Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভোটের মাঠে ১৮৯৬ প্রার্থী, প্রচারের ঢোলে বাড়ি পড়বে আজ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৪:২৫

ঢাকা: মনোনয়নপত্র দাখিলের পর যাচাই-বাছাই শেষ। শেষ বাছাইয়ে বাতিল প্রার্থীদের আপিল নিষ্পত্তির পালা। নির্বাচন কমিশন (ইসি) যাদের বৈধ ঘোষণা করেছে, তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়ও শেষ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লড়াই, সেই লড়াই শেষ পর্যন্ত মাঠে গড়াচ্ছে। প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে প্রার্থীদের প্রচারে নামার যে অপেক্ষা, সেই অপেক্ষার যে অবসান ঘটতে যাচ্ছে।

আজ সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসি ঘোষিত বৈধ প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেবেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। ফলে ইসি যে এক হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থীকে বৈধ ঘোষণা করেছেন, তারা প্রতীক নিয়ে প্রচারে নেমে পড়বেন আজই।

বিজ্ঞাপন

এদিকে নির্বাচন কমিশন থেকে চূড়ান্ত বৈধতা না পাওয়া অনেক প্রার্থীই উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। উচ্চ আদালত শুনানি নিয়ে তাদের আবেদনের পক্ষে রায় দিলে তারা প্রার্থিতা ফিরে পাবেন। তখন নির্বাচন কমিশন প্রতীক বরাদ্দ দিলে প্রচারে নামতে পারবেন তারাও। উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তির আগ পর্যন্ত আপাতত ভোটের মাঠে থাকছেন এক হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থীই।

জাপার প্রার্থী ২৮৩, আওয়ামী লীগের ২৬৩

গতকাল রোববার ছিল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসি ঘোষিত বৈধ প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এদিন আওয়ামী লীগ তাদের জোট সঙ্গী ও মিত্র দলগুলোর জন্য নিজ দলের প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। বেশ কিছু আসনে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী ছিল একাধিক। শেষ দিনে একজনকে রেখে বাকিদের এসব আসন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানো হয়েছে। আবার কয়েকজন একাধিক আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। তারাও একটি আসন রেখে বাকিগুলো থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

রোববার দিন শেষে নির্বাচন কমিশন থেকে যে হিসাব পাওয়া গেছে সে অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৮৩টি আসনে প্রার্থী থাকছে জাতীয় পার্টির। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকছে ২৬৩ আসনে। এদিন জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা হওয়া আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

আরও পড়ুন-

রোববার জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, যাই কিছু হোক না কেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে থাকবে। ২৮৩টি আসনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন দলটির প্রার্থীরা।

চুন্নু বলেন, আমরা নির্বাচন করছি ২৮৩টি আসনে। সেখানে অন্য দলের প্রার্থী আছে, স্বতন্ত্র আছে কিংবা বিদ্রোহী প্রার্থী আছে— এগুলো আমরা চিন্তা করছি না। আমরা যুদ্ধ করে যান, খেলে যাব। কোনো কোনো আসনের বিষয়ে সমঝোতা হয়ে থাকতে পারে, কৌশলগত কারণে এখন সেটি বলছি না।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ইসিতে গিয়ে দলের প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নথিপত্র জমা দেন। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির জন্য ২৬টি আসন ছাড় দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৪ দলের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ছয়টি আসন। পাঁচ আসনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এই ৩৭টি আসন বাদে বাকি ২৬৩টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ভোট করবেন।

আওয়ামী লীগের সমঝোতায় ৪ দল

ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতা হওয়ায় ২৫টি আসন থেকে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আর জাতীয় পার্টির সেলিম ওসমানের নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আগে থেকেই প্রার্থী দেওয়া ছিল না। ফলে এই ২৬টি আসন আওয়ামী লীগ ছাড় দিয়েছে জাপার জন্য।

এদিকে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর জন্য আওয়ামী লীগ আসন ছেড়ে দিয়েছে ছয়টি। এর মধ্যে তিনটি আসন পেয়েছে শেখ হাসিনা সরকারেরেই সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। এ ছাড়া দুটি আসন পেয়েছে হাসিনা সরকারেরই আরেক সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। ষষ্ঠ আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে। তিনিও ১৯৯৬ সালের শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী ছিলেন।

সমঝোতায় বাদ পড়ল যারা

একই ১৪ দলীয় জোটের তরিকত ফেডারেশন ও সাম্যবাদী দল এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আসন প্রত্যাশা করেছিল। শেষ পর্যন্ত তাদের জন্য কোনো আসন ছেড়ে দেয়নি আওয়ামী লীগ। গতবার নির্বাচনি কৌশল হিসেবে সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশের জন্যও আসন ছেড়েছিল আওয়ামী লীগ। এবার তাদের ভাগ্যে কিছু জোটেনি। এর মধ্যে সাম্যবাদী দলের সভাপতি দিলীপ বড়ুয়া নিজের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বাকি দুটি দলের প্রার্থীরা নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করবেন।

এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছুদিন আগেই ইসির নিবন্ধন পাওয়া তিনটি দল তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) যথেষ্ট আলোচনায় ছিল। প্রথম দুটি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপি ছেড়ে আসা নেতারা। ধারণা করা হচ্ছিল, সরকারের কাছ থেকে নির্বাচনে আসনসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার বিনিময়েই এসব দল ভোটে আসার প্রস্তুতি নিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিত এসব দলের কোনোটির জন্যই আওয়ামী লীগ কোনো আসন ছাড় দেয়নি।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ‘উৎসব’

দেশের বাকি সংসদ নির্বাচনগুলোর সঙ্গে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি বড় পার্থক্য হলো স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উপস্থিতিতে। এর আগেও সব নির্বাচনেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর উপস্থিতি ছিল। তাদের অনেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা হলেও দলের মনোনয়ন না পেয়ে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধেই ভোটে দাঁড়িয়েছেন। এ ধরনের প্রার্থীরা ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হিসেবেই পরিচিত। সাধারণভাবে দলের কেউ ‘বিদ্রোহী’ হলে তার বিরুদ্ধে দল কঠোর অবস্থান নেয়।

এবারের নির্বাচন এদিক থেকে ব্যতিক্রম যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের দলের নেতাদের রীতিমতো স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহ দিয়েছে। আর সেই উৎসাহ পেয়েই এবারের নির্বাচনে মোট প্রার্থীর বড় একটি অংশই স্বতন্ত্র প্রার্থী। প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে যে এক হাজার ৮৯৬ প্রার্থীকে ইসি বৈধ ঘোষণা করেছে তার মধ্যে স্বতন্ত্র কতজন, তা রোববার রাত পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেনি ইসি। তবে মনোনয়নপত্র জমা শেষে হিসাব বলছিল, ৭৪৭ জন তধা মোট মনোনয়নপত্রের ২৭ শতাংশের কিছু বেশি ছিল স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। শেষ পর্যন্ত একই অনুপাত বজায় থাকতে পারে ভোটের চূড়ান্ত লড়াইয়েও।

এর আগে কখনোই এক বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে দেখা যায়নি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও যেমন মোট এক হাজার ৮৬৫ জন প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ১২৯ জন, যা ৭ শতাংশের কিছু কম। আবার নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এক হাজার ৫৬৭ প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র ছিলেন ১৫১ জন, যা ১০ শতাংশের কম। কিন্তু মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়কার অনুপাত প্রায় বজায় থাকলে চূড়ান্ত ভোটেও স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবেন ২৫ শতাংশের বেশি বা কাছাকাছি।

স্বতন্ত্রে আওয়ামী লীগের স্বস্তি, শরিক-সঙ্গীদের অস্বস্তি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি বর্জন করেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনও বিএনপি বর্জন করেছিল। ওই নির্বাচনে দেড় শতাধিক আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলে থাকেন।

বিএনপি না থাকলেও নির্বাচন নিয়ে যেন প্রশ্ন না ওঠে, নির্বাচন যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়, সেটি নিশ্চিত করতেই আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাদেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে বলেছে। বিএনপির অবর্তমানে নৌকার সবচেয়ে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় প্রার্থীরাও যেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদে যাওয়ার সুযোগ না পান, সেটি নিশ্চিত করতে খোদ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের নেতাদের স্বতন্ত্র হতে উৎসাহ দিয়েছেন। বলেছেন, জনপ্রিয়তায় যিনি এগিয়ে থাকবেন তিনিই যেন নির্বাচিত হয়ে সংসদে প্রবেশ করেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে এমন কৌশলের কারণে দল মনোনীত প্রার্থীদের কেউ কেউ নাখোশ হলেও আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড এই কৌশলের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। হাইকমান্ড বলছে, দলের নেতাদের যারা নিজেদের জনপ্রিয় বলে দাবি করেন তারা এর মাধ্যমে নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ পাবেন। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জিতলেও দিন শেষে তারা আওয়ামী লীগেরই নেতা। ফলে এটি দলের শক্তিমত্তারই পরিচায়ক হবে। অন্যদিকে স্বতন্ত্ররা হেরে গেলে এবং দল মনোনীত প্রার্থী জিতে গেলে এটিই প্রমাণ হবে যে দল সঠিক প্রার্থীকেই বাছাই করেছে।

আওয়ামী লীগ দল হিসেবে এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে স্বস্তি পেলেও তাদের জোটসঙ্গী ও মিত্র দলগুলো খুব একটা খুশি হতে পারেনি। ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো তো বটেই, জাতীয় পার্টিও তাদের সঙ্গে সমঝোতা হওয়া আসনে আওয়ামী লীগ নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রত্যাহারে ক্ষমতাসীন দলটির হস্তক্ষেপ কামনা করেছিল। এ নিয়ে সরাসরি না হলেও গণমাধ্যমে কথা বলেছিলেন জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের একাধিক নেতা। তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্রদের না ঘাঁটানোর সিদ্ধান্তে অটল থেকেছে।

এর আগে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছি। সে অনুযায়ী দলীয় প্রার্থীদের প্রত্যাহারও করেছি। কিন্তু স্বতন্ত্ররা তো স্বতন্ত্রই, তাদের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই। আমার আসনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে। আমার নিজেরও জয়ের গ্যারান্টি নেই। স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতে গেলে সেটাই মেনে নিতে হবে। ফলে যাদের সঙ্গে আসন সমঝোতা হয়েছে, তাদেরও জয়ের গ্যারান্টি দিতে পারব না।

রোববার আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াকেও ইসিতে জিজ্ঞাসা করা হয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে। তিনিও সাফ বলে দেন, ‘আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের বিষয়ে ইসিতে এসেছি দলের পক্ষ থেকে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে দলের নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’

প্রচারে নামছেন প্রার্থীরা, ভোট জমবে?

বিএনপি ও এর বেশিরভাগ সমমনা দল শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসেনি। নির্বাচন কমিশন থেকে চূড়ান্ত হিসাব না পাওয়ায় সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না কতটি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তবে মনোনয়নপত্র দাখিল ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের যতটুকু তথ্য পাওয়া গেছে তাতে ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৫ থেকে ২৮টি দল এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।

এর আগে ২০১৪ সালে বিএনপির বর্জন করা নির্বাচনটি বাদ দিলে এর আগের নবম সংসদ নির্বাচনে ৩৮টি এবং গতবারের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩৯টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। সে হিসাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলের সংখ্যা এবার কম। তবে অর্ধেকেরও বেশি রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অংশগ্রহণের কল্যাণে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকেই।

