কোন কারণে কমছে নাটকের দর্শক?
১০ জুন ২০১৯ ১৩:৫৭
ঈদের নাটক মানেই অতি বিজ্ঞাপন—এরকম অভিযোগ গেলো কয়েক বছর ধরে বেশ জোরেশোরে শোনা যাচ্ছিল। মাঝে গেলো ঈদে অভিযোগের সুর কিছুটা নরম হলেও এবার আবারও পুরনো অভিযোগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দর্শকরদের সঙ্গে এবার সুর মেলাচ্ছেন ছোটপর্দার নির্মাতারাও। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর বিজ্ঞাপনে আধিক্য অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ করছেন অনেক নির্মাতা।
বিজ্ঞাপন ছাড়াও এবার ক্রিকেটের প্রভাবও পড়েছে। ফলে নাটকের দর্শকের সংখ্যা কমেছে। যদিও খেলার চেয়েও অতিমাত্রার বিজ্ঞাপন প্রচারের কারণে চ্যানেলগুলোকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন দর্শক–নির্মাতারা।
ছোটপর্দার জনপ্রিয় নির্মাতা সাগর জাহান ঈদের নাটক দেখে যারপরনাই হতাশ। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এবার নাটক সেভাবে দেখা হয়নি ক্রিকেট বিশ্বকাপের কারণে। তবুও সময় করে কিছু নাটক দেখতে গিয়েও দেখতে পারিনি। এবার বিজ্ঞাপনের পরিমাণ ব্যাপকহারে বেড়েছে। এতো বিজ্ঞাপনের মাঝে নাটক দেখা দুরূহ একটি কাজ। এই তো সম্প্রতি আমি গর্ব করে কোনো এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলাম, এখন নাটকে আগের মতো বিজ্ঞাপন দেয়া হয় না। আমি আসলে ভুল বলেছিলাম তখন।’
আরও পড়ুন : চলে গেলেন গিরিশ কারনাড
তিনি আরও বলেন, ‘এখন অনলাইনের জন্য অনেক নির্মাতা নাটক নির্মাণ করছেন। কিন্তু নাটক দেখার আদর্শ জায়গা টেলিভিশন। টেলিভিশনে নাটক দেখার অভ্যাসটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। সেজন্য, চ্যানেল কর্তৃপক্ষ যারা আছেন তাদের উদ্যোগ নিতে হবে। সামনে কোরবানী ঈদের সময় যেনও এরকম হারে বিজ্ঞাপন না প্রচার করা হয় সেজন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।’
ঈদে সাগর জাহানের পরিচালিত একটি সাত পর্বের ধারাবাহিক নাটক প্রচারিত হয়েছে বাংলাভিশনে। বাংলাভিশনের অনুষ্ঠান প্রধান তারেক আখন্দ বললেন ভিন্ন কথা। সাগর জাহানের কথার সাথে দ্বিমত পোষন করে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না কেনো নির্মাতারা অতি বিজ্ঞাপন নিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিচ্ছেন! গত বছরের তুলনায় এবার ঈদে বিজ্ঞাপন কম প্রচার করা হয়েছে। আমি আমার চ্যানেলের কথা বলতে পারি; সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত মাত্র ২৫ মিনিট বিজ্ঞাপন প্রচার করেছি। সব সীমিত বিরতির নাটক প্রচারিত হয়েছে।’
তিনি দাবি করেন, ক্রিকেট বিশ্বকাপের কারণে সব বিজ্ঞাপন খেলার চ্যানেলে চলে গেছে। আগের তুলনায় সেরকম বিজ্ঞাপন পাওয়া যায়নি। তারেক আখন্দ যোগ করেন, চ্যানেল বাঁচিয়ে রাখতে হলে বিজ্ঞাপন দরকার। টেলিভিশন কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠান নয়। বিজ্ঞাপন ছাড়া টেলিভিশন চ্যানেল টিকিয়ে রাখা কঠিন কাজ।
এদিকে তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় নির্মাতা মিজানুর রহমান আরিয়ান বিজ্ঞাপন বিষয়ে তেমন কোনো অভিযোগ করলেন না। তিনি কথা বলেছেন নাটকের মান নিয়ে। তার মতে এবছর ঈদে তুলনামূলকভাবে কম নাটক প্রচারিত হয়েছে। প্রচারিত সেসব নাটকের মানও কম ছিল। আরিয়ান বলেন, ঈদের সব নাটক যে ভালো হবে তা নয়। কিছু নাটক ভালো হবে, কিছু নাটক সেভাবে ভালো হবেনা। তবে এবার মানহীন নাটকের সংখ্যা বেশি। তারমধ্যে থেকে চার পাঁচটি নাটক ছিল প্রশংসাযোগ্য। আসলে অনেক ভালো নির্মাতারা নাটক নির্মাণ করছেন না। যার কারণে ভালো নাটক থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা।’
অন্যদিকে বৈশাখী টিভির অনুষ্ঠান প্রধান আহসান কবির জানালেন, ক্রিকেট বিশ্বকাপের কারণে নাটকের দর্শক কমেছে। তিনি বলেন, ঈদ ও ক্রিকেট বিশ্বকাপ একই সময়ে হওয়ায় নাটকের টিআরপি কমে গেছে। ঈদের দিন ছিল বাংলাদেশের খেলা। ওটা রেখে আর কেউ নাটক দেখেনি। দেখার কথাও নয়।
বিজ্ঞাপন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নাটকের মাঝে বিজ্ঞাপন কমানো যাবে না। কোনো টেলিভিশন চ্যানেল পারবে না এটা। আজ থেকে সাত বছর আগে বিজ্ঞাপন কমানোর বিষয়ে সরকার নীতিমালা গ্রহণ করতে পারতো। কিন্তু করেনি। ক্যাবল সংযোগ ব্যবসায়িরা যদি চ্যানেলগুলোকে টাকা দিতো তাহলে টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন কম প্রচার করা সম্ভব হতো। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি চ্যানেলকে ‘পে চ্যানেল’ করলে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন নির্ভর হতে হবে না।
সারাবাংলা/আরএসও/পিএম
আরও পড়ুন : তাদের আসল বয়স!