Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রেসক্লাব-মতিঝিলে মেট্রোরেলের ‘দুর্ভোগ’ সহ্য করতে হবে আরও ১ বছর

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:৫৫

ঢাকা: রাজধানীর প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় একটার সঙ্গে একটা বাস লেগে আছে। কখনও কখনও ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও গাড়ির নড়াচড়া থাকে না। এরমধ্যে একটু ফাঁকা পেলেই তাতে ঢুকে পড়ে রিকশা, মোটরসাইকেল। সবারই আগে যাওয়া চাই। আর এ নিয়ে প্রতিদিনই তর্কে জড়িয়ে পড়েন যাত্রী-চালকরা। একদিকে প্রেসক্লাবের সামনের অংশে নানা সংগঠনের কর্মসূচি, অন্যদিকে মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় একপাশ দিয়ে গাড়ি চলাচল করে। যে কারণে প্রতিদিনই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে ঢাকা ম্যাস ট্রানসিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই অংশের কাজ শেষ করতে আরও এক বছর সময় লাগবে। তাই আপাতত এই সড়কের ভোগান্তি মাথায় নিয়েই চলতে হবে এ পথের যাত্রীদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাইকোর্টের সামনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব হয়ে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত মেট্রোরেলের দুই স্টেশনের কাজ চলমান। যে কারণে নিচের সড়কের একাংশ বেশিরভাগ সময় বন্ধ রাখতে হয়। আর খোলা থাকা রাস্তায় গাড়ির চাপ থাকে প্রচুর। গাড়ি চালকরা জানান, এটুকু রাস্তা পার হতে ঘন্টা পার হয়ে যায়।

বিকল্প বাসের চালক নাসির উদ্দীন বলেন, ‘টানা তিন বছর আগারগাঁও সড়কে এই দুর্ভোগ পার হয়ে আসছি। একটা দূর হয়েছে এখন এই পথের কাজ শেষ হলেও বাঁচি।’

যাত্রীরা বলেন, ‘আগারগাঁওয়ের মতো এই অংশের কাজও দ্রুত শেষ করা উচিৎ। এই পথে বাসের পাশাপাশি রিকশার চলাচল বেশি।’

রিকশাচালক সালেক বলেন, ‘এই পথে না পারতে ঢুকি না। একবার কোনো কারণে ঢুকে গেলে বের হতে অনেক সময় লেগে যায়। কোনো যাত্রী এদিকে আসতে চাইলেও রিকশায় তুলি না। কারণ সারাদিনের ইনকাম মাটি হয়ে যায়।’

যানজট কমিয়ে মানুষের যাতায়াত সহজ ও দ্রুত করার লক্ষ্যে বিশ্বের উন্নত দেশের মতো রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগে ২০১২ সালে সায় দেয় সরকার। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী মোট ৬ ধাপে মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। সে পরিকল্পনার প্রথম ধাপে গঠন করা হয় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড-ডিএমটিসিএল। উড়াল ও পাতাল রেলপথ মিলিয়ে ৬ ধাপে রয়েছে, এমআরটি লাইন-৬, এমআরটি লাইন-১, এমআরটি লাইন-৫ এ দুই রুট রয়েছে নর্দান ও সাউদার্ন, এমআরটি লাইন-২, এমআরটি লাইন-৪।

বিজ্ঞাপন

এরমধ্যে এমআরটি লাইন-৬ দিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। রাজধানীর উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মোট ২১.২৬ কিলোমিটার মেট্রোরেল পথ নির্মাণ হচ্ছে এমআরটি লাইন-৬ এর আওতায়। এর প্রথম ধাপে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার পথ চালু হচ্ছে এ মাসেই। আগামী ২৮ ডিসেম্বর এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর ২৯ ডিসেম্বর থেকে যাত্রী নিয়ে ছুটবে মেট্রোরেল। সে লক্ষ্যে দিন রাত চলছে উদ্বোধনের প্রস্তুতি।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) তথ্যানুযায়ী, এই অংশের কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৯৭.৬০ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উদ্বোধনের আগেই বাকি কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। এদিকে এগিয়ে চলছে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের কাজও। এই অংশের পূর্ত কাজে অগ্রগতি ৮৫.৭৬ শতাংশ। এমআরটি লাইন-৬ এর প্যাকেজ-৫ এ আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ৩.১৯৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও তিনটি মেট্রো স্টেশন নির্মাণ। এই পথে ভায়াডাক্ট ও স্টেশনের প্লাটফর্ম নির্মাণ কাজ শেষ। এই প্যাকেজের আওতায় স্টেশনগুলোর এন্ট্রি, এক্সিট, মেকানিক্যাল, ইলেক্ট্রিক্যাল ও পাম্বিং কাজ চলমান। কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট স্টেশনে রুফ শিট স্থাপনের কাজ চলমান।

গত নভেম্বর পর্যন্ত এই অংশের কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৯০.২৪ শতাংশ। আর প্যাকেজ-৬ এ কারওয়ান বাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৪.৪২২ কিলোমিটার পথে ভায়াডাক্ট ও ৪টি স্টেশন নির্মাণের কাজ শেষ। এই প্যাকেজের আওতায় স্টেশনগুলোর এন্ট্রি, এক্সিট, মেকানিক্যাল, ইলেক্ট্রিক্যাল ও পাম্বিং কাজ চলমান। শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ সচিবালয় স্টেশনের রুফ শিট স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। আর মতিঝিল স্টেশনের রুফশিট স্থাপনের কাজ চলমান। এই অংশের কাজের অগ্রগতি ৯০.৭৪ শতাংশ। আর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৮৫.৮৭ শতাংশ। এই অংশে ৭টি স্টেশন নির্মানাধীন। আর কমলাপুর পর্যন্ত নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে আরও একটি স্টেশন বাড়বে। সব মিলিয়ে এই প্যাকেজে মোট মেট্রোস্টেশন হবে ১৭টি।

প্যাকেজ-৭ এর আওতায় ইলেক্ট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সংগ্রহ ও সরবরাহের অগ্রগতি ৯০.১৭ শতাংশ। আর প্যাকেজ-৮ এর আওতায় রেল কোচ ও ডিপো ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ। ডিএমটিসিএলের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, এই প্যাকেজের আওতায় ২৪টি ট্রেন সেটের মধ্যে ১৯টি ডিপোতে পৌঁছেছে। এই মেট্রোসেটের কারিগরী পরীক্ষা, ফাংশনাল টেস্ট ও পারফরমেন্স টেস্ট চলছে। এই প্যাকেজের অগ্রগতি ৮৪.৫০ শতাংশ। ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।

ডিএমটিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক বলেন, ‘এই অংশের কাজও এগিয়ে চলছে। আমাদের লক্ষ্য আগামী বছরের ডিসেম্বরে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রেলপথ খুলে দেওয়া। আর সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ এগিয়ে চলছে। আমরা জানি সাধারণ মানুষের অনেক কষ্ট হয় চলাচলে। তবে মেট্রো চালু হলে যানজটের ভোগান্তি থাকবে না।’

ডিএমটিসিএলের ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, এমআরটি লাইন-৬ এর কাজ শেষ হবে ২০২৫ সালে। এমআরটি লাইন-১ এর কাজ শেষ হবে ২০২৬ সালে। আর এমআরটি লাইন-৫ এর নর্দানের কাজ শেষ হবে ২০২৮ সালে। আর এমআরটি লাইন-৫ এর সাউদার্ন এবং লাইন-২ ও ৪ এর আওতায় উড়াল ও পাতাল রেলের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা ২০৩০ সালে।

মেট্রোরেল সংক্রান্ত আরও সংবাদ:

সারাবাংলা/জেআর/এমও

অগ্রযাত্রার নতুন সঙ্গী ডিএমটিসিএল প্রেসক্লাব-মতিঝিল মেট্রোর যাত্রী মেট্রোরেল মেট্রোরেলের দুর্ভোগ যাত্রী চলাচল

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর