‘১০ হাজার টাকা দিলাম, দেখি সিআইডি অ্যারেস্ট করে কি না’
২৬ জানুয়ারি ২০২২ ১০:২৫
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হাতে নগদ অর্থসহায়তা তুলে দিয়ে অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল বলেছেন, তোমাদের সাহায্য করলে যদি এরেস্ট হতে হয় হবো। আমি দেখতে চাই সিআইডি এসে আমাকে এরেস্ট করে কী না।
তিনি বলেন, সাবেক শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে সহায়তা করতেই পারে। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীর একটা স্মারকগ্রন্থে লেখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমাকে ১০ হাজার টাকা সম্মানি দেওয়া হয়েছে। আমি এই সম্মানির টাকাটা আন্দোলনের ফান্ডে দিচ্ছি। এবার পারলে আমাকে অ্যারেস্ট করুক।
এর আগে বুধবার (২৬ জানুয়ারি) ভোর চারটার দিকে সিলেট পৌঁছান এই কথাসাহিত্যিক ও শাবিপ্রবির সাবেক অধ্যাপক। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ড. ইয়াছমিন হক। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে তারা সড়ক পথে সিলেটের উদ্দেশে যাত্রা করেন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপকালে জাফর ইকবাল বলেন, আমি যখন দুপুরে কথা বলছিলাম তখন ধরেই নিয়েছিলাম, এখানে যেহেতু এতগুলো মানুষ অনশন করছে, সেখানে একটা মেডিক্যাল টিম আছে। ডাক্তাররা কিছুক্ষণ পরপর এসে দেখছেন, কী অবস্থা। এখানে এসে দেখলাম শুধু যে ডাক্তাররা নেই, তা না। যারা ছিল তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে দূর করে দেওয়া হয়েছে। এর চাইতে বড় অমানবিক ব্যাপার আর কী হতে পারে।
এই ঘটনাকে শিক্ষার্থীদের হত্যার পরিকল্পনা হিসেবে দেখছেন জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, অলমোস্ট ছেলেদের মার্ডার করার একটা সুপরিকল্পনা ছিল। আমি শুনে খুবই দুঃখ পেলাম। আমারপক্ষে যেটুকু সম্ভব, আমি জানাবো উপর মহলকে।
অনশনরত শিক্ষার্থীদের শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ক্যাম্পাসের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমি শুনে অবাক হয়ে গেলাম ওরা নিজেরা ক্যানোলা ঢুকিয়ে স্যালাইন দিচ্ছে। আমার মনে আশা ছিল, কন্টিনিউয়াসলি ঠিকভাবে স্যালাইন দেওয়া হয়, তাহলে ছেলেবেলেগুলা অন্তত স্ট্যাবল থাকবে। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম ওরা স্যালাইন আর নিতে পারছে না। ৮টা জায়গায়, ৯টা জায়গায় ক্যানোলা বসাতে হয়েছে। এখন ক্যানোলা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে স্যালাইন দেওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, এখানে যাদের দেখছি তাদের অবস্থায় যখন এতো খারাপ। তাহলে না জানি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা ওই ২০ জনের কী অবস্থা।
এই পরিস্থিতিকে সুপার মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি হিসেবে মন্তব্য করেন জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা শুয়ে আছে কন্টিনিউয়াসলি। ফুসফুসে পানি চলে আসছে। এটা সুপার মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি। কিন্তু তাদের সাহায্য করা যাবে না। এর থেকে বড় মানবিক বিষয় হতে পারে না।
আরও পড়ুন-
- শাবিপ্রবিতে ফের মশাল মিছিল
- ‘উপাচার্য পদের মূল্য বেশি নাকি শিক্ষার্থীর প্রাণ’
- ভিসির বাসভবনের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন, শিক্ষক সমিতির নিন্দা
- ভিসির বাসভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরিয়ে দিলো শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা
- ৬ষ্ঠ দিনে অনশন— সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেই শাবিপ্রবি কর্তৃপক্ষের
- বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগের ৬টি মোবাইল নম্বর
এ সময় জাফর ইকবালের স্ত্রী ড. ইয়াছমিন হক বলেন, শিক্ষার্থীদের খাওয়ার জায়গা, রান্নার সবাইকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। টং দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতো ছাত্র খাবে কোথা থেকে?
পরে জাফর ইকবালের আশ্বাসে অনশন ভাঙতে রাজি হন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবিপূরণের আশ্বাস দিয়ে জাফর ইকবাল বলেন, উচ্চপর্যায়ে তার আলোচনা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে দাবিপূরণের প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন। এ কারণেই তিনি ক্যাম্পাসে ছুটে এসেছেন। অনশন না ভাঙিয়ে তিনি ফিরে যাবেন না।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ জানুয়ারি শাবিপ্রবি ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। পরে একই স্থানে অনশন শুরু করেন ২৪ শিক্ষার্থী। বাসবভনের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেওয়ায় কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
সারাবাংলা/এএম