স্বজনপ্রীতি চাপ বা বিনিময়ের অভিযোগ ভিত্তিহীন: নাসির উদ্দীন ইউসুফ
২৫ মে ২০১৯ ১৫:৪৪
চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদানে অনিয়ম নিয়ে কথা চলে আসছে অনেকদিন ধরেই। ২০১৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক আবু সাঈয়ীদ ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে চলচ্চিত্রে দেওয়া সরকারি অনুদানে ‘পক্ষপাতিত্বের’ অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন।
এছাড়াও বিভিন্ন সময় চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদানে সুপারিশ, ক্ষমতাধরদের চাপসহ বিভিন্ন অনিয়মের কথা শোনা যায় লোকমুখে। অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের অনুদান নিয়েও।
অনুদান কমিটিতে আট বছর ধরে আছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং চলচ্চিত্র পরিচালক নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু। চলচ্চিত্রে অনুদান সম্পর্কিত নানা অভিযোগ এবং পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি কথা বলেছেন সারাবাংলা’র সাথে।
নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু মনে করেন বেশিরভাগ সময়ে যোগ্য চিত্রনাট্যই সরকারি অনুদান পেয়েছে। ভালো চিত্রনাট্যের বাদ পড়ার নজির খুব একটা নেই।
তিনি বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন আমরা (অনুদান কমিটি) ব্যক্তিগত সম্পর্ক, ফোন, লবিং-এ দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে অনুদান দিয়ে থাকি। বিষয়টি একদমই সেরকম না, একদমই না। চাপে পড়ে অনুদান দেওয়ার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি এখনও হইনি।’
এবারের (২০১৮-১৯ অর্থবছর) অনুদান প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠা এবং তিনিসহ অনুদান কমিটির চার সদস্যের পদত্যাগ নিয়েও কথা বলেন বরেণ্য এই নির্মাতা।
এ প্রসঙ্গে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘এবার আমাদের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কিছু ঘটনা ঘটে আর সে জন্যই আমরা চার জন (মামুনুর রশীদ, মোরশেদুল ইসলাম, মতিন রহমান ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু) পদত্যাগেরর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’
অনুদান কমিটির চার সদস্য পদত্যাগ করতে চেয়েও পদত্যাগ না করা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট মহলগুলোতে। এ প্রসঙ্গে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘মাননীয় তথ্যমন্ত্রীর বাসায় আমাদের এক ঘণ্টার একটা বৈঠক হয়। সেখানে আমাদের পদত্যাগ না করতে অনুরোধ করা হয়। তখন আমরা অনুদানের কলেবর বৃদ্ধিসহ আরও কিছু বিষয় বাস্তবায়নের প্রস্তাব করে ভালো একটি পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করেছি।’
কিন্তু এতেই সামলোচনা বা অভিযোগ থামছে না। অনেক প্রশ্ন উঠেছে এবারের অনুদান নিয়ে।
অনুদান দেওয়ার নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না এমন মানুষদের অনুদান দেওয়া, সাক্ষাৎকার না নিয়েই অনুদান দেয়া, নির্মাণাধীন চলচ্চিত্রের অনুদান পাওয়া, বেশি নম্বর পেয়েও অনুদান না পওয়াসহ আবেদন না করেই অনুদান পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে এবার।
চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না এমন মানুষদের অনুদান দেওয়া প্রসঙ্গে উদাহরণ দিয়ে অনুদান কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘সব জায়গায় তো চাকরির জন্য অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করা একজন শিক্ষার্থী। মাত্রই পাস করে বেরিয়েছে। তার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তাইলে কি কোনোদিন চাকরি পাবে না? পাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে আমরা চিত্রনাট্য দেখেছি। অনেক ভালো চিত্রনাট্য বলেই চলচ্চিত্রে সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও আমরা অনুদান দিতে একমত হয়েছি।’
এসময় চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট না কিন্তু অনুদানপ্রাপ্ত পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র ‘মেলাঘর’ এবং ‘নির্মাণাধীন’ হয়েও অনুদান পাওয়া প্রামাণ্যচিত্র ‘বিলকিস অ্যান্ড বিলকিস’ প্রসঙ্গে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘‘মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন এম এ মতিনের মেয়ে পূরবী মতিনের প্রামাণ্যচিত্র ‘মেলাঘর’। এটি নির্মাণ হলে মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা পর্দায় উঠে আসবে। ত্রিপুরার মেলাঘরের সেইসব দিনের কথা আর্কাইভ হয়ে থাকবে। এটা আমাদের ইতিহাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর ‘বিলকিস অ্যান্ড বিলকিস’ প্রামাণচিত্রটি নির্মাণাধীন, কিন্তু চিত্রনাট্যটা অসম্ভব ইউনিক। আমাদের দেশের মেয়ে এমন একটি ছবি নির্মাণ করেছে ভাবতেই ভালো লাগে। কিছু সহায়তা পেলে ছবিটির পুরো কাজ শেষ হয়। এতে হয়ত নিয়মের কিছুটা ব্যত্যয় ঘটলো। কিন্তু ভালো কাজের জন্য এতটুকু করাই যায়।’
পাশাপাশি চুলচেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা বিশ্লেষণ না করে কোনও চিত্রনাট্য অনুদান পেলো কি না, অভিযোগকারীদের তা যাচাই করে দেখার অনুরোধ করেছেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু।
তবে সাক্ষাৎকার নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন অনুদান কমিটির এই সদস্য। কিন্তু সময়ের অভাবে এই কাজটি করা হয়ে ওঠেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সাক্ষাৎকার নেওয়ার বিষয়টা অনেকটা পিচিং-এর মতো। অর্থাৎ বাছাই কমিটির বাছাই করা চলচ্চিত্রগুলোর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জেনে নেওয়া যে, তিনি কীভাবে কাজটি করতে চান। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের কারণে এটা করা হয়ে ওঠেনি।’
এ প্রসঙ্গের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে শমী কায়সারের হঠাৎ অনুদান পাওয়ার বিষয়টি। সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়নি বলেই শমী কায়সার বলে বসেছেন অনুদানের জন্য তিনি আবেদনই করেননি।
এই বিতর্কের রেশ ধরে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘শমী এ কথা বলেছেন জানতে পেরে আমরা বিব্রত হয়েছি। কিন্তু শমীর স্বাক্ষরসহ আবেদন তো আমরা পেয়েছি। চিত্রনাট্যটি খুবই ভালো, তাহলে কেন আমরা অনুদান দেবনা। আর শমী কেন বললো সে আবেদন করেনি, সেটা শমী কায়সার ভালো বলতে পারবেন।’
কিন্তু বেশি নম্বর পেয়ে অনুদান না পাওয়া? এই অভিযোগেরও জবাব দেন অনুদান কমিটির গুরুত্বপূর্ণ এই সদস্য।
‘দেখেন অনুদানে এবার যে মার্কিংয়ের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে সেটা কিন্তু আমরা গ্রহণ করিনি। বাছাই কমিটি নম্বর দিয়ে পাঠানোর পর আমরা সেটা ফেরত দিয়ে বলেছিলাম শুধু মন্তব্য দিয়ে পাঠাতে। আর বেশি নম্বর পেলেই যে সেটা অনুদান পেয়ে যাবে বিষয়টা একদমই সেরকম না। এর আগে ২০১৫ তে আবু সাঈয়ীদ সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন যে, তার চিত্রনাট্য নাকি সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েও অনুদান পায়নি। এটা কমিটির বিষয়। কমিটি যাকে যোগ্য মনে করেছে তাকে অনুদান দিয়েছে।’
নাসির উদ্দীন ইউসুফ আরো জানান, নতুন চলচ্চিত্র নির্মাতারা যেনো বেশি করে অনুদান পান, সেজন্য পরবর্তীতে বিষয়টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। দরকার হলে নীতিমালায় কিছু সংযোজন-বিয়োজন করা যেতে পারে। অনুদান কমিটির ভুল থাকতে পারে, তা জানালে কমিটি নিজেদের শুধরে নেবে। ভালো চিত্রনাট্যকে অনুদান দিতে কিছু ক্ষেত্রে নিয়মের ব্যত্যয় হতে পারে। তবে ব্যক্তিগত ইচ্ছা, উপর মহলের চাপ বা উৎকোচের বিনিময়ে অনুদান দেওয়ার অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন।
সারাবাংলা/পিএ /পিএম
আরও পড়ুন :
. ঈদে তুহিন হোসেনের তিন নাটক, এক টেলিছবি
. ব্যবসায়ী ক্যাটরিনা
. ওরা তিনজন ছাড়া হলিউডে কোনো তারকা নেই: কুয়েন্তিনো তারান্তিনো
. নজরুল ও আমি যতটা কাছের, ঠিক ততটাই দূরের: ফাতেমা তুজ জোহরা
অভিযোগ চলচ্চিত্র চলচ্চিত্র অনুদান তথ্য মন্ত্রণালয় নাসির উদ্দীন ইউসুফ ভিত্তিহীন শমী কায়সার