মিতু খুন: নিজের মামলায় বাবুলকে গ্রেফতারের নির্দেশ
৯ জানুয়ারি ২০২২ ১২:৪৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় নিজের দায়ের করা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই ঘটনায় দায়ের হওয়া আরেক মামলায় বাবুল আক্তার বর্তমানে কারাগারে আছেন।
মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) আবেদনের ওপর শুনানি শেষে রোববার (৯ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. আব্দুল হালিম এ আদেশ দিয়েছেন।
গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর বাবুল আক্তারকে তার নিজের মামলায় গ্রেফতার দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক। নির্ধারিত দিনে শুনানির সময় অভিযুক্ত বাবুল আক্তারকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. কামরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্যোন অ্যারেস্টের আবেদন করেছিলেন। আদালত শুনানি শেষে সেটা মঞ্জুর করেছেন।’
বাবুল আক্তারের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘একই বিষয়ে দুটি মামলা চলমান। আগের মামলার সূত্র ধরে পরের মামলাটি হয়েছে। একজন ব্যক্তি একই অভিযোগে দুই মামলার আসামি হতে পারেন না। এজন্য আমাদের পক্ষ থেকে গ্রেফতার না দেখানোর আবেদন করা হয়েছিল। তবে আদালত গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন।’
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে।
স্ত্রী খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ২০১৬ সালের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই নানাভাবে স্ত্রী খুনে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার আলোচনা শুরু হয়। ঘটনার পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন প্রথম এই খুনে বাবুলের জড়িত থাকার সন্দেহ প্রকাশ্যে আনেন।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাত ঘুরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্তভার পড়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ওপর। এরপর আস্তে আস্তে জট খুলতে থাকে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী চাঞ্চল্যকর এই মামলার।
২০২১ সালের ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের লক্ষ্যে ১২ মে ওই মামলার ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই। আগের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দাখিলের পর ১২ মে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার বাকি সাত আসামি হলেন মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু এবং শাহজাহান মিয়া।
ওইদিনই (১২ মে) বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার করে পিবিআই। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন। এদিকে বাবুল আক্তার তার দায়ের করা মামলায় পিবিআইয়ের দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর নারাজি দেন। শুনানি শেষে আদালত বাবুলের নারাজি আবেদন নামঞ্জুর করেন। তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে টেকনিক্যাল ত্রুটি আছে উল্লেখ করে অধিকতর তদন্ত করে পুনরায় প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আদালত পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
এর ফলে মিতু হত্যার ঘটনায় দু’টি মামলাই এখন তদন্তাধীন আছে।
আরও পড়ুন
মিতু হত্যা মামলা কোন পথে?
সবটাই ছিল বাবুলের ‘অভিনয়’
আইজিপি-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেই বাবুলকে গ্রেফতার
সেই মুসাকে এখন ‘চিনতে পেরেছেন’ বাবুল আক্তার
জামিন চেয়ে আরেক দফা বিফল বাবুল আক্তার
বাবুলকে ‘বাঁচিয়ে’ দাখিল হচ্ছে মিতু হত্যা মামলার অভিযোগপত্র
বাবুলের শ্বশুরের ‘ভিন্ন সুর’ কেন, জানতে চাইবে পিবিআই
পুনঃতদন্ত নয়, বাবুলের মামলার অধিকতর তদন্ত হবে
বাবুল-মিতুর সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যেতে হবে মাগুরায়
স্ত্রী হত্যায় অভিযুক্ত সাবেক এসপি বাবুল রিমান্ডে
আইজিপি-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেই বাবুলকে গ্রেফতার
মিতুর খুনি সাবেক এসপি বাবুল আক্তার, অভিযোগে অনড় শ্বশুর
মিতু হত্যা: এবার বাবুলের মামলায় ‘তাকেই’ গ্রেফতারের আবেদন
‘ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মুছাকে দিয়ে স্ত্রীকে খুন করায় বাবুল’
বাবুল আক্তারের সন্তানদের খোঁজে আদালতের দ্বারস্থ তদন্ত কর্মকর্তা
সারাবাংলা/আরডি/একে