আরও নমুনা দরকার গণস্বাস্থ্যের, দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ!
২১ এপ্রিল ২০২০ ২৩:৪৪
ঢাকা: ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লোট’ প্রকল্পের আওতায় উৎপাদিত স্যাম্পলের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রয়োজন আরও ১০ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর রক্তের নমুনা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই নমুনা সরবরাহ করছে না— এমনটিই অভিযোগ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর।
মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) রাতে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের আরও ১০ জন রোগীর নমুনা দরকার। নমুনার জন্য আমরা ঘোরাঘুরি করছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে নমুনা দিচ্ছে না।’
নমুনা দেওয়ার কর্তৃপক্ষ কারা?— এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আক্রান্ত রোগীর নমুনা তো দেবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইডিসিআর)। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না পেলে ওরা তো দিতে পারে না। হয়তো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ওরা লিখিত (চিঠি) অনুমতি পাচ্ছে না। সেই জন্য ওরা আমাদের স্যাম্পল দিচ্ছে না।’
আরও পড়ুন- কোভিড-১৯ টেস্ট পদ্ধতি: গণস্বাস্থ্যের ভরসা এখন চীন!
নমুনা না দেওয়ার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে?— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাইরে থেকে পরীক্ষা কিট আমদানি করছে। আমরা ‘র্যাপিড টেস্ট’ পদ্ধতির স্যাম্পল হস্তান্তর করলে তাদের (মন্ত্রণালয়) আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে। সে কারণে হয়তো নমুনা সরবরাহ করছে না।’
গত ৭ এপ্রিল আইইডিসিআরের কাছ থেকে পাঁচ জন রোগীর রক্তের নমুনা পেয়েছিল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। আরও নমুনা প্রয়োজন হলো কেন— এমন প্রশ্নে ডা. জাফরুল্লাহর উত্তর, ‘যত বেশি নমুনা, তত বেশি গবেষণা। যত বেশি গবেষণা, তত বেশি নিশ্চিত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার সুযোগ। যে পদ্ধতি নিয়ে আমরা দেশ-বিদেশে যেতে চাই, সেটির ব্যাপারে তো শতভাগ নিশ্চিত হতে হবে।’
অবশ্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে আইইডিসিআর। প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানীরা বলছেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করলে আক্রান্ত রোগীর রক্তের নমুনা দিতে আপত্তি নেই। আইডিসিআরের কাছ থেকে নমুনা পেতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েও যাওয়ার দরকার নেই। আইইডিসিআরের কাজে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হস্তক্ষেপ করে না।
আরও পড়ুন- গণস্বাস্থ্যের জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লোটের প্রোডাকশনে বিদ্যুৎ গোলযোগ
আইইডিসিআর’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘নমুনার জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কোথায় আবেদন করেছে, জানি না। তবে আমাদের কাছে লিখিত আবেদন করলে অবশ্যই আমরা তাদের নমুনা সরবরাহ করব।’
এদিকে, প্রথম দফায় চীন থেকে আনা রিএজেন্ট দিয়ে ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লোট’ প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে ১০ হাজার স্যাম্পল তৈরির কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। সবকিছু ঠিক থাকলে ২৫ এপ্রিল সরকারের কাছে স্যাম্পল হস্তান্তরের কথা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম দফায় আমরা যে ১০ হাজার স্যাম্পল তৈরি করেছি, সেগুলো আগামী ২৫ এপ্রিল সরকারকে দিয়ে দেবো। দেওয়ার আগে আরও পরীক্ষার জন্য আরও ১০ জন আক্রান্ত রোগীর রক্তের নমুনা চেয়েছিলাম। সেটা পাচ্ছি না।’
আরও পড়ুন- কিট নয়, কোভিড-১৯ শনাক্তের পদ্ধতি উদ্ভাবন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের
উল্লেখ, প্রথম দফায় তৈরি ১০ হাজার স্যাম্পল দেশি-বিদেশি ১০টি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দিতে চায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এদের মধ্যে আইইডিসিআর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিডিসি, বাংলাদেশ সরকারের ওষুধ প্রশাসন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল ও আইসিডিডিআরবি অন্যতম।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এসব প্রতিষ্ঠানে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের টেস্ট পদ্ধতি ব্যবহারের পর ইতিবাচক ফল পাওয়া গেলে দেশের চাহিদা পূরণের জন্য ব্যাপক হারে কোভিড-১৯ শনাক্তের পদ্ধতি উৎপাদনে যাবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এ জন্য চীন থেকে দ্বিতীয় দফায় আরও একশ কেজি রিএজেন্ট আনার সব প্রস্তুতি শেষ করেছে তারা।
এ ব্যাপারে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য দেশের মানুষের সেবা। দেশের মানুষের জন্যই আমরা গবেষণা করছি। তবে বিভিন্ন দেশ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। দেশের চাহিদা পূরণের পর সম্ভব হলে বিদেশেও স্যাম্পল সরবরাহ করব।’
আরও পড়ুন-
অবশেষে চীন থেকে এলো গণস্বাস্থ্যের রিএজেন্ট
করোনা শনাক্তে গণস্বাস্থ্যের পদ্ধতিকে সরকারের অনুমোদন
‘নিউ ইয়র্ক সায়েন্স জার্নালে’ গণস্বাস্থ্যের কোভিড-১৯ টেস্ট পদ্ধতি
স্যাম্পলসহ পুরো টিম নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতে চাই: ড. বিজন
গণস্বাস্থ্যে কোভিড ১৯ টেস্ট: প্রথম দফার রিএজেন্টে ১ লাখ স্যাম্পল
‘গণস্বাস্থ্যের পদ্ধতিতে’ আগামী এক মাসে ১ লাখ লোকের করোনা টেস্ট!
করোনাভাইরাস পরীক্ষা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লোট জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লোট’ প্রকল্প ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী