Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভোট ছাড়াই ১৮ বছর, অবশেষে পদ হারালেন চেয়ারম্যান ইউসুফ!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৫ নভেম্বর ২০২১ ২৩:৩৩

ফাইল ছবি: হাইকোর্ট

ঢাকা: ভোট ছাড়াই কাটিয়ে দিয়েছেন দেড় যুগ। পদ ‍টিকিয়ে রাখতে আদালতে একের পর এক মামলা ঠুকেছেন। তারপরও শেষ রক্ষা হলো না। হাইকোর্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বরখাস্ত করে দেওয়া সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছেন। ফলে ভোলার লালমোহন উপজেলার ৭ নম্বর পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।

বিজ্ঞাপন

আবু ইউসুফ ২০০৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ভোটে জয়ী হওয়ার পর কোনো নির্বাচন ছাড়াই দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এরই মধ্যে তিনি ২০১৯ সালে ২২ সেপ্টেম্বর অনুমতি ছাড়া ভারতের কলকাতা গিয়ে দেশে ফেরেন ওই বছরের ৬ অক্টোবর (ইমিগ্রেশন বিশেষ পুলিশের শাখার তথ্যানুযায়ী)। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি বিধান) বাৎসরিক সভা ও মাসিক সভা করার কথা থাকলেও তা নিয়মিত না করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।

এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি ওই চেয়ারম্যানকে বহিষ্কার করেছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সচিব। সেই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে রিট করেছিলেন সেই বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান। ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রুল জারির পাশাপাশি বহিষ্কারাদেশ তিন মাসের জন্য স্থগিত করে আদেশ দেন হাইকোর্ট। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে আজ রিটটি খারিজ করে দেন আদালত।

আদালতে আজ প্যানেল চেয়ারম্যানের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ মহিদুল কবির। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. মনির হোসেন হাওলাদার। বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান আবু ইউসুফের রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. জাহাঙ্গীর আলম। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

বিজ্ঞাপন

এর ফলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চেয়ারম্যানের বহিষ্কার আদেশ বহাল থাকল হাইকোর্টেও। তাতে ১৮ বছর পরে চেয়ারম্যানের পদ হারালেন আবু ইউসুফ।

প্যানেল চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের অপর আইনজীবী মো. মনির হোসেন জানান, আমরা আদালতের শুনানিতে বলেছি যে, ওই ইউনিয়ন পরিষদে ২০০৩ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তার পরে এখন পর্যন্ত আর কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি এবং চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদন্তে ইতোমধ্যে প্রমাণিতও হয়েছে। এসব বিষয়ে শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট তার বহিষ্কারাদেশ নিয়ে করা রিট খারিজ করে রায় দেন। এই রায়ের ফলে চেয়ারম্যান ওই পদে আর বহাল থাকল না এবং চেয়ারম্যান এখন থেকে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের আইন অনুযায়ী আর কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।

দীর্ঘদিন ওই ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন না হওয়ার কারণ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০০৩ সালে চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে সেখানে কচুয়ার চর ইউপির এক ভোটারকে চর উমেদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে রিট করা হয়। সেই রিটের শুনানি নিয়ে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। কিন্তু সেটির কোনো চূড়ান্ত রায় না হওয়ায় নির্বাচন আয়োজনের মেয়াদ শেষ হতে থাকে আর কেটে যায় বছরের পর। সেখানে তফসিল দেওয়ার পর নির্বাচন শুরু হওয়ার আগে-পরে বিভিন্ন সময়ে পর্যায়ক্রমে ১০ থেকে ১২টি রিট করেন ভোটাররা। সংশ্লিষ্ট এই কোর্টেই চার থেকে পাঁচটি রিট করা হয়। ওই সব রিট পেন্ডিং (অনিষ্পন্ন) থাকার কারণে স্থানীয় সরকার থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠান করেনি।’

আইনজীবী মনির আরও বলেন, ‘এর মধ্যে ওই চেয়ারম্যানের অনিয়ম নিয়ে তাকে বহিষ্কার করে এক ওয়ার্ড মেম্বারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু আবু ইউসুফ তার চেয়ারম্যান পদ ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেন। ওই রিটের জারি করা রুলের পক্ষভুক্ত হন প্যানেল চেয়ারম্যান (ওয়ার্ড মেম্বার) আলমগীর হোসেন। সেই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত রুল খারিজ করে রায় দেন।’

এর আগে, ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি ভোলার লালমোহন উপজেলার ৭ নম্বর পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে আদেশ জারি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। পরে ওই আদেশের বিরুদ্ধে আবু ইউসুফ হাইকোর্টে আবেদন করেন। ওই আবেদন আজ চূড়ান্তভাবে খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম

টপ নিউজ হাইকোর্ট

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর