Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অপ‌রিক‌ল্পিত ব‌স্তি যেন মৃত্যুপুরী


২৪ মার্চ ২০১৮ ০৯:৩২

।। শামীম রিজভী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: রাজধানীতে অপরিকল্পিত বস্তির অভাব নেই। বেশির ভাগ এলাকাতেই অপরিকল্পিত বস্তি দেখা যায়। ফলে যখন দুর্যোগ দেখা দেয়, তখন এর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ভয়াবহতার রূপ নেয়। এমনই পল্লবীর হারুনাবাদ এলাকার বস্তি। আনুমানিক পাঁচ হাজার ঘর নিয়ে গড়ে উঠা বস্তিটি মাত্র ৪ ঘণ্টায় তিন ভাগের দুই ভাগই পুড়ে যায়।

সরেজমিনে জানা গেছে, হারুনাবাদ বস্তিটির মালিক তিনজন। কবীর মোল্লার বস্তি, সাত্তার মোল্লার বস্তি ও নাগর আলীর বস্তি এই তিন মালিকের নামে বস্তিটির এক একটি অংশ পরিচিত। বস্তির আয়তন প্রায় ২৫ একর। বস্তিতে প্রায় ১৫ হাজার লোকের বসবাস। বস্তির ঘরগুলো ছিল ঘিঞ্জিমতো। একটির সঙ্গে আরেকটি লাগানো। ফাঁকা স্থান তেমন ছিল না বললেই চলে। একটি কক্ষে অনেকেই ঠাসাঠাসি করে থাকেন। অধিকাংশই নিম্ন আয়ের মানুষ। আবার বস্তিতে প্রায় অধিকাংশ দক্ষিণ অঞ্চলের নদীভাঙা লোকজনের বসবাস। কেউ গার্মেন্টসকর্মী, কেউ রিকশাচালক, কেউ কায়িক শ্রমিক।

বস্তির মধ্যে ছিল একাধিক খাবারের দোকান। ছিল একাধিক চায়ের দোকান। প্রতিটি দোকানেই চুলা ছিল। বস্তিটি দীর্ঘদিন ধরেই প্রভাবশালী একটি মহল উচ্ছেদ করার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। এই বস্তির গ্যাসের লাইন, বৈদুত্যিক লাইন এবং ডিসের লাইন সব অবৈধ। একটি চক্র অবৈধভাবে এই বস্তিতে এসব লাইন সংযোগ দিয়ে মোটা অংকের চাঁদা তুলে থাকে। বস্তির রাস্তাগুলো অনেক সুরু; তাই ঘটনার দিন ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো ঢুকতে অসুবিধা হচ্ছিল। এছাড়া আশপাশে নতুন ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য রাস্তার পাশে ইট ও বালু ফেলে রাখা হয়েছিল। এতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে বাধা পায়।

বস্তির ভেতরে বসবাসকারীদের জন্য গলিটিও এতো সরু যে, একজনের পাশাপাশি আরেকজন হাঁটা যায় না এমন। তাই যখন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, তখন মানুষ নিজের জীবন বাচাঁতেই শুধু দৌড় দিতে পেরেছে। সঙ্গে হালকা জিনিস ছাড়া আর কিছুই নিতে পারেনি।

স্থানীয়রা জানান,কবীর মোল্লার, সাত্তার মোল্লার ও নাগর আলীর থেকে বস্তির জায়গা ভাড়া নিয়েছে দিদার, খালেক, বিল্লাল, মমিন, আবুল, চান মিয়া, নজরুল, মালেক, নাছির, জাকির, মামুন, মিন্টুসহ আনুমানিক ৪০০ জন। ওই জায়গায় এরা আবার ঘর তৈরি করে অন্যদের ভাড়া দিচ্ছেন। এদের একেকজনের ৮ থেকে ২০টি করে ঘর রয়েছে। ঘরের অবস্থান ও আয়তন অনুযায়ী ভাড়া ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা।

বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন এইডের বাংলাদেশের ডেপুটি ম্যানেজার (স্থানীয় অধিকার কর্মসূচি) মো. আজাদুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, এমন বস্তি একদমই বাসযোগ্য নয়। সরকারের উচিৎ পরিকল্পিত আবাসন তৈরি করা। যেখানে কোন ধরনের ঝুঁকি থাকবে না। এ ধরনের অপরিকল্পিত আবাসনের জন্য রাজউকের মনিটরিং শক্তিশালী নয়। কারণ তারা স্বীকার করে যে তাদের লোকবলের সংকট রয়েছে।

অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের ম্যানেজার আ. ম. নাসির উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বস্তিবাসীদের নিয়ে কারো তেমন চিন্তাভাবনা নেই। এজন্য বারবার দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকে। এগুলো ঠেকাতে হবে। দুর্ঘটনার পরে ক্ষতিগ্রস্তদের তাৎক্ষণিক কী সহযোগিতা করা যায় তা নির্ণয় করে থাকি আমরা। তবে পরিকল্পিত আবাসন তৈরি করতে আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি।’

স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার ভিডিও কনফারেন্সে কথা হয়। তখন প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম- আমার এলাকার বস্তিবাসীর জন্য ২০ হাজার ফ্ল্যাট দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ১০ হাজার ফ্ল্যাট দিতে রাজি হয়েছেন। এখানে যারা বস্তিবাসী, তারা নদী ভাঙন অঞ্চলের লোক। তাদের সকলের পুনর্বাসন করা আমাদের দায়িত্ব।’

এদিকে, ব‌স্তি‌টির উপর দি‌য়েই গি‌য়ে‌ছে ৩৩ হাজার ভো‌ল্টের (৩৩ কে‌বি) বিদ্যুতের লাইন। এই বিদ্যুতের লাই‌নের লোহার পিলারগু‌লো‌ ওই ব‌স্তির মাঝ দি‌য়ে স্থাপন করা হ‌য়ে‌ছে। কোন বিদ্যুতের পিলা‌রের নি‌চে টয়‌লেট, কোনও বা বিদ্যুতের পিলা‌রের নি‌চে গোসল করার স্থান, আবার কোন বিদ্যুতের পিলা‌রের নি‌চে পা‌নির ট্যাংকি তৈ‌রি করা হ‌য়ে‌ছে।

অগ্নিকা‌ণ্ডের পর ডেস‌কোর পক্ষ‌ থে‌কে বিদ্যুতের লাইন ঠিক কর‌তে আসা হয়। ডেস‌কোর টেক‌নি‌শিয়ান‌দের ৫-৬ ঘণ্টা প্রচেষ্টার পর বিদ্যুতের লাইনটি ঠিক করা হয়।

ডেস‌কোর টেক‌নি‌শিয়ান‌দের কা‌ছে জানা যায়- ১২ মার্চ গভীর রাতে এই বস্তিতে আগুনের খবর পাওয়ার পর পরই বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরি বাঁধের সুয়ারেজ লাইনের পাম্পের বিদ্যুৎ এই ৩৩ হাজার ভো‌ল্টের (৩৩ কে‌বি) লাইন দিয়ে যায়। অগ্নিকাণ্ডের ফলে বেশিরভাগ টাওয়ারের তার গলে ছিড়ে পরে গেছে। যদি সময়মত বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ করা না হতো, তাহলে প্রচুর বস্তিবাসী মারা যেতেন।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল আহমেদ জানান, বস্তির ঘরগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি লাগানো। এতে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর প্রধান করা হয়েছে ঢাকা বিভাগের পরিচালক দেবাশীষ বর্মনকে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়া গেলে, সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

সারাবাংলা/এসআর/এমএইচ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর