্রুত নির্বাচনও চাইবে না। তবে ড. ইউনূস হয়তো কিছুটা হলেও সুবিধা পাবেন। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরাটা আরও পিছিয়ে যেতে পারে।’
সারাবাংলা/টিআর
কমলা হ্যারিস কূটনীতি ডোনাল্ড ট্রাম্প নরেন্দ্র মোদি পররাষ্ট্রনীতি বাংলাদেশ বাংলাদেশের রাজনীতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-২০২০