এ পরিস্থিতিতেই নির্বাচনি তফসিল অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তারা বৈধ প্রার্থীদের মধ্যে আজ সোমবার নির্বাচনি প্রতীক বরাদ্দ দেবেন। এর মধ্য দিয়েই সারাদেশে প্রার্থীরা নির্বাচনি প্রচারও শুরুর অনুমতি পাবেন। প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে আজ থেকেই তারা নামতে পারবেন প্রচারে।

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া খবর বলছে, এরই মধ্যে বৈধ ঘোষিত প্রার্থীরা তাদের প্রচারের জন্য পোস্টার ছাপানোর কাজ সেরে রেখেছেন, তৈরি করে রেখেছেন ব্যানার-ফেস্টুন। প্রতীক বুঝে পাওয়ার পরপরই দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগানোর কাজ শুরু হবে, মোড়ে মোড়ে ঝুলতে থাকবে ব্যানার-ফেস্টুন।

পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, কুমিল্লা ও ঢাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একাধিক প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, মনোনয়নপত্র শুরুতেই বৈধ ঘোষিত হওয়ায় তারা ভোটের প্রচারের সুবিধার জন্য পোস্টার ছাপিয়ে রেখেছেন, যেন প্রতীক পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রচারে নেমে যেতে পারেন।

অন্যদিকে কয়েকটি আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারাও পোস্টার, ব্যানার ছাপানোর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। তবে প্রতীক আগে থেকে সুনির্দিষ্ট না হওয়ায় তারা ‘ডামি’ ডিজাইন করে রেখেছেন। প্রতীক পাওয়ামাত্রই তারা ডিজাইনে প্রতীকটি বসিয়ে প্রেসে ছাপতে পাঠিয়ে দেবেন। ভোটে অংশ নেওয়া সবাই-ই জমজমাট নির্বাচনই আশা করছেন।

উচ্চ আদালতের আদেশে বাড়তে পারে প্রার্থী

এদিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের কাছে আপিল করে ২৮৫ জন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। তারাও যুক্ত আছেন ইসির দেওয়া এক হাজার ৮৯৬ জনের হিসাবে। তবে যারা ইসিতে আপিল করেও ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের অনেকেই দ্বারস্থ হয়েছেন উচ্চ আদালতের। সেখানে শুনানিতে বিচারপতিদের সন্তুষ্ট করতে পারলে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার সুযোগ থাকছে।

এরই মধ্যে গতকাল রোববার বিচারপতি মো. ইকবাল কবির ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি নিয়ে ছয় প্রার্থীর প্রার্থিতা ফিরিয়ে দিয়েছেন। তারা হলেন— মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে সোহানা তাহমিনা, টাঙ্গাইল-৬ আসনে সৈয়দ মাহমুদুল ইলাহ, মানিকগঞ্জ-২ আসনে মো. জসীম উদ্দিন, লক্ষ্মীপুর-২ আসনে সেলিনা ইসলাম, রাজশাহী-১ আসনে মো. গোলাম রব্বানী এবং বগুড়া-৩ আসনে মো. ফেরদৌস স্বাধীন ফিরোজ। তাদের মধ্যে জসীম উদ্দিন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী। বাকি পাঁচজনই স্বতন্ত্র প্রার্থী।

আদালতে এরকম আরও কতজন আপিল করেছেন তার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে যে কয়জনই আপিল করে থাকুন না কেন, সেই আপিল মঞ্জুর হলে ভোটের মাঠে চূড়ান্ত প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ার সুযোগ থাকছেই।

শেষ পর্যন্ত বৈধ প্রার্থী যারাই হবেন, তফসিল অনুযায়ী তাদের নির্বাচনি প্রচারের সুযোগ থাকছে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। এরপর ৪৮ ঘণ্টার বিরতি শেষে ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ।

সারাবাংলা/টিআর

আওয়ামী লীগ আসন সমঝোতা চূড়ান্ত প্রার্থী জাতীয় পার্টি জাতীয়-নির্বাচন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নির্বাচনি প্রচার প্রতীক বরাদ্দ প্রার্থিতা প্রত্যাহার বৈধ প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার সংসদ নির্বাচন স্বতন্ত্র প্রার্থী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর