ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি
১৪ জুন ২০১৯ ০৯:২৫
ঢাকা: ব্যাংক থেকে ঋণগ্রহীতারা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাদের জন্য ‘এক্সিট’-এর ব্যবস্থা করলেও ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের জন্য কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে ব্যাংক কোম্পানি আইনে সংশোধন আনা, প্রয়োজনে ব্যাংকগুলোকে একীভূত করাসহ ছয়টি পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আর্থিক খাত প্রসঙ্গে এসব কথা তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন- বার্ষিক টার্নওভার ৫০ লাখ হলে ভ্যাট লাগবে না
আর্থিক খাতের সংস্কার প্রসঙ্গে শুরুতেই অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকিং খাতে শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কোনো ধরনের সংস্কার দেখা যায়নি। কেউ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে না পারলে তার জন্য বেরিয়ে যাওয়ার (এক্সিট) কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এসব ঋণগ্রহীতার বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ায় সুরাহার জন্য ‘এক্সিট’-এর ব্যবস্থা নিচ্ছেন তিনি। ইনসলভেন্সি ও ব্যাংকরাপসি আইনের আওতায় এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসময় অর্থমন্ত্রী ব্যাংক কমিশনের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। দীর্ঘদিন ধরে এই কমিশন গঠনের আলোচনা চললেও তা আলোর মুখ দেখেনি। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এই কমিশন গঠনে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান মুস্তফা কামাল।
এদিকে, ঋণ পরিশোধে ব্যর্থদের ‘এক্সিটে’র ব্যবস্থা করা হলেও ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারিও বাজেট বক্তৃতায় দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, যেসব ঋণগ্রহীতা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন পরিশোধ না করার জন্য (ইচ্ছাকৃত খেলাপি), সেসব ঋণগ্রহীতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন- যেভাবে রাজস্ব বাড়াবেন অর্থমন্ত্রী
ব্যাংকিং খাতে সংস্কারের জন্য ব্যাংকের মূলধনের (অথোরাইজড ও পেইড আপ ক্যাপিটাল) পরিমাণ বাড়াবেন বলেও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ভ্যাট, কাস্টমস ও আয়কর সংক্রান্ত অন্য কোনো আইনের সঙ্গে যেন সাংঘর্ষিক না হয়, সে অনুযায়ী ব্যাংক কোম্পানি আইনেও সংশোধন আনার পরিকল্পনার কথা বলেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, প্রয়োজন হলে যেন ব্যাংকগুলোকে যেন আইনি প্রক্রিয়ায় একীভূত করা যায় (অ্যামালগামেশন, মার্জার ও অ্যাবজর্পশন), ব্যাংক কোম্পানি আইনে সে সংক্রান্ত সংশোধনীও থাকবে।
তবে ব্যাংক ঋণে একক অঙ্কের (সিংগেল ডিজিট) সুদ হারে অনড় থাকার বিষয়টিও উঠে এসেছে বাজেট বক্তৃতায়। দেশের শিল্প ও ব্যবসা খাতকে প্রতিযোগিতা সক্ষম করতে এই সিংগেল ডিজিট সুদের হার নিশ্চিত করতে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। পাশাপাশি হোল্ডিং ও সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম যুগোপযোগী করার লক্ষ্যেও ব্যাংক কোম্পানি আইনে সংশোধনী আনার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তিনি।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের আর্থিক খাতে বিশেষ কোনো উপকরণ বা ফাইন্যান্সিয়াল টুলসের ব্যবহার না থাকা ব্যাংকগুলো স্বল্প মেয়াদের আমানত সংগ্রহ করে দীর্ঘ মেয়াদের ঋণ দিতে বাধ্য হতো, যা ভারসাম্যহীনতা এবং কখনো কখনো সংকট তৈরি করে। এ ধরনের ভারসাম্যহীনতা বা সংকট নিরসনে গতিশীল বন্ড মার্কেটসহ ওয়েজ আর্নার্স বন্ড, ভেনচার ক্যাপিটাল, ট্রেজারি বন্ড ইত্যাদির ব্যবহার উৎসাহিত করা হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। শারীরিক অসুস্থতার কারণে স্পিকারের অনুমতি বসে বসে বাজেট বক্তৃতা উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে একপর্যায়ে তিনি বক্তৃতা চালু রাখতে পারেননি। পরে তার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট বক্তৃতা শেষ করেন।
আরও পড়ুন-
পুঁজিবাজারের জন্য বিশেষ প্রণোদনা
৮ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য
মূল্যস্ফীতিতে লাগাম টানতে চায় সরকার
বার্ষিক টার্নওভার ৫০ লাখ হলে ভ্যাট লাগবে না
করপোরেট করের হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে
এবারও বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ টাকা
ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি
আইসিটি খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব ১ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা
প্রকল্পের চতুর্থ কিস্তি পর্যন্ত অর্থ পরিচালকের হাতে থাকবে
পোশাকখাতে বাড়তি প্রণোদনা ২ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা
পরিবহনে গুরুত্ব দিয়ে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকার এডিপি
‘প্রস্তাবিত বাজেটে শেয়ার বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণ করবে’
সারাবাংলা/টিআর
২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট আর্থিক খাত ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণখেলাপি বাজেট বাজেট ২০১৯-২০ ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন ব্যাংকিং খাত