Tuesday 19 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইবিতে ফের র‍্যাগিং, পর্ন তারকা সাজিয়ে অভিনয় করানোর অভিযোগ

ইবি করেসপন্ডেন্ট
১৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:১৯

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন হল। সারাবাংলা ফাইল ছবি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) মধ্যরাতে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের র‌্যাগিংয়ের নামে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ৯ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে জুনিয়রদের পর্ন তারকার নাম দিয়ে অভিনয় করানো, অশ্লীল কবিতা পাঠ, সিগারেট-গাঁজা খাওয়ার অভিনয় ও অন্যদের কল দিয়ে বাজে ভাষায় কথা বলতে বাধ্য করানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সোমবার (১৮ নভেম্বর) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের ৩৩০ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। র‌্যাগিং চলাকালেই বিষয়টি জানাজানি হলে বাকিরা পাঁচ শিক্ষার্থীকে হাতেনাতে ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় পুলিশে সোপর্দ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, তারা ঘটনাটি জেনেছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইবিতে ফুলপরী খাতুনকে র‌্যাগিংয়ের নামে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনা সারা দেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। ওই ঘটনার জের ধরে পাঁচ শিক্ষার্থীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। ইবিতেও র‌্যাগিং প্রতিরোধে সবাই একাট্টা হয়েছিলেন। এর মধ্যেই এ ঘটনা সামনে এলো।

অভিযুক্তরা হলেন— বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সাব্বির হোসেন, শেহান শরীফ শেখ, শরিফুল ইসলাম লিমন, কান্ত বড়ুয়া, জিহাদ, শফিউল্লাহ, তরিকুল ও মুকুল এবং ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সঞ্চয় বড়ুয়া। এদের মধ্যে সাব্বির, শেহান, লিমন, কান্ত ও সঞ্জয়কে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।

ভুক্তেভোগী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাদের ওই হলের ৩৩০ নম্বর কক্ষে ডেকে নেন অভিযুক্ত শেহান শরীফ শেখ। সাইম, রাকিবুল, শামীম, রাকিব, হামজা, তারেক, রিশান, তানভীর ও মামুনসহ ১২ থেকে ১৩ জন ওই কক্ষে যান। তারা সবাই ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। একপর্যায়ে শামীম, সাইম, রাকিবুল ও হামজাকে ওই কক্ষে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আর ওই চারজনের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান অভিযুক্ত সাব্বির ও সঞ্চয়।

বিজ্ঞাপন

র‌্যাগিংয়ের শিকার শিক্ষার্থীরা বলেন, সেখানে তাদের পাঁচ রকমের হাসি দেওয়া, কল দিয়ে বাজে ভাষা বলা ও নাচতে বাধ্য করা হয়। পরে হলের সিনিয়র শিক্ষার্থী হাসানুল বান্না উপস্থিত হয়ে তাদেরকে হাতেনাতে ধরেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এর আগে গত শনিবার (১৬ নভেম্বর) রাতেও ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা ধরে তাদের ১২ জন শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসের পাশের সাদী অ্যান্ড হাদী ছাত্রাবাসে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন একই অভিযুক্তরা। এ সময় কয়েকজনকে পর্ন সিনেমার তারকাদের নাম জিজ্ঞাসা করা হয়, পর্ন তারকা সেজে অভিনয় এবং অশ্লীল কবিতা পাঠ করতে বাধ্য করা হয়।

অভিযোগে শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, তাদের কয়েকজনকে সিগারেট খাওয়ার অভিনয়, গাঁজা-পট টানার অভিনয়সহ বর্ণনার অযোগ্য বিভিন্ন অশালীন কাজ করতে বাধ্য কার হয়। শনিবার রাতে র‌্যাগিংয়ের সময় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শফিউল্লাহ, তরিকুল, মুকুল, সাব্বির, সাকিব, শেহান, কান্ত বড়ুয়া ও জিহাদ উপস্থিত ছিলেন।

ভুক্তভোগী তারেক হোসাইন বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে এসেছি ১৭ দিন হয়েছে। তারা আমাদের ১৭ দিনে কী পরিমাণ মানসিক নির্যাতন করছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। পরিচয় দিতে বলে ভুল হয়েছে বলে আবার দিতে বাধ্য করত। অনরবত পরিচয় দেওয়া, গালিগালাজ ও জোরজবরদস্তি করত। যেখানে যে অবস্থানেই থাকি না কেন, ৫ মিনিটের মধ্যে তাদের সামনে উপস্থিত হতে বাধ্য করা হতো। না গেলে মারার হুমকিও দিত। এমন এমন কথা বলত, যেগুলো এখন বলতেও পারছি না। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

অভিযোগ অস্বীকার করে শরীফ শেহান বলেন, ‘আমি ওই কক্ষে ছিলাম না। তবে এর আগে গত দিন হাদি ও সাদী মেসে জুনিয়রদের সঙ্গে আমরা বসেছিলাম। ওই দিন ভিসি, প্রক্টর স্যারের নামসহ, বিভাগের সব শিক্ষকের নাম জিজ্ঞাসা করা হয়। না পারলে তাদের একটু ধমকও দেওয়া হয়। তবে কাউকে মারধর বা শারীরিক নির্যাতন করা হয়নি।’ বাকি অভিযোগগুলোর বিষয়ে কিছুটা সত্যতা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

লালন শাহ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন বলেন, ‘অভিযুক্তদের থানায় নিরাপদে রাখা হয়েছে। পরে তদন্ত কমিটি গঠন করে সুষ্ঠু বিচারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সুপারিশ করা হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি অবগত হয়েছি। প্রক্টরিয়াল বডি ও ছাত্র-উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসেছি। বৈঠক শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ ফরিদ উদ্দিন বলেন, পাঁচজনকে থানায় সোর্পদ করা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাদের পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে। এখনো তাদের বিষয়ে কোনো হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।

সারাবাংলা/টিআর

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাগিং লালন শাহ হল শিক্ষার্থীদের র‌্যাগিং

বিজ্ঞাপন

আবারও নিশো-তমা
১৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৫২

আরো

সম্পর্কিত খবর