বাংলাদেশের ‘ইশ’ ফ্যাক্টরের ম্যাচ
৬ জুন ২০১৯ ০৬:৪৬
‘ইশ’ টসটা যদি জেতা যেতো। ‘ইশ’ আর কয়টা রান যদি স্কোর করা যেতো! ‘ইশ’ তামিমের ব্যাটে বলটা যদি পুরোপুরি ব্যাটে আসতো! ‘ইশ’ মুশফিক যদি ওভাবে রান আউট না হতো! ‘ইশ’ অল আউট না হয়ে যদি সেই ৪টা বল খেলতে পারতো! ‘ইশ’ এতোগুলো বল যদি ডট না হতো! ‘ইশ’ নিউজিল্যান্ডের উইকেট যদি আরেকটু আগে সাজঘরে পাঠানো যেতো! ‘ইশ’ তামিমের থ্রোতে মুশফিক যদি স্ট্যাম্পের সামনে বলটা না ধরতো! ‘ইশ’ একটা রিভিউ যদি থাকতো! ‘ইশ’ বোলিং টা যদি আরেকটু ভালো হতো! ‘ইশ’ মুস্তাফিজ যদি উইকেট নিতে পারতো! ‘ইশ’ ম্যাচের শেষ দিকে যদি দুইটা বল স্ট্যাম্পে লেগে আউট হতো নিউজিল্যান্ডের টেল এন্ডারের শেষ দুইজন ব্যাটসম্যান!
টাইগার ক্রিকেটার ও সমর্থকদের এমন অনেক ‘ইশ’ ফ্যাক্টরের ম্যাচই বলা যায় বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ডের ম্যাচকে। মাঠের গ্যালারিতে এবং টিভি স্ক্রিনের সামনে বসা দর্শকদের প্রায় সবারই একই অবস্থা ছিল যার প্রতিচ্ছবি দেখা যায় টাইগার ক্রিকেটভক্তদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টেও। ধীরে ধীরে জমে ওঠা অনেক ‘ইশ’ এর ম্যাচে রোমাঞ্চ জাগিয়ে হেরে গেলো বাংলাদেশ। স্যান্টনার যখন শেষ বাউন্ডারি মেরে কিউইদের জয় নিশ্চিত করেন তখন সেই ‘ইশ’ রূপান্তরিত হলো দীর্ঘশ্বাস ফেলা হতাশায়। টাইগার ভক্তদের ‘ইশ’ আক্ষেপকে হারিয়ে নিউজিল্যান্ড ম্যাচ জিতে নেয় ২ উইকেটে। বাংলাদেশের টুর্নামেন্টে প্রথম পরাজয় এবং নিউজিল্যান্ডের টানা দ্বিতীয় জয়।
বুধবার (৫ জুন) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শুরু হয় বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ। দুইদলেরই এটা ছিল দ্বাদশ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচ। টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিং এ পাঠায় কিউই অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন। ওপেনিং এ নামেন তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার।
ম্যাচের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে বাংলাদেশের স্কোর সূচনা করেন তামিম ইকবাল। অপরপ্রান্তে ফর্মে থাকা সৌম্য সরকারও নিজের স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতেই ব্যাটিং করেন। ইনিংসের নবম ওভারে আসে টাইগার ভক্তদের প্রথম ‘ইশ’ আক্ষেপ। ম্যাট হেনরির করা এই ওভারেই স্ট্যাম্প বরাবর থাকা সোজা বলে ক্রসব্যাটে লেগ সাইডে খেলতে চান সৌম্য। বল আঘাত হানে স্ট্যাম্পে। বাংলাদেশের প্রথম উইকেট পতনের আগে জুটিতে উঠে ৪৫ রান। সৌম্য ২৫ বলে তিনটি চারে করেন ২৫ রান।
ওয়ানডাউনে খেলতে নেমে সাকিব আল হাসান জুটি বাধেন তামিমের সঙ্গে। দুইজনেই সাবধানতার সঙ্গেই খেলতে থাকেন। কিন্তু দলীয় ৬০ রানের মাথায় লুকি ফার্গুসনের ১৪৪ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা স্পীডের বাউন্সার বলে পুল করতে গিয়ে মিড উইকেটে ট্রেন্ট বোল্টের হাতে ধরা পড়েন তামিম ইকবাল। বিদায়ের আগে এই বাঁহাতি ওপেনার ৩৮ বলে তিন বাউন্ডারিতে করেন ২৪ রান।
টাইগারভক্তদের আক্ষেপ তখন ‘ইশ’ যদি এই পুল শট না খেলে ছেড়ে দেওয়া যেতো। ‘ইশ’ আর যদি ২০ টা রান করে দিয়ে যেতেন তামিম।
এরপরে জুটি বাধেন সাকিব এবং মুশফিক। আগের ম্যাচের ১৪২ রানের পার্টনারশিপের মতন কিছু দেখার অপেক্ষায় টাইগার ভক্তরা। দুইজনই খেলছিলেন সেভাবেই। কিন্তু ম্যাচের ২২ তম ওভারেই মনে হয় দেখা যায় পরবর্তী সময়ের প্রতিচ্ছবি। স্যান্টনারের করার এই ওভারের চতুর্থ বল মুশফিক মিডউইকেট অঞ্চলে পাঠালে রানের জন্য দৌড়ান সাকিব। কিন্তু মুশফিক তাকে মানা করলে ক্রিজের অর্ধেক থেকেই ঘুরে যান সাকিব এবং ডাইভ দিয়ে ক্রিজে পৌঁছান।
স্যান্টনারের পরের ওভারেই মুশফিক কাভারে পুশ করে রান নিতে গেলে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে যান। বাংলাদেশের সমর্থকদের জন্য এই আউট হয়ে আসে এক বিশাল আক্ষেপের ‘ইশ’ হয়ে।
মোহাম্মদ মিঠুন ব্যাটিং এ নেমেই সাকিবের সঙ্গে জুটি বাধেন। বড় একটা জুটি দেখার আশায় যখন টাইগার ভক্তরা ঠিক তখনই সাকিবের গ্রান্ডহোমের বলে ব্যক্তিগত ৬৪ রান করে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে যাওয়া।
বাংলাদেশের দলীয় সংগ্রহ তখন ৩০.২ বলে ৪ উইকেটে ১৫১ রান। প্রায় ৫ এর কাছাকাছি রানরেট। পরবর্তী ওভারগুলো পার্টনারশিপ গড়ে উঠলেই বাংলাদেশ পেয়ে যাবে বড় একটি স্কোর এমনটাই আশা বাংলাদেশের টাইগার ক্রিকেটার ভক্তদের। কিন্তু সেই আশাতেও যোগ হয় ‘ইশ’ এর আক্ষেপ।
মাঠে নামেন মাহমুদুল্লাহ। টাইগার ক্রিকেট ভক্তদের মনে তখন উঁকি দিচ্ছিল ২০১৫ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করা মাহমুদুল্লাহর সেই সেঞ্চুরির ইনিংস। কিন্তু এই দিন আর হলো না সেই ইনিংসের পুনরাবৃত্তি।
ইনিংসের ৩৮তম ওভারের প্রথম বলেই হেনরির বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে ফাইন লেগে গ্রান্ডহোমের তালুবন্দি হয়ে আউট হয়ে যান মিঠুন। ৩৩ বলে ২৬ রান করেন মিঠুন। দলীয় সংগ্রহ ২০০ পার হওয়ার আগেই ফিরে যান মাহমুদুল্লাহও। ৪৩ তম ওভারে স্যান্টনারের ৭৬ কিমি প্রতি ঘন্টা স্পীডের স্লো বলে ৪১ বলে ২০ রান করে আউট হয়ে যান রিয়াদ। বাংলাদেশের দলীয় সংগ্রহ দাঁড়ায় তখন ৬ উইকেটে ১৯৭।
এই ওভারেই ২০০ রানের মাইলফলক ছোঁয় বাংলাদেশ। ১৫১-২০০ এই ৫০ রান সংগ্রহ করতে বাংলাদেশের খেলতে হয় ৮০টি বল। এইখানেই ম্যাচের ছন্দ হারায় বাংলাদেশ। মোসাদ্দেক এবং সাইফুদ্দিন রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করলেও ইনিংসের ৪৭তম ওভারে দলীয় ২২৪ রানে সপ্তম উইকেট হিসেবে আউট হন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ট্রেন্ট বোল্টের বলে আউট হওয়ার আগে মোসাদ্দেকের সংগ্রহ ছিল ২২ বলে ১১ রান।
সাইফুদ্দিনের ২৩ বলে ২৯ রানের ইনিংসের সাহায্যে বাংলাদেশের স্কোর হয় ৪৯.২ ওভারে ২৪৪। শেষ ওভারে বোলিং করতে এসে ম্যাট হেনরি প্রথম ও দ্বিতীয় বলে আউট করেন মাশরাফি ও সাইফুদ্দিনকে যথাক্রমে। পরের ম্যাচের প্রথম বলে উইকেট পেলেই হেনরিই হয়তোবা পেয়ে যাবেন এবারের বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাট্রিক। এর আগে ট্রেন্ট বোল্ট আউট করেন মিরাজকে।
বাংলাদেশের পক্ষে একমাত্র ছক্কাটি হাঁকান সাইফুদ্দিন। ম্যাট হেনরি পান চার উইকেট ৪৭ রানের খরচায়। বোল্ট নেন দুইটি উইকেট। ফার্গুসন, গ্রান্ডহোম এবং স্যান্টনার নেন একটি করে উইকেট। ১৪৫টি ডট বল ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসে।
২৪৫ রানের জয়ের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নামা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ছিল দ্রুত উইকেট তুলে নেওয়া। কিন্তু হলো তার বিপরীত। কিউই দুই ওপেনার স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে থাকেন বাংলাদেশের বোলারদের। জুটিতে তুলেন ৩৫ রান আর সেই সময়ে বোলিং এসেই সাকিবের আঘাত। কিউইদের ইনিংসের ষষ্ঠ এবং নিজের প্রথম ওভারেই কিউই ওপেনার মার্টিন গাপটিলকে আউট করেন তিনি। লং অনে ক্যাচ নেন তামিম ইকবাল। নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ৫ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৩৫ রান। এই ওভারের পঞ্চম বলেই বাংলাদেশের বোলিং ইনিংসের রিভিউ নেন সাকিব আল হাসান।সাকিবের স্লোয়ার বল এঙ্গেল নিয়ে উইলিয়ামসনের ফ্রন্ট ফুটের প্যাডে আঘাত হানে। আম্পায়ার বোলারের এলবিডব্লিউ আবেদনে আউট না দিলে রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। রিভিউতেও দেখায যায় বল লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে দিয়ে চলে যেতো। আর তাই আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই সঠিক থাকে।
নিউজিল্যান্ডের ২য় উইকেটও নেন সাকিব আল হাসান। নিজের তৃতীয় ওভারের শেষ বলে মেহেদী হাসান মিরাজ দুর্দান্ত ডাইভিং ক্যাচে ২৪ রান করা কলিন মুনরোকে সাজঘরে ফেরান। কিউইদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৫৫ রান।
নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং ইনিংসের ১২তম ওভারে বাংলাদেশ দলের এবং সমর্থকদের জন্য আসে সবচাইতে বড় আক্ষেপের ‘ইশ’। কেইন উইলিয়ামসন স্কোর তখন ৮ এবং রস টেইলরের স্কোর ৪ রান। ওভারের দ্বিতীয় বলে টেইলর মিড অনে বল পাঠিয়ে দিয়েই ১ রান নেওয়ার চেষ্টা করেন। তামিম বল ধরে যখন ব্যাটিং এন্ডের স্ট্যাম্পে বল থ্রো করেন তখন ক্রিজে পৌছাতে অনেক দূর বাকি উইলিয়ামসনের। মুশফিক স্ট্যাম্পের সামনে থেকে বল ধরে স্ট্যাম্পে লাগানোর চেষ্টা করলে রিপ্লে তে দেখা যায় বল ধরার আগেই তিনি স্ট্যাম্প ভাঙ্গে। রিপ্লেতে দেখা যায় মুশফিক বল ধরার চেষ্টা না করলে বল ডাইরেক্ট থ্রোতেই স্ট্যাম্পে লেগে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফিরতেন উইলিয়ামসন। কিন্তু তা হয় নি।
একই ওভারের শেষ বলে টেইলরের শটে সাকিবের হাতে লেগে বোলিং এন্ডের উইকেট ভাঙলেও সেই সময় নিরাপদেই ক্রিজে ছিলেন উইলিয়ামসন। নিউজিল্যান্ডের দলীয় স্কোর যখন ২ উইকেটে ৭২ রান তখন আরেকটু রান আউটের সুযোগ পায় বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের বলে লেগ সাইডে খেলে উইলিয়ামসন সিঙ্গেল রান নেওয়ার চেষ্টা করলে ফিল্ডারের থ্রো মুশফিকে হাতে পৌঁছায় এবং স্ট্যাম্প ভাঙ্গে মুশফিক। কিন্তু টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় মুশফিক স্ট্যাম্প ভাঙ্গার আগেই ক্রিজে পৌঁছে যান টেইলর। এর পরে আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত আর তেমন কোনো সুযোগ দেন নি এই দুই ব্যাটসম্যান। দুইজনে মিলেই গড়ে তুলেন ১০৫ রানের জুটি।
বাংলাদেশ যখন ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে পড়ছিল তখনই মেহেদী হাসান মিরাজের এক ওভারে জোড়া উইকেট আশার আলো দেখায় টাইগার সমর্থকদের। নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের ৩২তম এবং নিজের সপ্তম ওভারে বোলিং এসে মিরাজ প্রথমে আউট করেন কিউই দলপতি উইলিয়ামসনকে। ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ নেন মোসাদ্দেক হোসেন। আউট হওয়ার আগে উইলিয়ামসন করেন ৭২ বলে ৪০ রান। কিউইদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ১৬০ রান।
একই ওভারের শেষ বলে ডিপ মিড উইকেটেই ক্যাচ তুলে দেন লাথাম। সাইফুদ্দিন দুর্দান্ত একটি ক্যাচ ধরেন। ৪ বলে কোনো রান সংগ্রহ করার আগেই আউট হন লাথাম। কিউইদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ১৬২ রান।
হারের শঙ্কাতে প্রায় চুপ হয়ে পড়া টাইগার ক্রিকেট সমর্থকেরা আবার জেগে উঠে নতুন আশা। ঠিক সেই সময়ে ৩৪ ওভারের শেষ বলে অতিরিক্ত ফিল্ডার হিসেবে মাঠে নামা সাব্বিরের একটি ডাইরেক্ট থ্রো স্ট্যাম্প ভাঙ্গার পরে রান আউটের সম্ভাবনা জাগে নিশমের। মিরাজের বলে টেইলর লেগ সাইডে হালকা পুশ করে রান নেওয়ার চেষ্টা করলে সাব্বিরের আন্ডার আর্ম থ্রোতে ব্যাটিং এন্ডের স্ট্যাম্প ভাঙ্গে। কিন্তু টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় নিশমের ব্যাট বল স্ট্যাম্পের আঘাত হানার আগেই ক্রিজে ভেতরে পৌছায়।
আশাহত সমর্থকদের মনে ভরসা দেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। বিপদজনক হয়ে ওঠা টেইলরকে সাজঘরে ফেরান তিনি। ৩৯ তম ওভারের তৃতীয় বল টেইলরের ব্যাটে লাগলে স্ট্যাম্পের পেছনে ক্যাচ নেন মুশফিক। ৯১ বলে ৮২ রান করেন টেইলর। নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১৯১। আউট হওয়ার আগে টেইলর নিশমের সঙ্গে গড়ে তুলেন ২৯ রানের একটি মহামূল্যবান জুটি যার প্রতিটি রান বাংলাদেশের সমর্থকদের আশাহত করছিল।
টেইলর আউট হওয়ার পরে খুব দ্রুত আরও উইকেট তুলে নেওয়ার আশায় যখন টাইগার সমর্থকেরা ঠিক তখন গ্রান্ডহোমকে নিয়ে ২৭ রানের জুটি গড়ে তুলেন নিশম। কিউইদের ষষ্ঠ উইকেট হিসেবে গ্রান্ডহোমকে সাজঘরে পাঠান সাইফুদ্দিন। ৪৩তম ওভারের পঞ্চম বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকের দুর্দান্ত ক্যাচে সাজঘরে ফেরেন গ্রান্ডহোম। কিউদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ২১৮ রান।
ঠিক তার পরের ওভারেই কিউই অলরাউন্ডার নিশমকে আউট করে বাংলাদেশের জয়ের আশা জাগিয়ে তুলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। এটি ম্যাচে তার দ্বিতীয় উইকেট। ইনিংসের ৪৪তম ওভারের ৩য় বলে লং অফে ক্যাচ নেন সৌম্য সরকার। আউট হওয়ার আগে নিশম সংগ্রহ করেন ৩৩ বলে ২৫ রান। কিউইদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ২১৮ রান।
নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের ৪৫ তম ওভারের তৃতীয় বলটি আসে বাংলাদেশের সমর্থকদের জন্য আরেকটি ‘ইশ’ মুহূর্ত নিয়ে আসা আক্ষেপের। সাইফুদ্দিনের করা ফুল লেংথের বল স্যান্টনারের প্যাডে আঘাত হানে। এলবিডব্লিউর আবেদন করলেও আম্পায়ার তা নাকোচ করে দেন। বাংলাদেশের কোনো রিভিউ বাকি না থাকাতে সেই সময় আর রিভিউ নেয়া সম্ভব হয় নি।
ইনিংসের ৪৭ ওভারের তৃতীয় বলে ফুলটসে হেনরিকে বোল্ড আউট করে সাজঘরে যখন ফেরত পাঠান সাইফুদ্দিন তখন গ্যালারিতে টাইগার ভক্তদের মনে জেগে উঠে নতুন আশা। আর ২টা উইকেট নিলেই ম্যাচ জিতে যাবে বাংলাদেশ। সবাই তখন আর কয়টা রান যদি বেশী হতো বলে ‘ইশ’ ভরা আক্ষেপে নিয়ে খেলার দিকে তাকিয়ে তখন কিউইদের জয়ের জন্য দরকার ২৭ বলে ৭ রান।
শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আশা নিয়ে খেলা দেখা টাইগার সমর্থকদের সবার মনে তখন উঁকি দিচ্ছিল ২০১৫ বিশ্বকাপের ইংল্যান্ডের বিপক্ষের ম্যাচে রুবেল হোসেনের সেই ওভার। কিন্তু উইকেট নয় বরং সেই ওভারেই দুইটি ওয়াইড বল করেন সাইফুদ্দিন এবং কিউইরা পায় মহামূল্যবান দুইটি অতিরিক্ত রান। সেই শেষ বলেই একটা বাউন্ডারি হাঁকিয়ে স্কোর সমান করেন ফার্গুসন।
পরের ওভারে মুস্তাফিজের প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে কিউইদের জয় নিশ্চিত করেন ফার্গুসন। সমর্থকদের মনে ‘ইশ’ আরেকটু ভালো খেললেই জিতে যাওয়া যেতো এমন আক্ষেপ।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মাশরাফির কন্ঠেও ছিল সেই আক্ষেপ। ২৫-৩০ রান কম করার আক্ষেপের কথা জানান তিনি সংবাদ সম্মেলনে। একই সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের টেল এন্ডার দুইজনের জন্য দুইটি কার্যকর ডেলিভারি না দিতে পাড়ার আক্ষেপও।
সমর্থকেরা ‘ইশ’ ভরা আক্ষেপ নিয়ে ম্যাচ হারের দৃশ্য দেখলেও একই সঙ্গে প্রশংসাও কিন্তু তারা করছে কারণ এতো ভালো ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে যেভাবে খেলেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। শুধুমাত্র আক্ষেপ সেই ‘ইশ’ মুহূর্তগুলোকে জয় না করতে পারার।
তাতে কি? আজ হয় নি আগামীতে হবেই। আগামীতে আর কোনো ‘ইশ’ আক্ষেপ আসতে দিবে না টাইগার ক্রিকেটাররা, সমর্থকদের এমনই আশা।
আর সেই আশা নিয়েই বাংলাদেশের নজর থাকবে পরবর্তী ম্যাচে ৮ জুন কার্ডিফের উইকেটের দিকে। যেখানে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ইংল্যান্ড। সেই ইংল্যান্ড যাদের ২০১১ এবং ২০১৫ বিশ্বকাপে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৪৯.২ ওভারে ২৪৪ রান ( তামিম ২৪, সৌম্য ২৫, সাকিব ৬৪, মুশফিক ১৯, মিঠুন ২৬, মাহমুদউল্লাহ ২০, মোসাদ্দেক ১১, সাইফ ২৯, মিরাজ ৭, মাশরাফি ১, মুস্তাফিজ ০*; হেনরি ৯.২-০-৪৭-৪, বোল্ট ১০-০-৪৪-২, ফার্গুসন ১০-০-৪০-১, ডি গ্র্যান্ডহোম ৮-০-৩৯-১, নিশাম ২-০-২৪-০, স্যান্টনার ১০-১-৪১-১)
নিউ জিল্যান্ড: ৪৭.১ ওভারে ২৪৮/৮ ( গাপটিল ২৫, মানরো ২৪, উইলিয়ামসন ৪০, টেইলর ৮২, ল্যাথাম ০, নিশাম ২৫, ডি গ্র্যান্ডহোম ১৫, স্যান্টনার ১৭*, হেনরি ৬, ফার্গুসন ৪*; মাশরাফি ৫-০-৩২-০, মিরাজ ১০-০-৪৭-২, মুস্তাফিজ ৭.১-০-৪৮-০, সাকিব ১০-০-৪৭-২, সাইফ ৭-০-৪১-২, মোসাদ্দেক ৮-০-৩৩-২)
* অপরাজিত
ফলাফল: নিউজিল্যান্ড দুই উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্যা ম্যাচ: রস টেইলর
বাংলাদেশের দর্শকরা বিশ্বকাপের সব ম্যাচ অনলাইনে কোনো ধরনের সাবস্ক্রিপশন ফি বা চার্জ ছাড়াই দেখতে পারবেন র্যাবিটহোলের ওয়েবসাইট www.rabbitholebd.com-এ। এছাড়া র্যাবিটহোলের অ্যাপেও দেখা যাবে প্রতিটি ম্যাচ। অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/UNCWS2 (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে। তাছাড়া আইওএস ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/vJjyyL (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে।
সারাবাংলা/এসবি
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ টাইগার ক্রিকেটভক্ত নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশ বিশ্বকাপ স্পেশাল মাশরাফি মুশফিক