Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিশ্বকাপে আমাদের এক-দুইটা ম্যাচ জেতা সম্ভব ছিল: জেসি


২৮ মার্চ ২০২০ ১৭:৫৩

গায়ে তাদের এশিয়ার চ্যাম্পিয়নের তকমা। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলা দেখে মনে হলো বুঝি কোনো নবাগত দল খেলছে! গ্রুপ পর্বে চারটি ম্যাচ খেললো বটে কিন্তু একটিতেও জয়ের উল্লাসে ভেসে মাঠ ছাড়া হলো না সালমা অ্যান্ড কোংদের। অথচ সুবর্ণ সুযোগটি এসেছিল টুর্নামেন্টের একেবারে প্রথম ম্যাচেই, ভারতের বিপক্ষেই। কিন্তু ১৮তম ওভার থেকে রানের হিসেবে ভীষণ খরুচে হয়ে উঠলেন নাহিদা, সালমারা। তাতে ১৭তম ওভারে ১১৭ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে থরহরিকম্প দলটি অনায়াসেই ১৪৩ রান ছুঁয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর ফেললো।

বিজ্ঞাপন

এর চাইতেও বড় সুযোগ এসেছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিতে। জিততে টাইগ্রেসদের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৯২ রান। কিন্তু দলের অপরিনামদর্শী ব্যাটিংয়ে মুঠো গলে বেরিয়ে গেল বহু কাঙ্খিত সেই জয়। বাকি দুই ম্যাচের ফলাফলও তথৈবচ। ফলে টানা তিন বিশ্বকাপে জয়হীন থাকল লাল সবুজের প্রমীলা দলটি।

বিষয়টি দারুণ পীড়া দিয়েছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের এক সময়ের সদস্য, স্টার স্পোর্টসের ধারাভাষ্যকার ও ক্রিকেট বিশ্লেষক সাথীরা জাকির জেসিকে। কেননা নিকট অতীতে তিনি যে দলটিকে দেখেছেন তারা তো অপ্রতিরোধ্য। দুই বছর আগে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে এই দলটিই ভারত, পাকিস্তানের মতো উপমহাদেশের পরাশক্তিদের হারিয়ে দিয়েছে প্রবল বিক্রমে। কিন্তু ২২ গজের বিশ্বযুদ্ধে তাদের এমন করুণ হার তার ক্রিকেটীয় সত্বাকে করেছে ব্যথাতুর।

হারের কাটাছেঁড়া করতে গিয়ে অবশ্য ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সের চাইতে টিম ম্যানেজমেন্টের দায়টাই বড় করে দেখছেন জেসি। তার মতে দলীয় পরিকল্পনা আরও গোছালো হলে ফলাফল এতটা খারাপ হওয়ার কথা নয়।

সাথীরা জাকির জেসি সবশেষ লাল সবুজের জার্সিতে নেমেছিলেন ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সেঞ্চুরিয়নে স্বাগতিকদের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেটিই তার শেষ। দুই বছরের ক্যারিয়ারে ওয়ানডে খেলেছেন ২টি ও টি-টোয়েন্টি একটি। কিন্তু এমনটি হওয়ার কথা ছিল না মোটেই। সেসময়কার ভারতীয় কোচের খামখেয়ালিপনায় দল থেকে বাদ পড়ে যান। তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন, যেহেতু জেসি বিবাহিত সেহেতু তিনি আর খেলতে পারবেন না। অথচ বিয়ের পরদিনই মিরপুর সিটি ক্লাব মাঠে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে নেমে জেসি ব্যাট হাতে করেছিল ৮৫ রান আর উইকেট পেয়েছিলেন ৫টি।

বিজ্ঞাপন

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরু না হতেই শেষ হয়ে যাওয়ার বেদনা তাকে নিশ্চয়ই পোড়ায়। তবে বর্তমান ভেবে তা আর হৃদয়ে স্থায়ী আসন গেঁড়ে বসতে পারে না। কেননা বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র নারী ক্রিকেটার হিসেবে জেসি স্টার স্পোর্টসে ধারাভাষ্য দিচ্ছেন। তাছাড়া আলোচনা ও বিশ্লেষনে দেশের স্যাটেলাইট টিভি চ্যনেলগুলোতেও তিনি এখন নিয়মিত মুখ।

২০১৯ বিশ্বকাপ চলাকালীন স্টার স্পোর্টস থেকে ধারাভাষ্যের প্রস্তাব পান জেসি। বিশ্বকাপে চার ম্যাচে ধারাভাষ্যও দিয়েছেন। এরপর ভারতের বিভিন্ন সিরিজেও তাকে ধারাভাষ্য দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ধারাভাষ্য দেওয়ার কথা ছিল দেশটির সবশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেও। কিন্তু করোনা আতঙ্কে যাননি।

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সর্গ্রাসী রূপ নেওয়ায় অন্য আট দশ জনের মতোই আপাতত ঘরে বসেই কাটছে সাথীরা জাকির জেসির সময়। এবং যতদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, ততদিন সবাইকে এভাবেই ঘরে আবদ্ধ থাকার পরামর্শ তার।

সারাবাংলার সঙ্গে মুঠোফোনে একান্তে আলাপকালে এসব কথা জানালেন দেশের প্রথম ও একমাত্র পেশাদার নারী ধারাভাষ্যকার। কথা বলেছেন নারী ক্রিকেট নিয়ে প্রাসঙ্গিক আরও নানান বিষয়য়ে। সারানাংলার পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা তুলে ধরা হলো।

সারাবাংলা: বিশ্বজুড়ে করোনা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এদেশেও ছড়িয়ে পড়ছে। আপনার সময় কাটছে কী করে?

জেসি: আমরা কখনো চিন্তাই করিনি এরকম একটা পরিস্থিতি আসবে যে আমরা বাসা থেকে বের হতে পারব না, এমনকি কেউ অসুস্থ হলেও দেখতে যেতে পারব না। পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ যে সব দেশ তাদের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি কেউ মরে গেলেও তার কাছে যাওয়া যাচ্ছে না। খুবই খারাপ একটা অবস্থা। বাসায়ই আছি। একদমই প্রয়োজন না হলে বাইরে বের হচ্ছি না। কাজের বুয়া, ড্রাইভারকে ছুটি দিয়ে দিয়েছি। সব কাজই নিজেকে করতে হচ্ছে। সতর্কতার অংশ হিসেবে কিছুক্ষণ পরপরই সাবান দিয়ে হাত ধুচ্ছি। এই হচ্ছে করোনা পরিস্থিতিতে আমার অবস্থা।

সারাবাংলা: বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র নারী ক্রিকেটার হিসেবে স্টার স্পোর্টসে ভারাভাষ্য দিচ্ছেন। অভিজ্ঞতাটা কেমন? কী করে শুরুটা হলো?

জেসি: স্টার স্পোর্টসের সাথে আমি কখনো কাজ করব চিন্তাও করিনি। সত্যি বলতে এমন কোনো পরিকল্পনাও ছিল না। হঠাৎ করেই হয়ে গেছে বিশ্বকাপের সময়। হাবিবুল বাশার সুমন ভাই ইংল্যান্ডে ছিলেন। উনি বললেন স্টার স্পোর্টস একজন মেয়ে ধারাভাষ্যকার নিতে চায়। তো উনিও কথা বললেন ওদের সাথে। সেই অনুযায়ী ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করা। ওরা ট্রায়াল হিসেবে আইপিএলের একটা ক্লিপ হোয়াটস অ্যাপে আমাকে পাঠিয়ে বললো রেকর্ড করে পাঠাতে। আমি ধারাভাষ্য দিয়ে সেটা আবার ওদের রেকর্ড করে পাঠালাম। রাত তখন ১২টা কি সাড়ে ১২টা বাজে। পরদিন সকাল বেলা ওরা বলল তুমি টিকিটি কেটে বিকেলের ফ্লাইটে চলে এস। আমিও গেলাম। চারটি ম্যাচের জন্য আমাকে নির্বাচন করা হলো, এর মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচও ছিল। পরে অবশ্য ভারতের সবগুলো ম্যাচে আমাকে কমেন্ট্রি করতে বলেছিল। এমনকি গত ১১ মার্চেও ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেও আমাকে ডেকেছিল। কিন্তু করোনা ততদিনে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় আমার যাওয়া হয়ে ওঠেনি।

সারাবাংলা: এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও বাংলাদেশের মেয়েদের ক্রিকেটের মধ্যে পার্থক্যটা আপনি কতখানি দেখেন?

জেসি: দেখেন, আমাদের বাংলাদেশে অত ভালো ক্রিকেটার আপনি পাবেন না। কারণ এদেশের ক্রিকেটের ক্রিকেটারদের ম্যাচের পরিমাণ খুবই কম। এরপরে সমস্যা হলো, তাদের অনুশীলন সুবিধা নেই, দল নিয়ে কোনো পরিকল্পনাও নেই। ঘুরেফিরে যে ১০-১৫ জন ক্রিকেটার ছিল ওরাই আছে। বাইরে থেকে ক্রিকেটার আনতে হবে এমন কোনো ভাবনাও নেই। এর বাইরে যারা আছে তারা কিন্তু নূন্যতম অনুশীলনের সুযোগও পাচ্ছে না। ক্রিকেট একটি ব্যয়বহুল খেলা। এখানে ব্যাট থেকে শুরু করে যাবতীয় কিটসের দাম অনেক। সেগুলো হয়ত তাদের একার পক্ষে বহন করা সম্ভব না। তাছাড়া এখানে যদি প্রিমিয়ার লিগ, জাতীয় লিগ না হয় তাহলে ওদের জন্য জীবন ধারণ করা খুবই কঠিন। তো এটা একটা কারণ। পক্ষান্তরে ভারতের মেয়েরা বছরের চার মাস মাত্র ফ্রি থাকে। বাদবাকি পুরো সময়টা কিন্তু ক্রিকেটের মধ্যেই থাকে। ওরা পুরো দস্তর পেশাদার। ছেলেরা যে পরিমাণ ক্রিকেট খেলে মেয়েরাও একই পরিমাণ খেলে। ওদের ঘরোয়া ক্রিকেট এতটা শক্তিশালী যে ছেলেদের মতোই। ওদের আয়ও কিন্তু অনেক। যা আমাদের মেয়েদের ক্রিকেটাররা ভাবতেও পারে না।

সারাবাংলা: গত তিনটি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল জয়শূণ্য! কেন?

জেসি: আগের বিশ্বকাপগুলোতে ধরেন আমরা একেবারে নবাগত একটি দল হিসেবে খেলেছি। কিন্তু এখন বাংলাদেশ দল যে সময়টার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাদের আর নবাগত বলা যাবে না। কারণ তারা এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন। আমার মনে হয়েছে বিশ্বকাপে আমাদের একটা-দুইটা ম্যাচ জেতা তা সম্ভব ছিল। তবে টিম ও ব্যাটিংয়ে আমরা সঠিক পরিকল্পনা করতে পারিনি। কেন যেন মনে হয়েছে মেয়েদের আত্মবিশ্বাসের অভাব। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে আমরা ৯১ রানও করতে পারিনি। এর চাইতে খারাপ আর কি হতে পারে?

সারাবাংলা: আপনি দলের পরিকল্পনার ঘাটতি দেখছেন। একটু পরিষ্কার করবেন?

জেসি: ভারতের সঙ্গে টুর্নামেন্টের একেবারে প্রথম ম্যাচে পান্না এত ভাল বল করল অথচ পরের ম্যাচেই ওকে বসিয়ে দেওয়া হলো। তাহলে তো ও ভাবতেই পারে, আমাকে দিয়ে আর হবে? এত ভাল বল করেও তো একাদশে জায়গা হয় না। ও কিন্তু আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। আবার রুমানা আহমেদকে ৮ এ নামানো হলো। আসলে একটা দলে যখন ৪ জনকে একাদশ থেকে বাদ দেওয়া হয় তখন বুঝতে হবে আমাদের পরিকল্পনার সত্যিই ঘাটতি আছে। তা না হলে আমরা কেন একাদশ ঠিক করতে পারব না?

সারাবাংলা: আপনি এখন ক্লাব ক্রিকেট খেলছেন। এটা কি স্রেফ ভাল লাগা থেকেই নাকি জাতীয় দলে ফেরার ইচ্ছে আছে?

জেসি: না, না! আমার খেলাটা হচ্ছে পুরোপুরি ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা থেকে। আমাদের তো একটা সময় জায়গা ছেড়ে দিতেই হবে তাই না? জানেন আমি কেন এই সিদ্ধান্ত নিতে পারছি? কারণ আমার ভবিষ্যতটা এখন নিশ্চিত। আমি যদি ধারাভাষ্য না দিতাম, টিভি শো না করতাম তাহলে হয়ত জাতীয় দলে থাকতেই চাইতাম। সেটা কিন্তু না। আমার এখন অনেক কাজ। জাতীয় দলের মেয়েরা মাসে যে টাকা পায় আমি এক দিনেই তার চেয়ে বেশি পাই।

সারাবাংলা: বিয়ের পর খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন নিশ্চয়ই কাজটি কঠিন। মা হয়েছেন তাতে আরও কঠিন হয়ে গেছে। কীভাবে সম্ভব হচ্ছে?

জেসি: সবাই আসলে এই সুযোগটা পায় না। আমার স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি আমাকে সমর্থন দেয় বলেই পারছি। তা না হলে কিন্তু সম্ভব হত না। বিয়ের সময় চিন্তার মধ্যেই পড়ে গিয়েছিলাম যে আমার খেলাটা সম্ভব হয় কিনা। কিন্তু দেখি আরও ভালো হচ্ছে। বিয়ের পরে অনেকেই বলেছে কেন সন্তান নিচ্ছ না। তখন এক রকম দুর্ভাবনার মধ্যেই সময় কাটত। এখন একটি সন্তান হয়েছে ফলে অন্তত এটা শুনতে হচ্ছে না যে কেন সন্তান নিচ্ছ না? এখন যদি আমি খেলা চালিয়ে যেতে পারি কেন নয়?

সারাবাংলা: বিয়ের পর খেলা থেকে বিরতি নিয়েছিলেন। সেকারণেই কি জাতীয় দলে অনিয়মিত হয়ে পড়লেন?

জেসি: আমি বিরতি নেইনি। যেদিন আমার বিয়ে ছিল সেদিনও আমার খেলা ছিল। সন্ধ্যায় ফিরে রাতে হলুদ করেছি। এমনকি বিয়ের পরদিনও আমি খেলেছি। বাসার পাশেই সিটি ক্লাব মাঠে। ওই ম্যাচে ব্যাটিং থেকে ৮৭ রান করেছিলাম, উইকেট পেয়েছিলাম ৫টি। বিয়ের পর খেলা চালিয়ে যাওয়া কঠিন ছিল না। কিন্তু যেটা হয়েছিল ওই সময় আমাকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল এই ভেবে যে যেহেতু বিয়ে হয়েছে তাই আমি আর খেলতে পারব না।

আরো পড়ুন:

মিডল অর্ডারেই স্বাচ্ছন্দ্য মিঠুনের

নিজের জায়গা ধরে রাখতে আত্মবিশ্বাসী সাদমান

বাতাসে বল ঘুরাতেই নাঈমের যত আনন্দ

করোনা থামিয়ে দিয়েছে সৌম্য’র বিশ্বকাপ ভাবনা

পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটাই আমাদের টার্নিং পয়েন্ট ছিল: আকবর

বিশ্বকাপে আমাদের এক-দুইটা ম্যাচ জেতা সম্ভব ছিল: জেসি

‘এমনভাবে ফিরতে চাই যেন আর বের হতে না হয়’

সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে চান নাঈম

নেইমারের সঙ্গে নিজের মিল খুঁজে পান সাইফউদ্দিন

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল সাথীরা জাকির জেসি সালমা-রুমানা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর