Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শুরুতে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল, মতিঝিল যাবে এক বছর পর

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৮ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:১০

ঢাকা: ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করবে দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক গণপরিবহন মেট্রোরেল। শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার পথে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহনের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। বাকি অংশ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত কাজ শেষ হতে সময় লাগবে আরও এক বছর। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী ২০২৩ সালের ডিসেম্বর নাগাদ এই অংশের উদ্বোধনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ এগিয়ে চলছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে চলতি মাসে মেট্রোরেল উদ্বোধনের জন্য চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

রাজধানীর যানজট কমানোর পাশাপাশি দ্রুত যাতায়াতের উদ্দেশ্যে মেট্রোরেল প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১২ সালে। এ লক্ষ্যে ২০১৩ সালে জাপান সরকারের প্রতিষ্ঠান জাইকার সঙ্গে ঋনচুক্তি করে সরকার। এরপর সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা প্রণয়ন শেষে কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। উড়াল ও পাতাল মিলিয়ে মোট ৬ ধাপে প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু হয়।

এরমধ্যে এমআরটি লাইন-৬, এমআরটি লাইন-১, এমআরটি লাইন-৫ এ দুই রুট রয়েছে নর্দান ও সাউদার্ন, এমআরটি লাইন-২, এমআরটি লাইন-৪। উত্তরা এলাকার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেল ডিপো নির্মাণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ভৌত অবকাঠামো নির্মানের কাজ। এমআরটি লাইন-৬ এর আওতায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল পথের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে। এটি নির্মানাধীন মেট্রোরেল পথের প্রথম অংশ।

আগারগাঁওয়ের কিছু সরকারি অফিস ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাদে মেট্রোরেল পথের এ অংশের প্রায় পুরোটা জুড়েই আবাসিক এলাকা। অন্যদিকে মেট্রোরেলের শুরুর যে স্টেশন উত্তরার দিয়াবাড়িতে। ফলে এই অংশে মানুষের যাতায়াত বা যাত্রী সংখ্যা কেমন হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

আর দ্বিতীয় অংশ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পড়েছে ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, শাহবাগ হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত। যার পুরোটাই অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক এলাকা। যা এখনি চালু হচ্ছে না। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে চালুর কথা রয়েছে। ডিএমটিসিএল’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অংশের অগ্রগতি ৮৫.৭৬ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ চালুর মধ্য দিয়ে ডিএমটিসিএলের মেট্রোরেলের পরিচালন সক্ষমতার অনুশীলন হবে। কিন্তু এই অংশটি আপাতত কাঙ্ক্ষিত যাত্রীসেবা এবং যানজট নিরসনে সেভাবে ভূমিকা রাখতে পারবে না। এই সুবিধা পেতে পুরো মেট্রোরেল চালুর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক জানান, রাজধানীর ফার্মগেট, শাহবাগ বা মতিঝিল এসকল এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, আদালত, বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড থাকায় বেশিরভাগ মানুষের গন্তব্য হবে ওই দিকেই। যে কারণে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত বেশি যাত্রীদের চাপ হয়তো থাকবে না শুরুতে।

প্রাথমিক পরিকল্পনায় উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১০ কিলোমিটার নির্মাণের কথা ছিলো। পরে সংশোধন করে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১.১৬ কিলোমিটার বাড়ানো হয়। এমআরটি লাইন-৬ এর আওতায় এই অংশের কাজ শুরু করতে চলতি বছরের ২৮ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে সরকার। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে এই অংশের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে পুরো অংশ চালুর আগ পর্যন্ত মেট্রোরেলের যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছানো হবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাসে। এর জন্য বিআরটিসির সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে ডিএমটিসিএল। এই চুক্তির আওতায় আগারগাঁও স্টেশন থেকে নেমে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, মতিঝিল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে শুরুতে ৫০টি বাস দেবে বিআরটিসি।

প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুরুতে আমরা মতিঝিল পর্যন্ত ৫০টি গাড়ি দিচ্ছি। এরইমধ্যে ওইসব গাড়ি যাত্রী পরিবহনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাত্রী সংখ্যা বাড়লে গাড়ীর সংখ্যাও বাড়িয়ে দেওয়া হবে।’ একই ধরনের বাস থাকবে উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকেও থাকবে বলেও জানান তিনি।

সবশেষ তথ্যানুযায়ী, চলতি ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে উদ্বোধন করা হবে মেট্রোরেল। ওইদিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যতটুকু চালু হচ্ছে সে পথে মোট ৯টি স্টেশন পরবে। এই ৯ স্টেশনের কাজই শেষ। এখন শুধু মিরপুর এলাকায় দু’টি স্টেশনের সিঁড়ি ও এস্কেলেটরের কিছু কাজ চলমান। এগুলো উদ্বোধনের আগেই শেষ করা হবে। পাশাপাশি এই পথে চালু হতে যাওয়া দশটি ট্রেনই নিয়মিত যাত্রীবিহন ট্রায়াল দিচ্ছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল স্থাপনে চলমান এ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিলো ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এরপর কমলাপুর পর্যন্ত যুক্ত হওয়ায় এর ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায়। এরমধ্যে জাইকা ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা দিচ্ছে আর সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করবে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।

মেট্রোরেল সংক্রান্ত আরও সংবাদ:
মেট্রোরেলের ভাড়া কিলোমিটারে ৫ টাকা 
চট্টগ্রামেও চলবে মেট্রোরেল, হচ্ছে ট্রান্সপোর্ট মাস্টারপ্ল্যান
মেট্রোরেলের যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাবে বিআরটিসি’র বাস

মেট্রোরেলে যাত্রী পরিবহন এ মাসেই, চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
মেট্রোরেলের টিকিট সংগ্রহ এবং যাতায়াত যেভাবে
মেট্রোরেলে যাতায়াতের নিয়ম জানা যাবে এমইআইসি থেকে 
মেট্রোরেলকে কেন্দ্র করে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনা 
সড়ক থেকে সরছে মেট্রোর নির্মাণসামগ্রী, স্বস্তিতে নগরবাসী
রাত বারোটা পর্যন্ত ১০ মিনিট পর পর চলবে মেট্রোরেল
মেট্রোরেলের উত্তরা-আগারগাঁও পথে অগ্রগতি ৯৭.৬০ শতাংশ
যাত্রীদের মেট্রোরেলে চলাচলের ধারণা দিতে ‘মেট্রোগার্ল’ উদ্যোগ 
২০৩০ সালের মধ্যে প্রস্তুত হচ্ছে আরও তিন মেট্রোলাইন
১০০ কিলোমিটার গতিতে ছুটবে বিদ্যুৎচালিত মেট্রোরেল
যানজটে নাকাল নগরীতে মুক্তির আনন্দ দেবে মেট্রোরেল
মেট্রোরেল পরিচালনায় ১ হাজার কোটি টাকা চায় ডিএমটিসিএল

সারাবাংলা/জেআর/এমও

অগ্রযাত্রার নতুন সঙ্গী আগারগাঁও ডিএমটিসিএল নাকাল নগরী বৈদ্যুতিক গণপরিবহন মতিঝিল মেট্রোরেল যানজট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর