ক্যাসিনো থেকে প্রতি রাতে ৪০ লাখ ‘আয়’ সম্রাটের
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২৩:৪১
ঢাকা: ইয়ং মেনস ও ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব) হানা দিলে বেরিয়ে এসেছে ঢাকা শহরে ক্যাসিনো নিয়ে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। এই ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। তবে গোয়েন্দা তথ্য বলছে, ক্যাসিনো সাম্রাজ্যের বড় একটি অংশই মূলত চলে দক্ষিণ যুবলীগেরই সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটের ছত্রছায়ায়। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় তার অধীন ক্যাসিনোর সংখ্যা ১৫টিরও বেশি। আর এসব ক্যাসিনো থেকে প্রতিরাতে তার পকেটে ঢোকে ৪০ লাখ টাকারও বেশি!
আরও পড়ুন- অস্ত্র-মাদকের মামলায় ৭ দিনের রিমান্ডে যুবলীগ নেতা খালেদ
গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও জুয়ারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকায় ক্যাসিনোর বিস্তার ঘটায় নেপালি নাগরিক দীনেশ ও রাজকুমার। যুবলীগ নেতা সম্রাটের তত্ত্বাবধানে এরা একের পর এক ক্যাসিনো খুলে বসে ঢাকা শহরে। এ থেকে সম্রাটের পকেট যেমন ভারি হচ্ছে দিন দিন, তেমনি এসব ক্যাসিনোতে কর্মরত নেপালিদের হাত ধরে কোটি কোটি টাকা নেপালেও চলে যাচ্ছে পাচার হয়ে।
গোয়েন্দা তথ্য বলছে, রাজধানীর মতিঝিল-বনানী থেকে শুরু করে উত্তরা পর্যন্ত এলাকায় অন্তত ১৫টি ক্যাসিনো চলে সম্রাটের অধীনে। এগুলোর কোনোটি থেকে প্রতি রাতে ২ লাখ টাকা, কোনোটি থেকে ৩ লাখ টাকা, কোনোটি থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্তও চাঁদা জমা হয় সম্রাটের পকেটে। সম্রাটের অধীন এসব ক্যাসিনো দেখে নেওয়া যাক একনজরে।
ভিক্টোরিয়া ক্লাব
ঐতিহ্যবাহী ভিক্টোরিয়া ক্লাবে ২০১৫ সালে ক্যাসিনো খোলার মাধ্যমে বাংলাদেশে অবৈধ এ ব্যবসা শুরু করেন নেপালের ক্যাসিনো ব্যবসায়ী দীনেশ ও রাজকুমার। তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন বিনোদ মানালী। নেপাল ও ভারতের গোয়ায় তাদের মালিকানায় ক্যাসিনো ব্যবসা রয়েছে। ভিক্টোরিয়ায় ক্যাসিনো চালুর কয়েক মাসের মধ্যেই বাবা নামের এক নেপালি নাগরিকের কাছে ক্যাসিনোটি বিক্রি করে দেন তারা। তখন থেকে বাবা ও তার ম্যানেজার হেমন্ত মিলে ক্যাসিনোটি চালাতে থাকেন।
আরও পড়ুন- যুবলীগ নেতা খালেদকে আদালতে হাজির
ভিক্টোরিয়া ক্লাবের সভাপতি কাজল ও সাধারণ সম্পাদক তুহিন। প্রতিদিন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ভাড়া নেন তারা। আর সম্রাটের চাঁদা দিনে ৪ লাখ টাকা। তার সহযোগী যুবলীগ নেতা আরমান ও খোরশেদ প্রতিদিন গিয়ে চাঁদার টাকা নিয়ে আসতেন। ক্লাবের সিসি টিভি ক্যামেরা পরীক্ষা করলেই এর সত্যতা পাওযা যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কলাবাগান ক্লাব
ঢাকার নামকরা জুয়ারি সেন্টু ২০১৬ সালে কলাবাগান ক্লাবে ক্যাসিনো খোলেন নেপালি নাগরিক দীনেশ, রাজকুমার ও অজয় পাকরালের সঙ্গে অংশীদারিত্বে। এখান থেকে প্রতিদিন ২ লাখ টাকা করে চাঁদা নিতেন সম্রাট। এখান থেকেও চাঁদা তুলতেন আরমান। অভিযোগ আছে, চাঁদার অঙ্কে বনিবনা না হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে ওই ক্লাব বন্ধ করে দেন সম্রাট। অনেক দেনদরবার করেও আর ক্যাসিনোটি চালু করতে পারেননি সেন্টু।
সৈনিক ক্লাব
