এক নজরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পদ্ধতি
৫ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৩০ | আপডেট: ৫ নভেম্বর ২০২৪ ১১:১৯
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় প্রতি চার বছর পর পর। নভেম্বর মাসের প্রথম মঙ্গলবার ভোট হবে— এটি পূর্বনির্ধারিত। সে হিসাবে এ বছর আজ ৫ নভেম্বর, মাসের প্রথম মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজের লড়াইয়ে নামছেন প্রার্থীরা। আগেই বিভিন্ন রাজ্যে আগাম ভোট শুরু হলেও এ দিনই চূড়ান্তভাবে ভোট দিয়ে মার্কিন নাগরিকরা বেছে নেবেন তাদের ৪৭তম প্রেসিডেন্টকে।
কারা প্রার্থী হতে পারে এই নির্বাচনে
সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে অবশ্যই জন্মসূত্রে আমেরিকার নাগরিক ও কমপক্ষে ১৪ বছর আমেরিকায় বসবাসের প্রমাণ থাকতে হবে। বয়স হতে হবে কমপক্ষে ৩৫ বছর। তবে মার্কিন সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য শেষ শর্তটি শিথিল রয়েছে।
প্রার্থীদের যোগ্যতা
প্রাপ্তবয়স্ক যেকোনো নাগরিক মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে পারেন। এমনকি অপরাধী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিরও প্রার্থী হতে বাধা নেই। মার্কিন সংবিধানে প্রকৃতপক্ষে আলাদা বিধান রয়েছে, যেন রাজনৈতিক বন্দিরা প্রার্থী হওয়া থেকে বঞ্চিত না হন। তবে সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীতে যুক্ত করা হয়, রাজনৈতিক পদে থাকা ব্যক্তি দেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে যুক্ত হলে বা শত্রুদের সহায়তা করলে তিনি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে পারবেন না।
প্রার্থী হয় কারা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি অন্য অনেক দেশের চাইতে বেশ আলাদা। এখানে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সবচেয়ে প্রভাবশালী দল মাত্র দুটি— ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান। কাজেই প্রেসিডেন্টও প্রায় সবসময়ই এই দুটি দলের কোনো একটি থেকে আসেন।
এর বাইরে ছোট ছোট কিছু রাজনৈতিক দল আছে, যারাও নিয়মিতই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে থাকে। এসব দলের মধ্যে রয়েছে— লিবারেটারিয়ান পার্টি, গ্রিন পার্টি, ইন্ডিপেনডেন্ট পার্টি।
প্রাইমারি ও ককাস কী
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রার্থী নির্বাচনের প্রক্রিয়া এই প্রাইমারি ককাস। বসন্তের শুরুর দিকে রাজ্য পর্যায়ে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। স্বাধীনভাবে কেউ প্রার্থী না হলে কোনো একটি রাজনৈতিক দলের অধীনে তাকে নিজ রাজ্যে নিবন্ধন করতে হয়।
প্রাইমারিতে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে দলের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ককাস প্রক্রিয়াটি আরও জটিল। রাজ্যগুলোতে রাজনৈতিক দলের সদস্যরা মিলিত হন। সেখানে তারা ভোটাভুটির মাধ্যমে নিজেদের প্রার্থী বাছাই করেন।
জাতীয় কনভেনশনের ভূমিকা কী
প্রার্থী বাছায়ে প্রাইমারি ও ককাসের পরের ধাপ এটি, যেখানে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। এই ধাপে রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় কনভেনশনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ও তার রানিংমেট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বাছাই করেন।
কনভেনশনে প্রার্থী চূড়ান্ত হয় কীভাবে?
অঙ্গরাজ্যগুলোতে নির্বাচনের মাধ্যমে ডেলিগেট ঠিক হয়। দলীয় মনোনয়ন পেতে হলে একজন প্রার্থীর অবশ্যই ডেলিগেট ভোট জিততে হবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার অনুপাতে।
এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে— ডেলিগেট কারা? ডেলিগেট হচ্ছেন স্থানীয় নেতা, যারা দলের জাতীয় সম্মেলনে তাদের অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেন। এ পর্যায়ে এসে ডেলিগেটরা ভোট দেওয়ার মাধ্যমে দলের প্রতিনিধিত্বকারী চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচন করেন।
নির্বাচনে কারা ভোট দিতে পারেন
১৮ বছরের বেশি যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো নাগরিকই ভোট দিতে পারেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। তবে অনেক রাজ্যে আইন রয়েছে, যেখানে ভোট দেওয়ার আগে তাদের নিজেদের পরিচয়ের প্রমাণ হিসেবে সুনির্দিস্ট কাগজপত্র দেখাতে হয়। বেশির ভাগ ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেন। এ ছাড়া পোস্টাল ব্যালট ব্যবহার করে ও ডাকযোগে ভোট দেওয়া যায়। বিকল্প এসব পদ্ধতিতে ভোট দেওয়ার প্রবণতা সাম্প্রতিক সময়ে বাড়ছে।
ইলেক্টোরাল কলেজ
মার্কিন নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হয় না। অর্থাৎ কোনো প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে বেশি ভোট পেলেই তিনি জয় পাবেন না। তাকে নির্বাচনে জয় পেতে হবে ইলেক্টোরাল কলেজের মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যের জন্য মোট ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজ রয়েছে। নির্বাচনে জিততে হলে কোনো প্রার্থীকে সংখ্যাগরিষ্ঠ তথা অন্তত ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজ পেতে হবে।
মেইন আর নেব্রাস্কা ছাড়া বাকি রাজ্যগুলোতে এই ইলেকটোরাল কলেজ নির্ধারিত হয় ‘উইনার টেকস অল’ ভিত্তিতে। অর্থাৎ এসব রাজ্যে যে প্রার্থী ভোট বেশি পাবেন, সেই রাজ্যের সব ইলেকটোরাল কলেজ ওই বিজয়ী প্রার্থীই পাবেন। মেইন আর নেব্রাস্কায় এমন নিয়ম নেই। এই দুই রাজ্যে ইলেকটোরাল কলেজ প্রার্থীদের মধ্যে ভাগাভাগিও হতে পারে।
বিজয়ীর দায়িত্বভার গ্রহণ
এবারের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন আগামী বছরের ২০ জানুয়ারি, যা অভিষেক অনুষ্ঠান নামে বেশি পরিচিত। ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটাল বিল্ডিংয়ের বাইরে হবে এই অনুষ্ঠান। ওই অনুষ্ঠানের পর নতুন প্রেসিডেন্ট যাত্রা করবেন হোয়াইট হাউজের পথে এবং চার বছরের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন।
সারাবাংলা/এইচআই/টিআর
ইলেকটোরাল কলেজ ককাস জাতীয় কনভেনশন প্রাইমারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-২০২০