ঢাকা: রাজধানীর বেইলি রোডের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুই শিক্ষার্থীর একজন লামিশা ইসলাম। তিনি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত অতিরিক্ত ডিআইজি মো. নাসিরুল ইসলামের মেয়ে বলে ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।
নিহত লামিশা বুয়েটের রসায়ন প্রকৌশল বা কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। বুয়েটের একই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী নাহিয়ান আমিনসহ তিনি বেইলি রোডের ওই অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজের কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁয় এ আগুন লাগে। ঘটনার পর দিন অর্থ্যাৎ শুক্রবার (১ মার্চ) সকালে নিহত লামিশাকে নিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক আইডিতে এক মর্মস্পর্শী পোস্ট দিয়েছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সুদীপ।
বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার লিখেছেন, ‘রাতে আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছিলেন, ‘আমাদের একজন সহকর্মীর মেয়ে মারা গেছেন। পরে জানতে পারি নিহত সেই মেয়েটি আমাদের নাসিরুল স্যারের মেয়ে।’
‘জীবন এত ছোট কেনে, এ ভুবনে?’ শিরোনামে পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা লেখেন- ‘মো. নাসিরুল ইসলাম বিপিএম স্যার অতিরিক্ত ডিআইজি (রিক্রুটমেন্ট অ্যান্ড ক্যারিয়ার প্ল্যানিং-১) হিসেবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত। পুলিশ সার্ভিসে যোগদানের পর হতেই নাসির স্যারকে একজন পেশাদার, নিবেদিত, দক্ষ, চৌকস কর্মকর্তা হিসেবে দেখেছি। বাংলাদেশ পুলিশে পরিবর্তিত পদ্ধতিতে শতভাগ স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা, সততা, জবাবদিহিতা নিশ্চিতপূর্বক ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ পদ্ধতির অন্যতম রূপকার তিনি।
২০১৮ সালে স্যারের সহধর্মিণী শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। স্যারের দুই কন্যা। তারা তখন বয়সে অনেক ছোট ছিল। আত্মজাদ্বয়ের দিকে তাকিয়ে স্যার পুনর্বার বিয়ে করেননি। স্যারের কন্যারা ক্রমান্বয়ে স্বাবলম্বী, আত্মপ্রত্যয়ী, মেধাবী সন্তান হিসেবে স্যারের স্নেহমমতায় বড় হয়ে ওঠে।
রমনা পুলিশ কমপ্লেক্সের শিমুল ভবনের চারতলায় আমাদের বাসা ছিল আর তিনতলায় স্যারের বাসা। মাঝেমধ্যে লিফটে স্যার এবং স্যারের দুই কন্যার সঙ্গে দেখা হতো। একদিন হঠাৎ জানতে পারি স্যারের বড় মেয়ে লামিশা ইসলাম বুয়েটে ভর্তি হয়েছে। শুনে যারপরনাই আনন্দিত হই। মাতৃহীন সন্তানেরা পিতার স্নেহে গর্বিত সন্তান হিসেবে সাফল্যের মুকুট ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি হতে বার্ষিক পুলিশ সপ্তাহ সূচনা হওয়ায় ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে ব্রিফিং শেষ করে জরুরি প্রয়োজনে শিমুল ভবনে যাই। লিফট দিয়ে ওঠার সময় লামিশার সঙ্গে দেখা হয়। তার বুয়েট ভর্তি হওয়া নিয়ে গর্ব অনুভব করতে পারি। তখন ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি মৃত্যু তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
২৯ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সপ্তাহের অংশ হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান চলছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে। হঠাৎ শুনতে পাই বেইলি রোডে বহুতল ভবনের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে এবং নাসির স্যারের কন্যা আটকে পড়েছে। সম্ভবত সে ছাদে আশ্রয় নিয়েছে এবং তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে শুনে স্বস্তিবোধ করি। এরপর অনুষ্ঠান শেষে বাসায় চলে আসি।
এরপর বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সংবাদ দেখার একপর্যায়ে মাননীয় আইজিপি মহোদয়ের ঘটনাস্থল হতে মিডিয়া ব্রিফিং দেখে জানতে পারি, আমাদের এক সহকর্মীর মেয়ে ঐ ভবনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুবরণ করেছেন। তখনও নিশ্চিত ছিলাম না নিহতের পরিচয় নিয়ে।
হঠাৎ বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো পাওয়া দুঃসংবাদে চরম ব্যথিত, বিস্মিত ও স্তম্ভিত হয়ে পড়ি। নাসির স্যারের বড় আত্মজা বুয়েটের কেমিকৌশল শিক্ষার্থী লামিশা ইসলাম মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুবরণ করেছে। তার বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি। স্যার এবং স্যারের ছোট আত্মজার প্রতি গভীর সমবেদনা।
বেইলি রোডের বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪৫ জনের প্রতি গভীর শোকপ্রকাশ এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা পোষণ করছি।’
আরও পড়ুন:
- বেইলি রোডের আগুনে আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিল সরকার
- বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে মৃত বেড়ে ৪৬
- বেইলি রোডে আগুনে মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক
- বেইলি রোডের আগুনে মৃত বেড়ে ৪৫, পরিচয় মিলেছে ৩৯ জনের
- বেইলি রোড বিভীষিকা: ফায়ার সার্ভিসের ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি
- বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে ২ বুয়েট শিক্ষার্থীর মৃত্যু
- বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল, বেইলি রোড থেকে ৪৩ মরদেহ হাসপাতালে
- বেইলি রোডে আগুন: ঢামেকে ১১ মরদেহ, আরও বহু মৃত্যুর শঙ্কা
- ২ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে বেইলি রোডের আগুন
- বেইলি রোডে আগুন: কাঁচ ভেঙে আটকে পড়াদের উদ্ধারের চেষ্টা
- বেইলি রোডে আগুন: ছাদে এখনো অর্ধশত মানুষ
- বেইলি রোডে উদ্ধার কার্যক্রমে যোগ দিয়েছে আনসার-বিজিবি
- বেইলি রোডে ভবনে আগুন, ১৩ জন ঢামেক হাসপাতালে
- নিয়ন্ত্রণে আসেনি বেইলি রোডের আগুন, জীবিতদের উদ্ধার চলছে
- বেইলি রোডে আগুন: ঢামেকে ১১ মরদেহ, আরও বহু মৃত্যুর শঙ্কা