মালিবাগ-মৌচাক প্রধান সড়কের পাশের একটি ভবনে অবস্থান সৈনিক ক্লাবের। অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের নামে এই ক্লাব চলে। আর এটি নির্ধারিত টাকায় ভাড়া নিয়ে ক্যাসিনো খোলেন যুবলীগ নেতা জসিম উদ্দিন ও এ টি এম গোলাম কিবরিয়া। তাদের অংশীদার নেপালি নাগরিক প্রদীপ। এই ক্লাব থেকে প্রতিদিন ৪ লাখ টাকা চাঁদা পান সম্রাট।
ঢাকা গোল্ডেন ক্লাব
বনানী আহমেদ টাওয়ারের ২২ তলায় ঢাকা গোল্ডেন ক্লাব চালু করেন চাঁদপুরের ব্যবসায়ী আওয়াল পাটোয়ারি ও আবুল কাশেম। ক্লাবটি চালুর কিছুদিনের মধ্যেই কৗশলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর বাড়ে সম্রাটের মাসোহার অঙ্ক। আর তোলাবাজ আরমান জোর করে ক্লাবটির মালিকানায় ঢুকে যায়। নেপালি নাগরিক অজয় পাকরালের তত্ত্বাবধনে চলত ক্যাসিনোটি। এখান থেকেও সম্রাটের জন্য প্রতিদিন ৪ লাখ টাকা চাঁদা তুলতেন আরমান।
ওয়ান্ডারার্স ক্লাব
এই ক্লাবে ক্যাসিনো খোলেন নেপালি নাগরিক হিলমি। তার অংশীদার মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোবাশ্বের। সম্রাটের সরাসরি তত্ত্বাবধানে চলে এই ক্যাসিনোটি। এখান থেকে প্রতিদিন সম্রাটের চাঁদা ৫ লাখ টাকা। আরমান, খোরশেদ ও জাকির এই ক্যাসিনো থেকে চাঁদার টাকা নিয়ে যান।
দিলকুশা ক্লাব
এই ক্লাবের মালিক নেপালি নাগরিক দীনেশ, রাজকুমার ও ছোট রাজকুমার। ভারতীয় আরও দু’জন অংশীদার থাকলেও তাদের নাম জানা যায়নি। এই ক্যাসিনো থেকে সম্রাটের প্রতিদিনের চাঁদা ৪ লাখ টাকা। এর বাইরে আরমানের নিজের চাঁদা ১ লাখ। জানা গেছে, ক্লাবটি চালু করতে সম্রাটকে অগ্রিম দিতে হয় ৪০ লাখ টাকা। আর আরমান অগ্রিম নেন ১০ লাখ। আরমানের ছোট ভাই ইয়ং মেনস ক্লাবে অভিযানের সময় ধরা পড়লে তাকে ১ বছরের সাজা দেন র্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত।
আরামবাগ ক্লাব
এক সময়ের ফুটপাত হকার, বর্তমানে মতিঝিল থানা যুবলীগ নেতা জামালের মালিকানায় ক্যাসিনো খোলা হয় আরামবাগ ক্লাবে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ তার অলিখিত অংশীদার। আছে নেপালি অংশীদারও। এই ক্যাসিনো থেকে প্রতিদিন সম্রাটের চাঁদা তিন লাখ টাকা। ক্যাসিনোটির খরচের খাতা দেখলেই এই চাঁদার পরিমাণ নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ফুয়াং ক্লাব
তেজগাও লিংক রোডের ফুওয়াং ক্লাবে একসময় মদ বিক্রির পাশাপাশি নিয়মিত বসত ডিজে গানের আসর। আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্লাব মালিক নূরুল ইসলামের সঙ্গে তেজগাঁও জোনের এক পুলিশ কর্মকর্তার ‘ঝামেলা’র কারণে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় ডিজে আয়োজন। এরপর ওই কর্মকর্তার সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে ক্লাবের দোতলার হল রুমে বসানো হয় ক্যাসিনো। ক্লাবটির একক মালিক নূরুল ইসলাম পুরস্কার ঘোষিত এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর আত্মীয় হওয়ায় এই ক্লাবে সম্রাটের চাঁদার পরিমাণ কম, দিনে ২ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন- খালেদের নামে ৪ মামলা, অস্ত্র-মাদকে ৭ দিন করে রিমান্ড চাইবে পুলিশ
মোহামেডান ক্লাব
বনানীর ঢাকা গোল্ডেন ক্লাবের মালিক ব্যবসায়ী আবুল কাশেম ও মতিঝিলের স্থানীয় যুবলীগ লীগ নেতা ইমরানের মালিকানায় মোহামেডান ক্লাবে চলছিল ক্যাসিনো। এর নেপালি অংশীদার কৃষ্ণা। রাজধানীর সবচয়ে অত্যাধুনিক ক্যাসিনোটিতে এরই মধ্যে অভিযান চালানো হয়েছে। এখান থেকে প্রতিদিন আরমানের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করতেন সম্রাট।
মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব
সম্রাটের চাচা হিসেবে পরিচিত পুরনো ঢাকার ব্যবসায়ী আলী হোসেন এই ক্লাবে ক্যাসিনো চালু করেন। দীনেশ ও রাজকুমার তার ব্যবসায়িক অংশীদার। আলী হোসেনের নামে ক্যাসিনোটি চললেও এর মূল মালিক সম্রাট নিজেই, যদিও কাগজে-কলমে তার নাম নেই বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। তারপরও তার চাঁদার টাকা আলাদা। প্রতিদিন চাঁদার পরিমাণ ৫ লাখ টাকা।
ইয়ং মেনস ক্লাব
চারদিকে জুয়ার টাকা উড়তে দেখে লোভে পড়েন যুবলীগের আরেক নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। স্থানীয় সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেননকে চেয়ারম্যান করে প্রতিষ্ঠা করেন ইয়ং মেনস ক্লাব। ফুটবল, ক্রিকেটের উন্নয়নের কথা বলে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠার পর অত্যাধুনিক সরঞ্জাম এনে নিজেই চালু করেন ক্যাসিনো। কমলাপুর আইসিডির কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে চীন থেকে আমদানি করা অত্যাধুনিক সরঞ্জাম এসে বসান তার ক্যাসিনোতে। এখান থেকেও দিনে ৪ লাখ টাকা চাঁদা নিতেন সম্রাট।
আরও পড়ুন- পুলিশ, নেতা, সাংবাদিক, সন্ত্রাসী— সবার পকেটে ক্যাসিনোর টাকার ভাগ
এজাক্স ক্লাব
এলিফেন্ট রোডের এজাক্স ক্লাব চালু হয় যুবলীগ নেতা আরমান, তছলিম ও খোরশেদের তত্ত্বাবধানে।নেপালি নাগরিক ছোট রাজকুমারকে দিয়ে ক্যাসিনোটি চালু করেন তারা। এই ক্যাসিনো থেকে প্রতিদিন সম্রাটের চাঁদা ৩ লাখ টাকা।
উত্তরার ক্যাসিনো
দীনেশ ও রাজকুমারের অংশীদারিত্বে উত্তরায় এপিবিএন অফিসের উল্টো পাশে একটি ভবন ভাড়া করে চালু করা হয় একটি ক্যাসিনো। তাদের পার্টনার হন তছলিম নামের এক স্থানীয় যুবলীগ নেতা। এরপর ওই এলাকায় সম্রাটের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় যুবলীগ নেতাদের মাধ্যমে আরও কয়েকটি ক্যাসিনো গড়ে তোলা হয়। প্রতিটি ক্যাসিনোতে সম্রাটের চাঁদা দিনে ২ থেকে ৪ লাখ টাকা।
ছোট রাজ কুমার (ডিানে), ভি চিহ্ন দেখাচ্ছে বিনোদ মানালি
কে এই দীনেশ ও রাজকুমার?
নেপালের ক্যাসিনো ব্যবসায়ী দীনেশ ও রাজকুমারের আদি নিবাস নেপালের থামেলে। তাদের হাত ধরেই মূলত ঢাকায় ক্যাসিনো ব্যবসার বিস্তার। প্রতিটি ক্যাসিনো চালুর আগে তারা কাকরাইলে যুবলীগ নেতা সম্রাটের অফিসে গিয়ে দেনদরবারে বসতেন। তার অফিসের সিসি ক্যামেরার রেকর্ড পরীক্ষা করলেই সত্যতা পাওয়া যাবে বলে তার ঘনিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
গোয়েন্দা তথ্য বলছে, দীনেশ ও রাজকুমার অবৈধ ক্যাসিনো খোলার পর হুমড়ি খেয়ে পড়েন জুয়ারিরা। এ অবস্থা দেখে একের পর এক ক্যাসিনো খুলতে থাকেন তারা। আর দেশ থেকে নিয়ে আসেন ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের। সেই সঙ্গে প্রতিটি ক্যাসিনোতে ২০ থেকে ২৫ জন করে নেপালি কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েও কামিয়ে নেন মোটা টাকা। আবার নেপালিদের বেতনও হয় মার্কিন ডলারে। একজন কর্মকর্তার বেতন মাসে কমপক্ষে ১ হাজার ডলার। ভিজিট ভিসায় আসা এসব কর্মচারীরা প্রতিমাসে পালা করে দেশে যাওয়ার সময় ডলার নিয়ে যান। মাঝে মধ্যেই টাকা পাঠাতে হুন্ডিরও আশ্রয় নেন। গত চার বছর এভাবে দেশ থেকে শুধু নেপালেই কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এ রিপোর্ট লেখার সময়ও (বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা) দীনেশ ও রাজকুমার বাংলাদেশেই অবস্থান করছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে তাদের মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।
বামে দিনেশ জানে, ডানে বিনোদ মানালি
সম্রাটের ‘তোলাবাজ’রা
গোয়েন্দা তথ্য ও ক্লাবপাড়ায় সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, একসময় কাকরাইলের বিপাশা হোটেলে বয় হিসেবে কাজ করতেন জাকির হোসেন, গুলিস্তানের হকার ছিলেন আরমান। সম্রাটের নিয়ন্ত্রণে চলা ক্যাসিনো থেকে শুধু চাঁদা তোলার কাজ করেই তারা এখন কোটিপতি! নতুন মডেলেরে হ্যারিয়ার গাড়ি দাপিয়ে চাঁদা তুলতেন আরমান। দু’টি ক্যাসিনোতে মালিকানাও রয়েছে তার। কোন ক্যাসিনোর চাঁদার পরিমাণ কত হবে, সম্রাটের সঙ্গে বসে তার পরিমাণও ঠিক করে দিতেন আরমানই। আর জাকির চাঁদা তোলার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় মাসোহারা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করতেন। ক্যাসিনো ও ক্লাবপাড়ার সবাই তাদের সম্রাটের বন্ধু হিসেবেই চেনেন। সিঙ্গাপুরে অভিজাত ক্যাসিনো মেরিনা বে’তে গিয়ে তারা জুয়াও খেলেন একসঙ্গে।
আরও পড়ুন- ‘আন্ডারওয়ার্ল্ডে দাপট’ খালেদের, পালাতে চেয়েছিলেন সিঙ্গাপুরে
খালেদের সঙ্গে ‘দ্বন্দ্ব’ সম্রাটের
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় একসময় ওয়ান টেন ও থ্রি কার্ডের মতো জুয়া চলত। যুবলীগ নেতা সম্রাটের নিয়ন্ত্রণেই মূলত ঢাকার বিভিন্ন ক্লাব ও ভবনে বিদেশের আদলে অবৈধ ক্যাসিনো গড়ে উঠতে থাকে। আর এ খাত থেকে প্রতিদিন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম করে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা তুলতে থাকেন সম্রাট। কাঁচা টাকার লোভে পড়ে একের পর এক গড়ে উঠতে থাকে ক্যাসিনা। এর ধারাবাহিকতায় নিজের প্রতিষ্ঠিত ইয়ং মেনস ক্লাবে ক্যাসিনো বসান যুবলীগ নেতা খালেদ। টেন্ডারবাজির পাশাপাশি তিনিও ঢুকে পড়েন ক্যাসিনো জগতে। দু’জনই যুবলীগের একই কমিটির নেতা হলেও এ নিয়ে সম্রাট-খালেদের মধ্যে একসময় শীতল যুদ্ধও চলছিল।
আরেক নেপালি রাজ কুমার
ধরা পড়লেন খালেদ, বাকিরা কোথায়?
ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন। তবে ঢাকার ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত খালেদের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। তার তোলাবাজ বাহিনীর সদস্যদের কাউকেও ধরতে পারেনি পুলিশ। আটক করা যায়নি ক্যাসিনো ব্যবসার হোতা তিন নেপালি নাগরিক, ক্যাসিনোগুলোর এ দেশীয় মালিক ও কর্মকর্তাদের কাউকেই।
আরও পড়ুন- খালেদের ক্যাসিনো থেকে আটক ১৪২, জব্দ ২৪ লাখ টাকা
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, কাকরাইলের নিজস্ব অফিসেই আছেন যুবলীগ নেতা সম্রাট। তার সঙ্গে আছেন তার চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের সদস্য যুবলীগ নেতা আরমান, খোরশেদ, জুয়েল, মোরসালিন। তাদের সঙ্গে আছেন আরও বেশকিছু নেতাকর্মী। যেকোনো সময় সেখানে অভিযান চালানো হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
যুবলীগ নেতা সম্রাট বরাবরই তার বিরুদ্ধে ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। বুধবারও একাধিকবার তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি সচল রয়েছে। বেশিরভাগ সময়ই ফোন করলে ধরছেন না। তবে মাঝে মধ্যে কেউ ফোন রিসিভড করে বলেন, ভাই অফিসেই আছেন, ব্যস্ত আছেন। পরিচয় জানার আগেই ফোন কেটে দেন।
অন্য ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের কারও সঙ্গে কথা বলাও সম্ভব হয়নি। তাদের বেশিরভাগের মোবাইল নম্বরই বন্ধ পাওয়া গেছে।