কালের কণ্ঠের অন্যায় মেনে নেওয়া যায় না: কুদ্দুস আফ্রাদ
২ অক্টোবর ২০২১ ১৪:৩৮
ঢাকা: বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন দৈনিক কালের কণ্ঠে বিনা বেতনে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটির নামে প্রতারণার অবসান দাবি করেছেন সাংবাদিক নেতারা। তারা বলেছেন, বিনা বেতনে বাধ্যতামূলক ছুটির কোনো বিধান দেশের কোনো আইনে নেই।
দৈনিক কালের কণ্ঠের বেতনবঞ্চিত ও ‘গণছুটির নামে প্রতারণা’র শিকার সাংবাদিকদের কর্মসূচিতে একাত্ম পোষণ করে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, করোনাকালে গণছুটির নামে কালের কণ্ঠ তার কর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। কালের কণ্ঠ অন্যায় করেছে। দেশের আইন ভঙ্গ করেছে, শ্রমআইন ভঙ্গ করেছে। করোনাকালে গণমাধ্যমকর্মীদের ছাঁটাই না করতে তথ্যমন্ত্রী আহ্বান জানালেও কালের কণ্ঠের মালিকপক্ষ তা মানেননি। কালের কণ্ঠ যে অন্যায় করেছে তা মেনে নেওয়া যায় না।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবে শনিবার (২ অক্টোবর) কালের কণ্ঠ থেকে জোরপূর্বক চাকরিচ্যুত ও বেতন বঞ্চিত সাংবাদিকরা এই কর্মসূচি ও মানববন্ধন পালন করে। এতে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) ও ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিল (ডিএসইসি) সংহতি প্রকাশ করে। কর্মসূচি সঞ্চালনা করেন কালের কণ্ঠের অতিরিক্ত বার্তা সম্পাদক আজাদুর রহমান চন্দন।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ আরও বলেন, ‘ন্যায্য দাবি আদায়ে কালের কণ্ঠের বঞ্চিত সাংবাদিকরা প্রয়োজনে রাজপথে অবরোধ করবে। সাংবাদিকদের একটু কষ্ট হলেও তারা তাদের ন্যায্য দাবি আদায় করেই ছাড়বে।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৬ মাস ধরে বিনা বেতনে ছুটিতে রাখা কর্মীদের ছুটিকালীন বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করে তাদের কাজে যোগদানের সুযোগ দিতে হবে অথবা আইনানুগভাবে চাকরির অবসান ঘটাতে হবে। কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে এ দাবি না মানলে প্রয়োজনে কালের কণ্ঠ অফিস তথা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সামনের সড়ক বন্ধ করে তাদের অবরোধ করা হবে।’
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সহ-সভাপতি আজমল হক হেলাল কর্মসূচিতে বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই, কালের কণ্ঠের মালিকদের এই স্বেচ্ছাচারিতার শেষ কোথায়? তাদের অর্থশক্তি আছে, আর সাংবাদিকদের হাতে আছে কলম। পেশিশক্তির চেয়ে কলমের জোর বেশি সেটিই সাংবাদিকরা প্রমাণ করবে।’
আগামী সাতদিনের মধ্যে সাংবাদিকদের সব ধরনের পাওনা বুঝিয়ে দিতে কালের কণ্ঠের মালিকপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান আজমল হক হেলাল।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি এম এ কুদ্দুস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খাইরুল আলম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য এম শাজাহান, হামিদ মোহাম্মদ জসিম ও ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কবীর আলমগীর।
কালের কণ্ঠ’র অতিরিক্ত বার্তা সম্পাদক আজাদুর রহমান চন্দন, বিশেষ প্রতিনিধি আশরাফ-উল-আলমসহ ৩৪ জন সাংবাদিক ও কর্মীকে গতবছর ১০ জুন মহামারিজনিত ‘লকডাউনের’ মধ্যে এক যোগে বিনা বেতনে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি দেওয়া হয়। প্রেস সেকশনেরও বিপুল সংখ্যক কর্মীকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়া হয়। এত দিনেও কাউকে কাজে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া কাছাকাছি সময়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মীকে পদত্যাগ করানো কিংবা চাকরিচ্যুত করা হয়।
বিনা বেতনে ছুটিতে রাখা কয়েকজনকে বিভিন্ন সময়ে পাওনা পরিশোধ করার আশ্বাস দেখিয়ে পদত্যাগ করানো হলেও দীর্ঘদিন কাউকে কোনো পাওনা দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় কালের কণ্ঠ’র চাকরিচ্যুত, পদত্যাগকারী ও বিনা বেতনে অনির্দিষ্টকাল ছুটিতে রাখা সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-ভাতাসহ যাবতীয় পাওনা আদায় এবং বিনা বেতনে বাধ্যতামূলকভাবে অনির্দিষ্টকালের ছুটি বাতিল করার দাবিতে গত ২৮ আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। তখন বিষয়টি সুরাহা করার জন্য কর্তৃপক্ষ আলোচনায় ডাকলে কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়। কিন্তু চাকরিচ্যুত ও পদত্যাগকারী কর্মীদের পাওনা ছয় কিস্তিতে পরিশোধ করার লক্ষ্যে ১৫ সেপ্টেম্বর চেক হস্তান্তর করলেও বিনা বেতনে ছুটির বিষয়টি ফয়সালা করতে গড়িমসি করছে কালের কণ্ঠ কর্তৃপক্ষ। কখনো বলে পরে সুরাহা করা হবে আবার কখনো বলে গত বছর যে তারিখে ছুটি দেওয়া হয়েছে সে দিন থেকে পদত্যাগ গণ্য করে পাওনা নিতে। এ অবস্থায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছিল।
সারাবাংলা/এআই/একে