বিজ্ঞাপন

ভরা কটালে আসছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস, ফিরে আসছে ৯১-এর ভয়াল স্মৃতি

May 24, 2021 | 8:45 pm

সারাবাংলা ডেস্ক

পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি এরই মধ্যে রূপ নিয়েছে ঘূর্ণিঝড়ে। ‘ইয়াস’ নামের এই ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এর গতিপথের তথ্য বলছে, পশ্চিমবঙ্গের দিঘা ও বালেশ্বর উপকূলের মাঝামাঝি হয়ে এটি যাবে ঝাড়খাণ্ডের দিকে। মূল ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত না করলেও এর প্রভাবে খুলনা উপকূলে প্রচুর ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছেই। এর সঙ্গেই আরও একটি তথ্য ছড়িয়েছে আশঙ্কা— প্রায় তিন দশক পর বঙ্গোপসাগরে এমন শক্তিশালী কোনো ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে যাচ্ছে ভরা কটালে।

বিজ্ঞাপন

পূর্ণিমা বা অমাবস্যায় যে পূর্ণ মাত্রার জোয়ার দেখা যায়, তাকেই বলা হয় তেজ কটাল বা ভরা কটাল। জ্যোতির্বিদা বিষয়ক বিভিন্ন ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, আগামী বুধবার (২৬ মে) শুরু হচ্ছে শাওয়াল মাসের চাঁদের পূর্ণ তিথি তথা পূর্ণিমা। অর্থাৎ বুধবারেই উপকূলে থাকবে তেজ কটাল বা ভরা কটাল। আবার বর্তমান গতিপথ অনুযায়ী বুধবারই উত্তর উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূলে আছড়ে পড়ার কথা রয়েছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এর। অর্থাৎ তেজ কটালের পূর্ণ জোয়ারের সময়ই আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস।

এমনিতেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ইয়াস-এর। তেজ কটালের সঙ্গে এর উপকূলে আঘাত হানার সময়টিও মিলে গেলে ইয়াস ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে— এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। আর এরকম ঘূর্ণিঝড় কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তার সাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশের পূর্ব উপকূল— একানব্বইয়ের সেই প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এর প্রভাবে এরই মধ্যে উত্তাল হয়েছে সমুদ্র, পতেঙ্গা সৈকত থেকে তোলা [ছবি- শ্যামল নন্দী]

তিন দশক আগে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ভরা পূর্ণিমায় চট্টগ্রাম উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হেনেছিল এক ঘূর্ণিঝড়। এখন যেমন প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়কেই আলাদা আলাদা নামে ডাকা হয়, তখন সেই প্রচলন ছিল না। একানব্বইয়ের ঘূর্ণিঝড়টি ‘বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়’ নামেই চিহ্নিত করে থাকে আন্তর্জাতিক বিশ্ব। ৩০ বছর আগের সেই ঘূর্ণিঝড়ে ১২ থেকে ২২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস আর ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার গতির বাতাসে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল উপকূল। প্রাণ হারিয়েছিলেন প্রায় দেড় লাখ মানুষ। এক কোটির বেশিও মানুষ সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

তিন দশক পর ফের ভরা কটালে আঘাত হানতে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। এখন পর্যন্ত তথ্য বলছে, ভারতীয় উপকূলেই মূল আঘাতটি হানবে এই ইয়াস। তবে এসব ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি পাল্টাতে সময় লাগে না। গতিপ্রকৃতি না পাল্টালেও ঘূর্ণিঝড়ের উপকেন্দ্রের বাইরের অংশটির প্রভাব খুলনা উপকূলে পড়বে ভালোভাবেই। আর সেই সময়েই তেজ কটাল বা ভরা কটাল ঘটলে জোয়ারের পানির উচ্চতা হতে পারে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত না হলেও জলোচ্ছ্বাসের ঝাপটায় ঠিকই আক্রান্ত হতে পারে খুলনা ও সংলগ্ন উপকূল।

আবহাওয়াবিদরা অবশ্য এখনই এতটা শঙ্কিত হতে নারাজ। ঘূর্ণিঝড়ের মূল গতিপথ যেহেতু ভারতের দিকে, তাই বাংলাদেশের উপকূলে এর তীব্রতা সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছাবে না বলেই মনে করছেন তারা। জানতে চাইলে ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ সারাবাংলাকে বলেন, ভরা কটালের সময়ই সম্ভবত ঘূর্ণিঝড় ইয়াস স্থলভাগে আঘাত করবে। তবে আমাদের বিভিন্ন অ্যানালাইজার বা মডেল যেগুলো আছে, সেগুলোর তথ্য বলছে— এটি আমাদের ছেঁড়াদ্বীপ ও ভারতের সাগর দ্বীপের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে যাবে। তো সে হিসাবে আমাদের উপকূল খানিকটা নিরাপদে থাকতে পারে। তবে অনেক সময় ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ বদলেও যায়। তেমনটি হলে আমরা আপনাদের জানাব।

তেজ কটালের সঙ্গে একই সময়ে ঘূর্ণিঝড়ের আগমনে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে বজলুর রশিদ বলেন, ভরা কটালে নিজস্ব জোয়ারের একটা উচ্চতা তো আছেই। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়লে এই উচ্চতা নিশ্চয় আরও বাড়তে পারে। আবার বর্ষাকালে পানির উচ্চতা একটু বেশিই থাকে। এমন কয়েকটি বিষয় এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তবে ঘূর্ণিঝড় আমাদের দিকে কতটা আসছে, সেটির ওপরই আসলে বাকি বিষয়গুলো নির্ভর করছে।

বিজ্ঞাপন

ভারত অবশ্য এমন নির্ভার থাকতে পারছে না। বিষয়টি নিয়ে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের আধিকারিক জি কে দাস আনন্দবাজারকে বলেন, পূর্ণিমা ও চন্দ্রগ্রহণের বিষয়টি আমাদের মাথায় রয়েছে। নির্দিষ্ট কোন সময়ে তা স্থলভাগে আছড়ে পড়বে, সেটি এখনো নির্দিষ্ট নয়। তবে যদি জোয়ারের সময় ইয়াস আছড়ে পড়ে, তাহলে তার প্রভাব আরও মারাত্মক হবে, সেটা নিশ্চিত।

সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এর অবস্থান [উইন্ডি ডটকম থেকে  নেওয়া ছবি]

কোথায় অবস্থান করছে ইয়াস

আবহাওয়া অফিসের সবশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তি বলছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সোমবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় ৬টায় এটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিম, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারের ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার সব নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবর বলছে, প্রায় কাছাকাছি সময়েই ঘূর্ণিঝড়টি দিঘা থেকে ৫৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। আগের ৬ ঘণ্টা ধরে ঘণ্টায় ৭ কিলোমিটার গতিবেগে এটি সামনে এগিয়েছে। বুধবার দুপুরে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আকারে উড়িষ্যার পারাদ্বীপ ও পশ্চিমবঙ্গের দিঘার মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে উড়িষ্যার বালেশ্বর অঞ্চল দিয়ে এটি অতিক্রম করবে বলেই জানিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া অফিস। এরপর ইয়াস ঝাড়খণ্ডের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন

ভরতের ইয়াস-এর প্রভাব শুরু

বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, মঙ্গলবার রাতের মধ্যেই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে ইয়াস।  উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর হতে হতে বুধবার সকালের মধ্যে এটি অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে। এই রূপ বহাল রেখেই উপকূলে আঘাত হানতে পারে ইয়াস।

ভারতের আবহাওয়া অফিস বলছে, ইয়াস-এর প্রভাবে সোমবার বিকেল থেকেই রাজ্যের উপকূলীয় এলাকায় ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে। ঘূর্ণিঝড় যত স্থলভাগের দিকে এগোবে, ঝড়ের গতিবেগ তত বাড়বে। মঙ্গলবার থেকে রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলা— পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর থেকে এখনো ঝড়-বৃষ্টির এমন তথ্য জানা যায়নি। তবে এরই মধ্যে উত্তাল হয়ে উঠতে শুরু করেছে সাগর।

ইয়াস নিয়ে আরও পড়ুন-

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন