৪৮ বছরে বাজেটের আকার বেড়েছে ৬৬৬ গুন
১১ জুন ২০১৯ ০৮:২০
ঢাকা: স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রথম বাজেট ঘোষণা করা হয় ১৯৭২ সালের ৩০ জুন। তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ঘোষিত দেশের প্রথম বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা। আগামী ১৩ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের ৪৯তম বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। এই বাজেটের সম্ভাব্য আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা। গত ৪৮ বছরের ব্যবধানে দেশে বাজেটের আকার বেড়েছে ৬৬৬ গুন।
সর্বশেষ গত ১০ বছরে অর্থ্যাৎ আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দুই মেয়াদ ও তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট পর্যন্ত আকার বেড়েছে পাঁচ গুণেরও বেশি। ২০০৯ সালে দলটি ক্ষমতায় আসার পর ওই বছরের ১১ জুন (৩৯ তম) ২০০৯-১০ অর্থবছরের ১ লাখ ১৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করে। এই বাজেটটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এরপর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজেট চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার ঘোষণা করা হয়। আগামী ১৩ জুন উপস্থাপন করা হবে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট। বর্তমান সরকারের ১১ বছরের ব্যবধানে বাজেটের আকার বেড়েছে পাঁচগুনেরও বেশি।
বাজেট বৃদ্ধির এই হারকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ১০ বছরে গড় প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ওপরে রয়েছে। তার মানে হলো, বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বাড়ছে। অর্থনীতির আকার বাড়লে বাজেটের আকারও বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়লেও বাস্তবায়নের হার ক্রমান্বয়ে কমছে। অর্থবছরের শুরুতে যে বাজেট ঘোষণা করা হয় বছর শেষে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। এটা বাজেটের আকার বাড়াটাকে কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়লেও বাজেটের বাস্তবায়নের হার কমছে। তাই, বাজেটের আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়নের হার বাড়াতে হবে। বাজেটের গুণগত মান এবং বাস্তবায়নের হার না বাড়লে এসব বাজেটকে উচ্চাবিলাসী বাজেট বলা যায়।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সারাবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার প্রতিবছর বড় হচ্ছে। আওয়ামীলীগের গত ১০ বছরে গড় প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের উপরে রয়েছে। এতে বোঝা যায়, বাংলাদেশের অর্থনীতির কলেবর বাড়ছে। অর্থনীতি বাড়লে বাজেটের আকারও বাড়বে। তিনি বলেন, বড় বাজেট নিয়ে সেটা বাস্তবায়ন করতে পারলে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হলো বাস্তবায়ন করতে না পারাটা।
বাংলাদেশের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বাজেটের আকার: স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৩০ জুন (১৯৭২-৭৩ অর্থবছর) ৭৮৬ কোটি টাকার প্রথম বাজেট ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৯৮১ সালের ৬ জুন দশম বাজেটের আকার ছিল ৪ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। ১৯৯১ সালের ১২ জুন ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে ২০তম বাজেট ছিল ১৫ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা। ২০০০ সালের ৮ জুন ২০০০-০১ অর্থবছরে ত্রিশতম বাজেট ছিল ৩৮ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। ২০১০ সালের ১০ জুন, ২০১০-১১ অর্থবছরের ৪০ তম বাজেট ১ লাখ ৩২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য আগামী ১৩ জুন ঘোষিত বাজেটের আকার হচ্ছে ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা।
আওয়ামীলীগের টানা ১১ বাজেট: ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে টানা তিন দফায় আওয়ামীলীগ সরকার গঠনের পর এরইমধ্যে ১০টি বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১৩ জুন আওয়ামীলীগ সরকারের ২১তম এবং টানা ১১তম বাজেট ঘোষণা করা হবে। এটি বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট। স্বাধীনতার পর আর কোনো সরকার টানা ১১টি বাজেট উপস্থাপন করতে পারেনি। এটি আওয়ামীলীগ সরকারের জন্য একটি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে।
কোন অর্থমন্ত্রী কয়টি বাজেট দিয়েছেন: বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৪৮টি বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। এই ৪৮টি বাজেট ১২ জন ব্যক্তি উপস্থাপন করেছেন। একজন রাষ্ট্রপতি, ৯ জন অর্থমন্ত্রী ও ২ জন অর্থ উপদেষ্টা এসব বাজেট পেশ করেন। এদের মধ্যে ১২টি করে বাজেট দিয়ে যৌথভাবে শীর্ষে রয়েছেন বিএনপি সরকারের প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, আওয়ামীলীগ ও এরশাদ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মুহিত এরশাদ সরকারের আমলে ২টি এবং আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ১০টি বাজেট দিয়েছেন। এছাড়াও অর্থমন্ত্রী এএমএস কিবরিয়া ৬টি, এরশাদ সরকারের অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান চারটি, বাংলাদেশর প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ তিনটি, জিয়াউর রহমান তিনটি, ড. এবি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম ও এমএ মুনিম ২টি করে বাজেট উপস্থাপন করেন। অন্যদিকে ড. মীর্জা নুরুল হুদা, ডক্টর এ আর মল্লিক, ড. ওয়াহিদুল হক, ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ প্রত্যেকে ১টি করে বাজেট দিয়েছেন।
কোন সরকার কয়টি বাজেট দিয়েছে: ২০১৮ সাল পর্যন্ত ঘোষিত ৪৮টি বাজেটের মধ্যে চার মেয়াদে আওয়ামীলীগ সরকারের চারজন অর্থমন্ত্রী ২০টি বাজেট দিয়েছেন। এরা হলেন, তাজউদ্দিন আহমেদ, ডক্টর এ আর মল্লিক, এএমএস কিবরিয়া ও আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিএনপি তিন মেয়াদের শাসন আমলে তিনজন ১৬টি বাজেট উপস্থাপন করেছেন। এরা হলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, ড. মীর্জা নুরুল হুদা ও এম সাইফুর রহমান। আর জাতীয় পার্টির আমলে ৯টি বাজেট চারজন অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেন। এদের মধ্যে রয়েছেন, আবুল মাল আবদুল মুহিত, এম সাইদুজ্জামান, এমএ মুনিম, ড. ওয়াহিদুল হক। অন্যদিকে তিনটি বাজেট দিয়েছেন দুই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২ জন অর্থ উপদেষ্টা। এরা হলেন, ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।
সারাবাংলা/জিএস/জেএএম
আরও পড়ুন- কাল শুরু ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন
বাজেটে ৩ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা
বাজেটে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বাড়ছে ২ হাজার টাকা
আগামী অর্থবছরের প্রাক্কলিত বাজেট অনুমোদন
আসন্ন বাজেটে ঘাটতি এক লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা
বাজেটের আকার বাড়লেও সংক্ষিপ্ত হচ্ছে বক্তৃতা
বৈধ চ্যানেলে প্রবাসী আয় বাড়াতে দুই শতাংশ ভর্তুকি
বাজেটে ভর্তুকি বাড়ছে বিদ্যুতে, কমছে খাদ্যে
ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে দেড় হাজার কোটি টাকা থাকছে বাজেটে
সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় ঢুকছে আরও ১৩ লাখ মানুষ
ঋণের সুদ পরিশোধে বাজেটে বরাদ্দ ৬০ হাজার কোটি টাকা
বাজেট ২০১৯-২০: ৫ স্তরে ভ্যাট কাটবে সরকার
জাতীয় বাজেট বাজেট অধিবেশন বাজেট অর্থবছর ২০১৯-২০ বাজেটের আকার