বিজ্ঞাপন

পুলিশ, নেতা, সাংবাদিক, সন্ত্রাসী— সবার পকেটে ক্যাসিনোর টাকার ভাগ

September 19, 2019 | 3:36 pm

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বেশ কিছুদিন ধরেই রাজধানীর পল্টন, মতিঝিল, এলিফ্যান্ট রোড ও বনানীতে ক্যাসিনোর রমরমা ব্যবসা চলে আসছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) র‌্যাবের অভিযানে এগুলোর আসল চিত্র জনসম্মুখে আসে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ব্যবসার পুরো নিয়ন্ত্রণ ছিল যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট ও সাংগাঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার হাতে। তবে এখানকার টাকার ভাগ পেত পুলিশের সংশ্লিষ্ট থানার ওসি, ডিসি, রাজনৈতিক নেতা, ওয়ার্ড কমিশনার, সাংবাদিক ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীরা। র‌্যাবের হাতে খালেদ মাহমুদ আটক হওয়ার পর তিনি এ তথ্য জানিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) র‌্যাবের বিশ্বস্ত এক সূত্র সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

র‌্যাবের ওই সূত্র জানায়, ‘প্রত্যেকটি ক্যাসিনো থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা লেনদেন হতো। লাভের অংশের ভাগ সবার কাছে পৌঁছে দিতে হতো। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে মাসিক হারে কয়েক লাখ টাকা দিতে হতো। সংশ্লিষ্ট জোনের পুলিশের সহকারী কমিশনার ও উপ-কমিশনারের কাছেও মাসিক হারে টাকা পৌঁছে যেত। এমনকি যারা উপ-পরিদর্শক বা পরিদর্শক লেভেলের তাদেরকেও টাকা দিতে হতো। তবে তাদের পরিমাণটা ছিল কম। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ক্যাসিনো এলাকার পুলিশের বিট অফিসারও পেত টাকার ভাগ।

সূত্রটি আরও জানায়, টাকার ভাগ রাজনৈতিক নেতার পকেটেও যেতো। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে মোটা অংকের টাকা দিতে হতো। এমনকি কাউকে কাউকে গাড়ি উপহার দিতে হয়েছে। অনেককে দিতে হয়েছে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা দামের মোবাইল ফোন। এমন নেতাদের তালিকাও করা হচ্ছে। টাকার ভাগ যেত অনেক সাংবাদিকের পকেটেও। এরই মধ্যে খালেদ সবার তালিকা র‌্যাবের কাছে দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

র‌্যাবের সূত্রটি বলছে, ক্যাসিনোর এই টাকার ভাগ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও চলে যেত। যেসব সন্ত্রাসী দেশের বাইরে থাকেন তারাই মূলত এই ভাগ পেত।

র‌্যাবের কাছে খালেদ জানিয়েছে, মগবাজার টিএনটি কলোনির সন্ত্রাসী নাজির আরমান নাদিম ও শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের হয়ে ঢাকায় কাজ করেন খালেদ। চাঁদাবাজি ও ক্যাসিনোর টাকা ওমানের মাসকটে থাকা সন্ত্রাসী নাদিমের কাছে পাঠায় খালেদ। সেখান থেকে জিসানও ভাগ পায় টাকার। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান বর্তমানে ভারতের পাসপোর্ট দিয়ে জার্মানিতে স্থায়ী হয়েছে। জিসানের দুবাইয়ের দেরাতে চারটি গোল্ডের দোকান আর আল ফজিরা সিটি জায়েদ শেখ মার্কেটে রয়েছে নাইট ক্লাব। এসব ব্যবসায় চট্টগ্রামের অনেক ব্যবসায়ীর শেয়ার রয়েছে। সেই সুবাদে জিসান জার্মানি থেকে দুবাইয়ে আসা-যাওয়া করেন। ঢাকায় জিসানের যেখানে যেখানে আধিপত্য ছিল তার সবই নিয়ন্ত্রণ করত খালেদ।

এর আগে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টা ২৫ মিনিটে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গুলশানের বাসা থেকে আটক করে র‌্যাব-১। এরপর তাকে র‌্যাব-৩ কার্যালয়ে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার দেওয়া তথ্য মতে, কমলাপুরের ইস্টার্ন টাওয়ারের টর্চার সেলে অভিযান চালায় র‌্যাব। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে অথবা তার কথা মতো না চললে তাকে ডেকে এনে টর্চার সেলে নির্যাতন করা হতো বলে জানান র‌্যাবের কর্মকর্তারা। পরে সেখান থেকে একটি প্লাস, কয়েকটি হকিস্টিক ও লাঠি উদ্ধার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

‘ক্যাসিনোগুলো থেকে পুলিশের সংশ্লিষ্ট জোনের কর্মকর্তারা টাকার ভাগ নিতেন’- এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার তেমন কিছু জানা নেই। তবে কেউ টাকা নিয়ে থাকলে সেটিও তদন্ত হবে। এবং প্রমাণ হলে আইন অনুযায়ী শাস্তি হবে।’

উল্লেখ্য, বুধবার বিকেল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত পল্টন ও মতিঝিল এলাকার কয়েকটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে ক্যাসিনোগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি আটক করা হয় দুই শতাধিক ব্যক্তিকে।

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন