Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

র‌্যাংকিংয়ে এগিয়েও বেতনে উইন্ডিজ-লংকানদের পেছনে সাকিবরা


২২ অক্টোবর ২০১৯ ১২:২৩

সোমবার (২১ অক্টোবর) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকে ক্রিকেটাররা। আর সেখান থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সামনে তুলে ধরা হয় ১১ দফা দাবি। সেখানে ক্রিকেটাররা তাদের বেতন বৃদ্ধি থেকে শুরু করে ম্যাচ ফি বাড়ানো, ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারদের নানা সুবিধা নিয়ে দাবি তুলে ধরেন। ওয়ানডে র‍্যাংকিংয়ে এখন ৭ নম্বরে বাংলাদেশের অবস্থান। এরপরের দুই অবস্থানে যথাক্রমে শ্রীলংকা ও উইন্ডিজের। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকলেও ওই দুই দেশ থেকে পিছিয়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের থেকে দ্বিগুণেরও বেশি বেতন বেশি পেয়ে থাকে এই দুই দেশের ক্রিকেটাররা।

বিজ্ঞাপন

কেবল বেতন বৃদ্ধির বিষয়টিই তুলে ধরেননি সাকিব, তামিমরা সেই সাথে জানিয়েছেন জাতীয় দলের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ম্যাচ বাড়ানোর কথা। পরিসংখ্যান বলছে অর্থের দিক থেকে বিশ্বের ৫ম ধনী ক্রিকেট বোর্ড বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বাংলাদেশ বোর্ডের বর্তমান মূল্য ৫১ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় যা দাঁড়ায় প্রায় ৪শ ৩২ কোটি ৩৬ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা। বাংলাদেশের থেকে এই তালিকায় এগিয়ে ৪র্থ স্থানে পাকিস্তান ৫৫ মিলয়ন ডলার, ৩য় স্থানে ৫৯ মিলিয়ন ডলার মূল্য নিয়ে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড, ২য় স্থানে ৭৯ মিলিয়ন ডলারের দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড। আর তালিকায় সবার শীর্ষে অবস্থান ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই’এর, যার বাজার মূল্য প্রায় ২৫৯ মিলিয়ন ডলার।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বের ৫ম ধনী ক্রিকেট বোর্ড হওয়া স্বত্বেও ক্রিকেটারদের বেতন দেওয়ার তালিকায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অবস্থান জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ডের থেকেও পিছিয়ে। তালিকার শীর্ষ দশ নম্বরেও নেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। ২০১৭ সালের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সেই তালিকার ১১ নম্বরে অবস্থান করছে। আইসিসির পূর্ণাঙ্গ সদস্য হওয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের থেকে ক্রিকেটারদের কম বেতন দেয় না আর কোনো দেশই।

সর্বশেষ কেন্দ্রীয় চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে গত বছর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কেন্দ্রীয় চুক্তি করেছিল ১০ জন ক্রিকেটারকে নিয়ে। পরে সেখানে ‘রুকি’ শ্রেণিতে যোগ করা হয় আরও তিন ক্রিকেটারকে। সর্বশেষ সেই কেন্দ্রীয় চুক্তিতে রুকি শ্রেণিতে ২ জনসহ মোট ৪ জন ক্রিকেটার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ক্রিকেটার সংখ্যা বাড়লেও বেতন কাঠামোয় পরিবর্তন হয়নি। আগের বছরের মতো এবারও ‘এ প্লাস’ শ্রেণির ক্রিকেটাররা পাচ্ছেন মাসিক ৪ লাখ টাকা করে, ‘এ’ শ্রেণিতে ৩ লাখ, ‘বি’ শ্রেণির ক্রিকেটাররা ২ লাখ টাকা করে। ‘রুকি’ শ্রেণির ক্রিকেটারদের সম্মানী ১ লাখ টাকা করে।

এই বেতনই অবশ্য ক্রিকেটারদের প্রাপ্তির শেষ নয়। এর পাশাপাশি ক্রিকেটাররা ম্যাচ ফি পেয়ে থাকেন। প্রতি টেস্টের ম্যাচ ফি সাড়ে ৩ লাখ। প্রতি ওয়ানডের ম্যাচ ফি ২ লাখ এবং টি-টোয়েন্টির ম্যাচ ফি ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার জন্য ক্রিকেটাররা পান পঁয়ত্রিশ হাজার টাকার মতো।

যেখানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের থেকে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা নিউজিল্যান্ড, উইন্ডিজ এবং শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড তাদের ক্রিকেটারদের প্রত্যেক ম্যাচ বাবদ বেশি অর্থ দিয়ে থাকে। নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা একটি টেস্ট ম্যাচ খেললে প্রায় ৫ লাখ টাকা পেয়ে থাকেন, উইন্ডিজের ক্রিকেটাররা পান সাড়ে চার লাখ টাকা আর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটাররা পেয়ে থাকেন প্রায় ৪ লাখ টাকা। এই তালিকায় সব থেকে বেশি অর্থ পান ভারতীয় ক্রিকেটাররা। তারা একটি টেস্ট ম্যাচ থেকে পেয়ে থাকেন প্রায় ১৯ লক্ষ টাকা।

আর সেই সাথে গেল বছর ভারতের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন ২৫ জন ক্রিকেটার। আর অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় চুক্তিতে আছেন ২০ জন ক্রিকেটার। এই চুক্তির বাইরে আছেন স্টিভেন স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার এবং ব্যানক্রফট। এছাড়া ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ডের সাথেও চুক্তিবদ্ধ আছেন ২০জন ক্রিকেটার।

আর এমন বৈষম্যের কথা মাথায় রেখেই বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। যেখানে বিশ্বের অন্যান্য ক্রিকেট খেলুড়ে দেশের ক্রিকেটাররা অপেক্ষাকৃত কম বিত্তশালী বোর্ডের হওয়া স্বত্বেও বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের থেকে বেশি বেতন এবং সুবিধা পেয়ে থাকেন। সেখানেই বিশ্বের ৫ম ধনী ক্রিকেট বোর্ড হওয়া স্বত্ত্বেও বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে উইন্ডিজ, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার থেকেও পিছিয়ে বাংলাদেশ।

এছাড়াও অন্যান্য দেশের ক্রিকেটাররা বোর্ডের বিজ্ঞাপন থেকে উপার্জিত অর্থ থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকে। ভারতীয় ক্রিকেটাররা বোর্ডের বাৎসরিক বিজ্ঞাপন থেকে উপার্জিত অর্থ থেকে প্রায় ২৬ শতাংশ পেয়ে থাকেন। এমনকি পাকিস্তানের ক্রিকেটাররাও বোর্ডের কাছ থেকে বিজ্ঞাপন বাবদ অর্থ পেয়ে থাকেন। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা বোর্ডের উপার্জন থেকে কোনো প্রকার অর্থ পাননা।

আর এমন সব বৈষম্য দূর করার জন্য সব ধরনের ক্রিকেটে ধর্মঘট ডেকেছে বাংলাদেশের জাতীয় দল এবং জাতীয় দলের বাইরের ক্রিকেটাররা। ১১ দফা দাবির মধ্যে কেবল ক্রিকেটারদের বেতন ভাতার বিষয়টিই উঠে আসেনি, সেই সাথে ক্রিকেটের উন্নতির জন্যও কাজ করার কথা বলা হয়েছে। আর যতদিন পর্যন্ত ক্রিকেটারদের দাবি আদায় না হবে ততদিন পর্যন্ত ক্রিকেটে ফিরবেন না ক্রিকেটাররা।

আরও পড়ুন-

** আগে কিছুই জানা ছিল না দাবি বিসিবির

** গ্রাউন্ডসম্যান-আম্পায়ারদের পাশে তামিম

** আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি আসলে সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড: সিইও

** বিপিএলে পারিশ্রমিক বৈষম্যের তীব্র প্রতিবাদ মুশফিকের

** ক্রিকেটারদের ঐতিহাসিক ১১ দফা নিয়ে যা বলেছেন সাকিব

** সংবাদ সম্মেলন করে পারিশ্রমিকসহ নানা সুবিধা দাবি সাকিব-তামিমদের

১১ দফা ক্রিকেটারদের ধর্মঘট বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিশ্বের ৫ম ধনী ক্রিকেট বোর্ড বিসিবি ভারতীয় ক্রিকেটারদের বেতন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর