বিজ্ঞাপন

যে সব অভিযোগে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে ৩ মামলা

May 2, 2024 | 5:16 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে মানবপাচারের, আরেকটি মামলায় অভিযোগ প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে জাল মৃত্যু সনদ তৈরি। তৃতীয় মামলাটিতে তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে আটকে রেখে ভয়ভীতি দেখানো ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। তিনটি মামলাই হয়েছে মিরপুর মডেল থানায়।

বিজ্ঞাপন

গতকাল বুধবার (১ মে) রাতে মানবপাচারের অভিযাগে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে প্রথম মামলাটি করেছেন ধানমন্ডির বাসিন্দা এম রাকিব। বাকি দুটি মামলাই হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার (২ মে)। এর মধ্যে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে জাল মৃত্যু সনদ তৈরির অভিযোগে মামলা করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মিরপুর জোনাল টিমের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কামাল পাশা। আর অবৈধভাবে আটকে রেখে ভয়ভীতি দেখানো ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগের মামলায় বাদী মতিউর রহমান মল্লিক নামে এক ব্যক্তি।

মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সী ছাব্বীর আহম্মদ বৃহস্পতিবার (২ মে) বিকেলে গণমাধ্যমে এ সব মামলার তথ্য জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন- মিল্টন সমাদ্দার ৩ দিনের রিমান্ডে

বিজ্ঞাপন

ওসি বলেন, দুটি মামলায় আসামি শুধু মিল্টন সমাদ্দার। আরেকটি মামলায় মিল্টনের পাশাপাশি চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের ম্যানেজার কিশোর বালাকে আসামি করা হয়েছে। কিশোর বালা পলাতক রয়েছেন।

মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে দায়ের করা মামলায় বাদী এম রাকিব উল্লেখ করেছেন, ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তিনি ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলের সামনে দুই বছরের এক শিশুকে পড়ে থাকতে দেখেন। চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারে ফোন করলে মিল্টন সমাদ্দার ওই শিশুকে নিয়ে যান। পরে মিল্টন সমাদ্দারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে শিশুটিকে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারে ভর্তি করা হয়। এরপর মিল্টন সমাদ্দার জানান, আদালতের মাধ্যমে শিশুটিকে দত্তক নেওয়া যাবে।

এজাহারে বাদী লিখেছেন, ২০২১ সালের কোনো একদিন মিল্টন ফোন করে জানান, আমি যেন ওই প্রতিষ্ঠানে আর না যাই এবং শিশুটির খোঁজ-খবর না নিই। এরপর আরও বেশ কয়েকজন ফোন করে আমাকে হুমকি দেন ও ভয়ভীতি দেখান। প্রাণভয়ে আমি আর সেখানে যাইনি। সম্প্রতি একটি খবর চোখে আসার পর গত ২৪ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিশুটিকে সেখানে পাওয়া যায়নি। শিশুটি কোথায় আছে, সে ব্যাপারেও সদুত্তর মেলেনি। বাদীর অভিযোগ, ২০২১ সালের যেকোনো সময় শিশুটিকে পাচার করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- মিল্টনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা, আরও দুটি প্রক্রিয়াধীন

দ্বিতীয় মামলায় এসআই কামাল পাশা অভিযোগে উল্লেখ করেন, গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে, মিল্টন নিজেই মৃত্যু সনদ দিতেন। এমন তথ্য পেয়ে অভিযান চালালে এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি সিল উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মৃত্যু সনদ তৈরি করতেন মিল্টন সমাদ্দার।

তৃতীয় মামলায় ভুক্তভোগী মতিউর রহমান মল্লিক অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, ২০২১ সালে মিরপুর মাজার রোডে রাত ১১টার দিকে এক বৃদ্ধকে পড়ে থাকতে দেখে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারে ফোন করে বৃদ্ধকে তুলে দেওয়া হয়। এরপর বেশ কয়েকবার প্রতিষ্ঠানে গেলে ওই বৃদ্ধকে আর পাওয়া যায়নি। পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিল্টন সমাদ্দারসহ বেশ কয়েকজন লোক বাদীকে মারধর করেন এবং প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেন।

মিল্টন সমাদ্দারের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, ‘মিল্টনকে রিমান্ডে নেওয়ার পর তার সব অপকর্ম তদন্ত করে বের করা হবে।’

বিজ্ঞাপন

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, ‘মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কেউ যদি মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করে, তাহলে তার স্ত্রীকেও গ্রেফতার করা হবে।’

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার অনলাইন-অফলাইনে একজন পরিচিতমুখ। অনলাইনে তার অনুসারী দেড় কোটির বেশি। তবে সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নিয়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। একে একে মুখ খুলতে থাকেন ভুক্তভোগীরা। যদিও কয়েকটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মিল্টন সমাদ্দার।

এর মধ্যেই বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ডিবি পুলিশের একটি দল ঢাকার মিরপুর থেকে আটক করে মিল্টনকে। তার সঙ্গে কথোপকথনের পর ডিবিপ্রধান জানান, তার বিরুদ্ধে মানবপাচার, অবৈধভাবে মরদেহ দাফন, টর্চার সেল, আয়ের উৎসসহ বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে। সবচেয়ে বড় অভিযোগ, ৯০০ মরদেহের ৮৩৫টির ডকুমেন্ট দেখাতে পারেনি মিল্টন।

এসব অভিযোগেই বুধ ও বৃহস্পতিবার তিনটি মামলা হয়েছে মিল্টনের বিরুদ্ধে। এদিকে জালিয়াতির মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে মিল্টনকে বৃহস্পতিবার ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির এসআই কামাল হোসেন। আদালত শুনানি নিয়ে মিল্টনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

আরও পড়ুন-

সারাবাংলা/ইউজে/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন