বিজ্ঞাপন

ট্রাস্ট পরিবহনের কাউকেই ধরতে পারেনি পুলিশ

August 30, 2019 | 1:26 am

এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় গত ২৭ আগস্ট (মঙ্গলবার) ট্রাস্ট পরিবহনের একটি বাসের (ঢাকা মেট্রো-ব ১১-৯১৪৫) চাপায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায় চৌধুরীর বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই ঘটনায় বাসটির মালিক, চালক এবং হেলপারের (চালকের সহকারী) বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি হাতিরঝিল থানা পুলিশের সংশ্লিষ্ট সদস্যরা।

বিজ্ঞাপন

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ট্রাস্ট পরিবহন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটির দেখভাল করে থাকেন। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সেনাবাহিনীর কোনো যোগাযোগ না থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি প্রয়োগ করে থাকে।

সূত্রগুলো বলছে, প্রতিষ্ঠানটি অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে ক্যান্টনমেন্ট রুটের রুট পারমিট জোগাড় করে। ট্রাস্ট পরিবহন অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে এর আগে সায়দাবাদ থেকে ক্যান্টনমেন্টে চলাচলকারী বাসগুলোর রুট পারমিট বাতিল করার ব্যবস্থা করে।

এবার বাসচাপায় বিআইডব্লিউটিসি’র নারী কর্মকর্তার পা বিচ্ছিন্ন

ক্যান্টনমেন্ট থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাত্রী পরিবহনের জন্য ট্রাস্ট পরিবহন রুট পারমিট নিলেও কখনোই মতিঝিল পর্যন্ত যাত্রী সেবা দিত না। কখনো কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারা আবার কখনো শাহবাগে শিশু পার্কের মোড় দিয়ে বাস ঘুড়িয়ে দিত। এতে ক্যান্টনমেন্ট থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলাচলকারী যাত্রীরা প্রতিনিয়তই ভোগান্তির শিকার হত। কিন্তু এই রুটে আর অন্য কোনো পরিবহন প্রতিষ্ঠানকে রুট পারমিট না দেয়ায় এই পথের যাত্রীদের বাধ্য হয়েই ট্রাস্টের গাড়িতে চড়তে হয়। পাশাপাশি ট্রাস্ট পরিবহন যাত্রীর কাছ থেকে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করত।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, ট্রাস্ট পরিবহনের বাসগুলো দৈনিক চুক্তিভিত্তিক মজুরিতে চালক ও হেলপার নিয়োগ দেয়। দুর্ঘটনার শিকার বাসটির চালক ওই গাড়ির (ঢাকা মেট্টো-ব ১১-৯১৪৫) নিয়মিত চালক ছিলেন না। আবার ট্রাস্ট পরিবহনের ব্যানারে চলাচলকারী এই বাসটির মালিকও ট্রাস্ট পরিবহন না। একজন ব্যক্তি মালিকানায় থাকা বাসটি ট্রাস্ট পরিবহনের ব্যানারে চলাচল করছিল।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) সারাবাংলা’কে জানিয়েছে, ট্রাস্ট পরিবহনের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কোনো সংযোগ নেই। প্রতিষ্ঠানটি অন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মতোই।

বাসচাপায় নারীর পা বিচ্ছিন্ন: মালিক-চালকসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বিজ্ঞাপন

ট্রাস্ট পরিবহনের সুপারভাইজার হচ্ছেন সেনাবাহিনীর সাবেক সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আক্তার হোসেন। তিনি মাঠ পর্যায়ে ট্রাস্ট পরিবহন দেখভাল করে থাকেন। তার কাছে দুর্ঘটনার শিকার বাসটির (ঢাকা মেট্টো-ব ১১-৯১৪৫) তথ্য এবং চালকের নাম ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলা’কে বলেন, ‘আমি কিছুই জানি না। এই সবকিছু অফিসের লোকজন বলতে পারবে।’

সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর হক ট্রাস্ট পরিবহনে উপপরিচালক হিসেবে কাজ করেন। তার কাছে বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সকালে দুর্ঘটনার শিকার বাসটির (ঢাকা মেট্টো-ব ১১-৯১৪৫) তথ্য এবং চালকের নাম ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলা’কে বলেন, ‘আমি এখন ব্যস্ত, এক ঘণ্টা পর ফোন দিন।’

এক ঘণ্টা পর দিলে ট্রাস্ট পরিবহনের উপপরিচালক সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর হক বলেন, ‘আমি এখন কনফারেন্সে, পরে যোগাযোগ করুন।’ এই কথা বলেই ফোন কেটে দেন।

ট্রাস্ট পরিবহনের উপপরিচালক সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর হক’কে বৃহস্পতিবার বিকেলে ফোন দিলে তিনি পরিচয় জানার সঙ্গে সঙ্গে ফোন কেটে দেন। এরপর সন্ধ্যায় একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।

বিজ্ঞাপন

‘কে চালাবে আমার সংসার’

এদিকে, এই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা হচ্ছেন হাতিরঝিল থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) খায়রুল আলম। তিনি সারাবাংলা’কে বলেন, ‘আমরা কাজ করছি, গাড়ির মালিক, চালক এবং সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনার জন্য।’

‘গাড়ির চালকের নাম মোর্শেদ’, এই তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চালকের বাড়ি-ঘরের ঠিকানা এখনও পাইনি। শুধু নামটাই পেয়েছি।। আমরা কাজ করছি, পেয়ে যাব।’

এই ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা যায়নি কেন, জানতে চাইলে হাতিরঝিল থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) খায়রুল আলম বলেন, ‘ঘটনা হচ্ছে, গাড়িটা যিনি চালাচ্ছিলেন তিনি তো নিয়মিত চালক ছিলেন না। নিয়মিত চালক হলে এতক্ষণে সব পেয়ে যেতাম। নিয়মিত চালক ছিলেন না বলেই একটু সময় লাগছে।’

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ওই বাসটির মালিকের নাম, চালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের নাম, ঠিকানাই ট্রাস্ট পরিবহনের কাছে রয়েছে। কিন্তু তারা অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে মামলাটি মীমাংসা করতে চাচ্ছে। যার অংশ হিসেবে গত ২৮ আগস্ট (বুধবার) পা হারানো কর্মকর্তার পরিবারকে ২ লাখ টাকা দেয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় এখন অন্য পথে হাঁটছে ট্রাস্ট পরিবহন।

সারাবাংলা/জেআইএল/এনএইচ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন