আইনি নোটিশের জবাব মেলেনি, রিট করবেন পা হারানো কৃষ্ণা
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৮:৩২
ঢাকা: ট্রাস্ট পরিবহনের একটি বাসের চাপায় পা হারিয়ে এখনো হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) সহকারী ব্যবস্থাপক (অর্থ) কৃষ্ণা রায় চৌধুরী। ওই বাসের চালক এখন কারাগারে থাকলেও মালিক রয়েছেন জামিনে। বাসের সহকারী গ্রেফতারই হননি। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রতিবেদনও এখনো জমা দিতে পারেনি তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
এদিকে, দুর্ঘটনার পর ট্রাস্ট পরিবহনের কাছে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন কৃষ্ণার স্বামী রাধেশ্যাম চৌধুরী। সেই নোটিশেরও কোনো জবাব মেলেনি। এ পরিস্থিতিতে ক্ষতিপূরণের জন্য উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন রাধেশ্যাম। অবকাশ শেষ হলেই হাইকোর্টে রিট করবেন তিনি।
২৭ আগস্ট রাজধানীর বাংলামোটরে দুর্ঘটনার শিকার হন কৃষ্ণা রায় চৌধুরী। ট্রাস্ট পরিবহনের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাতে উঠে গেলে সেখানে কৃষ্ণার বাম পায়ের হাঁটুর নিচের অংশটি থেঁতলে যায়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল ও পরে পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা তার পা কেটে ফেলতে বাধ্য হন। পরদিন ২৮ আগস্ট সন্ধ্যায় কৃষ্ণা রায়ের স্বামী রাধেশ্যাম বাদী হয়ে বাসটির মালিক, চালক ও হেলপারকে আসামি করে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মামলা দায়ের করেন।
এই মামলার তদন্তের দায়িত্বে আছেন পিবিআই, ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) পুলিশ সুপার বশির আহমেদ। তিনি জানান, বাসটির মালিক বর্তমানে জামিনে ও চালক কারাগারে রয়েছেন।
আরও পড়ুন- ‘মা আর কখনও পায়ে ভর দিয়ে হাঁটবে না’
বশির সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মামলাটির তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। সংশ্লিষ্ট সবাইকে চিঠিও দিয়েছি। আশা করছি খুব শিগগিরই আমরা আমাদের প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।’
তদন্ত প্রতিবেদন এখনো জমা না হওয়ায় স্পষ্টতই ওই দুর্ঘটনার মামলার বিচারকাজ শুরু হতে এখনো ঢের দেরি। এদিকে, এ দুর্ঘটনায় দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন কৃষ্ণা রায় চৌধুরীর স্বামী। তিন দিনের সময় দিয়ে আইনি নোটিশ দেওয়া হলেও তার জবাব মেলেনি এখনো।
আরও পড়ুন- ট্রাস্ট পরিবহনের কাউকেই ধরতে পারেনি পুলিশ
রাধেশ্যাম চৌধুরীর আইনজীবী ইমরান হোসাইন রোমেল সারাবাংলাকে বলেন, গত ৮ সেপ্টেম্বর কৃষ্ণা রায়ের পা হারানোর ঘটনায় দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। ওই নোটিশে বিবাদীদের তিন দিনের সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা ওই সময়ের মধ্যে জবাব না দেওয়ায় আমরা হাই কোর্টে রিট দায়েরের চেষ্টা করেছি। কিন্তু হাইকোর্ট অবকাশে থাকায় রিট দায়েরে দেরি হচ্ছে। অবকাশের পর আদালত খুললেই আমরা রিট দায়ের করব।
কেমন আছেন কৃষ্ণা রায়?
পা হারানো কৃষ্ণা রায় চৌধুরী এখনো চিকিৎসাধীন রাজধানীর শের-ই বাংলা নগরের জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল)। কয়েক দফা অস্ত্রোপচার হয়েছে তার শরীরে। চিকিৎসকরা বলছেন, তার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেকটাই ভালো।
আরও পড়ুন- ‘কে চালাবে আমার সংসার’
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, কৃষ্ণা রায় চৌধুরীর ডান পায়ের কিছুটা মাংস কেটে বাম পায়ে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। আর তাই ডান পায়ে প্লাস্টার করানো হয়েছে। বাম পায়ের ক্ষতস্থানও সেলাই করে রাখা হয়েছে। অসুস্থ মায়ের পাশেই বসে আছেন ছেলে কৌশিক চৌধুরী। আর বোনের সেবায় ব্যস্ত শুক্লা রায় চৌধুরী।
কৃষ্ণা রায় চৌধুরীর বর্তমান শারীরিক অবস্থা নিয়ে পঙ্গু হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রিপন কুমার রায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে কৃষ্ণা রায় চৌধুরী আগের চেয়ে অনেকটা ভালো আছেন। রেগুলার ফলোআপে থাকলে উনি খুব দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে আমরা আশা করছি।’
আরও পড়ুন- কৃষ্ণার পায়ে দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার, দ্রুত বিচার চান চালক-মালিকের
চিকিৎসকরা আশার বাণী শোনালেও কৃষ্ণা বলছেন, তিনি লড়ছেন ব্যাথার সঙ্গে। কৃষ্ণা সারাবাংলাকে বলেন, আর কখনো তো আমার পা ফিরে পাব না। এখানে চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। কয়েক দফা অস্ত্রোপচার হয়েছে। প্রতিদিন ড্রেসিং করা হচ্ছে। এত বেশি ব্যাথা যে মনে হয়, ব্যাথাই বুঝি আমার জীবন।
শারীরের যন্ত্রণার পাশাপাশি এখনো দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের বিচার শুরু না হওয়ার মনোকষ্টও রয়েছে কৃষ্ণার। তিনি বলেন, ‘তাও যদি দেখতে পেতাম আমার এই অবস্থার জন্য যারা দায়ী তারা বিচারের আওতায় এসেছে, তাহলেও হয়তো তবে কিছুটা স্বস্তি পেতাম।’
কৃষ্ণা রায় চৌধুরীর ছেলে কৌশিক চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘মা আর কখনো পায়ে ভর দিয়ে হাঁটবেন না— এ কথা মনে হলে আর কোনো সান্ত্বনা দিয়ে মনকে বোঝাতে পারি না। কিন্তু এ ঘটনার জন্য দায়ী যে বাসচালক, তার বিচার এখনো শুরু হয়নি। বাসের হেলপারকে এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। জানি না, আমার মায়ের জীবনকে এলোমেলো করে দিয়েছে যারা, তাদের বিচার কবে হবে।’
কৃষ্ণা রায় কৃষ্ণা রায় চৌধুরী ট্রাস্ট পরিবহন বাসচাপায় পা হারানো কৃষ্ণা