মেট্রোরেল পরিচালনায় ১ হাজার কোটি টাকা চায় ডিএমটিসিএল
১৭ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:৫৭
ঢাকা: ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করবে দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক গণপরিবহন মেট্রোরেল। শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার পথে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহনের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এর আগেই মেট্রোরেল পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারের কাছে ১ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি চেয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষ। তাদের যুক্তি, প্রতিদিন মেট্রো পরিচালনায় যে পরিমানে খরচ হবে টিকিট বিক্রি করে সে ব্যয় মেটানো সম্ভব নয়। সেজন্য এক বছর খরচের জন্য টাকা চাওয়া হয়েছে। তবে এখনও সে প্রস্তাবে সায় দেয়নি অর্থ মন্ত্রণালয়।
এদিকে চলতি মাসে মেট্রোরেল উদ্বোধনের জন্য চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
রাজধানীর যানজট কমানোর পাশাপাশি দ্রুত যাতায়াতের উদ্দেশ্যে মেট্রোরেল প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১২ সালে। এ লক্ষ্যে ২০১৩ সালে জাপান সরকারের প্রতিষ্ঠান জাইকার সঙ্গে ঋণচুক্তি করে সরকার। এরপর সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা প্রণয়ন শেষে কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। উড়াল ও পাতাল মিলিয়ে মোট ৬ ধাপে প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু হয়। এরমধ্যে এমআরটি লাইন-৬, এমআরটি লাইন-১, এমআরটি লাইন-৫ এ দুই রুট রয়েছে নর্দান ও সাউদার্ন, এমআরটি লাইন-২, এমআরটি লাইন-৪।
উত্তরা এলাকার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেল ডিপো নির্মাণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। এমআরটি লাইন-৬ এর আওতায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে আর দ্বিতীয় ধাপে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে চালুর কথা রয়েছে। আর তার পরে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত বাস্তবায়ন করার কথা।
বর্তমানে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত কাজ চলমান। মোট ২০.১০ কিলোমিটার রেলপথের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার পথের কাজ শেষ করে চলতি ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, উদ্বোধনের পর পরই পুরোদমে মেট্রোরের চালানো হবে না। প্রথম দিকে সকাল ও বিকাল চলবে। এরপর ধীরে ধীরে ট্রিপ বাড়তে থাকবে। এই সময়ে মেট্রোরেল পরিচালনায় যে পরিমান খরচ হবে তা টিকিট বিক্রি করে উপার্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে এ প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে। বিপুল বিনিয়োগ করে গড়ে তোলা বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল পরিচালন এবং ব্যবস্থাপনা বা রক্ষণাবেক্ষণেও মোটা অংকের টাকা খরচ হবে। যা এখনই টিকিট বিক্রি করে মেটানো সম্ভব নয়। এমন প্রেক্ষাপটে বাণিজ্যিকভাবে চলাচল শুরুর আগেই পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় নির্বাহের জন্য এক বছরের জন্য এককালীন ১ হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রস্তাবটিতে বিস্তারিত কিছু উল্লেখ না থাকায় এটি পুনরায় বিস্তারিত উল্লেখ করে নিয়ে আসার জন্য বলা হয়েছে।’
ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোরেল পরিচালনার জন্য কোনো বাজেট রাখা হয়নি। যে কারণে এক বছরের জন্য পরিচালন ব্যয় চাওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, চলতি ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে উদ্বোধন করা হবে মেট্রোরেল। ওইদিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এই উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যতটুকু চালু হচ্ছে সে পথে মোট ৯টি স্টেশন পরবে। এই ৯ স্টেশনের কাজই শেষ। এখন শুধু মিরপুর এলাকায় দু’টি স্টেশনের সিঁড়ি ও এস্কেলেটরের কিছু কাজ চলমান। এগুলো উদ্বোধনের আগেই শেষ করা হবে। পাশাপাশি এই পথে চালু হতে যাওয়া দশটি ট্রেনই নিয়মিত যাত্রীবিহীন ট্রায়াল দিচ্ছে। এদিকে মেট্রোলের পরিচালনায় থাকবে মোট ২৭৪ জন কর্মী। এদের মধ্যে ট্রেনচালক রয়েছেন ২৪ জন, স্টেশন নিয়ন্ত্রক রয়েছেন ৫৮ জন। এদের মধ্যে চার জন নারী। ট্রেন পুরোদমে চালু হলে আরও জনবলের প্রয়োজন হবে। সে লক্ষ্যে এরইমধ্যে ৪০০ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল স্থাপনে চলমান এ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিলো ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এরপর কমলাপুর পর্যন্ত যুক্ত হওয়ায় এর ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায়। এরমধ্যে জাইকা ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা দিচ্ছে আর সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করবে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।
মেট্রোরেল সংক্রান্ত আরও সংবাদ:
মেট্রোরেলের ভাড়া কিলোমিটারে ৫ টাকা
চট্টগ্রামেও চলবে মেট্রোরেল, হচ্ছে ট্রান্সপোর্ট মাস্টারপ্ল্যান
মেট্রোরেলের যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাবে বিআরটিসি’র বাস
মেট্রোরেলে যাত্রী পরিবহন এ মাসেই, চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
মেট্রোরেলের টিকিট সংগ্রহ এবং যাতায়াত যেভাবে
মেট্রোরেলে যাতায়াতের নিয়ম জানা যাবে এমইআইসি থেকে
মেট্রোরেলকে কেন্দ্র করে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনা
সড়ক থেকে সরছে মেট্রোর নির্মাণসামগ্রী, স্বস্তিতে নগরবাসী
রাত বারোটা পর্যন্ত ১০ মিনিট পর পর চলবে মেট্রোরেল
মেট্রোরেলের উত্তরা-আগারগাঁও পথে অগ্রগতি ৯৭.৬০ শতাংশ
যাত্রীদের মেট্রোরেলে চলাচলের ধারণা দিতে ‘মেট্রোগার্ল’ উদ্যোগ
২০৩০ সালের মধ্যে প্রস্তুত হচ্ছে আরও তিন মেট্রোলাইন
১০০ কিলোমিটার গতিতে ছুটবে বিদ্যুৎচালিত মেট্রোরেল
যানজটে নাকাল নগরীতে মুক্তির আনন্দ দেবে মেট্রোরেল
সারাবাংলা/জেআর/এমও
অগ্রযাত্রার নতুন সঙ্গী ডিএমটিসিএল নাকাল নগরী বৈদ্যুতিক গণপরিবহন মেট্রোরেল যানজট