ইয়াস: জোয়ারের পানিতে চট্টগ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ
২৬ মে ২০২১ ২০:৫৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারের পানি বেড়ে চট্টগ্রামের চারটি উপজেলায় বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কোথাও বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে। আবার কোথাও বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।
উপকূলীয় চার উপজেলা সন্দ্বীপ, বাঁশেখালী, আনোয়ারা ও সীতাকুণ্ডে জোয়ারের পানি বেড়ে কিছুটা প্রভাব পড়লেও অন্যান্য উপজেলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম জাকারিয়া।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাঁশখালী উপজেলার বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী তিনটি ইউনিয়ন গণ্ডামারা, ছনুয়া ও খানখানাবাদে বেড়িবাঁধগুলো ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। সেখানে পানি বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সন্দ্বীপ উপজেলার সারিকাইত ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বেড়িবাঁধের একটি অংশে প্রায় পাঁচ মিটার ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছে। বঙ্গোপসাগরের সন্দ্বীপ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার শূন্য দশমিক তিন মিটার ওপর দিয়ে অর্থাৎ ৬ দশমিক ৫ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।
আনোয়ারা উপজেলায় সাঙ্গু নদীর তীরবর্তী রায়পুর ইউনিয়নে একটি বেড়িবাঁধ ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। কোস্টগার্ডের পূর্ব জোনের সদর দফতরের সামনেও পুরনো একটি বেড়িবাঁধ একই অবস্থায় আছে। আনোয়ারা পয়েন্টে পানি বিপদসীমার নিচে আছে। তবে জোয়ারের পানি কয়েকটি বসতঘরেও ঢুকেছে, যেগুলো নদীর একেবারে তীরবর্তী।
সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের আখিলপুর এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে বলে জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম জাকারিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘চার উপজেলার কিছু গ্রামে জোয়ারের সময় বেড়িবাঁধ উপচে পানি ঢুকছে, আবার ভাটার সময় নেমে যাচ্ছে। বেড়িবাঁধগুলো যেখানে আংশিক ভেঙেছে, সেখানে মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের টিম আছে। আমাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা সার্বিক বিষয় তদারক করছেন। তবে কোথাও হতাহত কিংবা পানিবন্দি মানুষ নেই।’
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আনোয়ারায় সাঙ্গু নদীর তীরে বেড়িবাঁধের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি লোকালয়ে এসেছে। কিছু বসতঘরে পানি ঢুকেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বালির বস্তা দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করছে। ভাঙা অংশ মেরামত করা হচ্ছে।’
আবহাওয়া অফিসের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে চট্টগ্রামসহ দেশের উপকূলবর্তী জেলাসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৬ ফুট অধিক উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে।
এদিকে বুধবার (২৬ মে) সকাল থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে আছড়ে পড়ছে সাগরের অস্বাভাবিক উচ্চতার ঢেউ। পানির ঢেউ সৈকতের স্থাপনার ওপর আঘাত করতে দেখা গেছে। সেখানে থাকা অস্থায়ী কিছু দোকানপাট তলিয়ে নিয়ে গেছে। তবে বেড়িবাঁধ অক্ষত আছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘পতেঙ্গায় আমরা গিয়েছিলাম। সেখানে জোয়ারের সময় পানির উচ্চতা বেশি ছিল। ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত কিছু লোকজনকে আমরা সরিয়ে দিয়েছি। বেড়িবাঁধের কোনো ক্ষতি হয়নি।’
এদিকে জোয়ারের সময় চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ইয়ার্ডেও পানি ঢুকে যায়। তবে ভাটার সময় আবারও নেমে যায়। বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানিয়েছেন, বন্দরের স্বাভাবিক কাজে কোনো সমস্যা হয়নি।
আরও পড়ুন-
- ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ নামটি যেভাবে এলো
- উপকূল ডুবছে, জোয়ারে উপচে উঠছে জল
- ইয়াস দুপুরের আগে আঘাত হানবে উড়িষ্যায়
- রাতে উড়িষ্যাতেই ‘মৃত্যু হচ্ছে’ ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের
- মোংলা থেকে ৩৪৫ কি.মি. দূরে ইয়াস, উত্তাল সমুদ্র
- ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: উপকূলের প্রতিরক্ষায় থাকবে সুন্দরবন
- জন্ম নিচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস, হয়ে উঠতে পারে বিপজ্জনক
- সুন্দরবনে জলোচ্ছ্বাস, প্রাণরক্ষায় বন্যপ্রাণীদের ছোটাছুটি
- ১০ কি.মি. গতিতে এগোচ্ছে ইয়াস, প্রতিমুহূর্তেই বাড়ছে গতিবেগ
- ভরা কটালে আসছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস, ফিরে আসছে ৯১-এর ভয়াল স্মৃতি
সারাবাংলা/আরডি/টিআর