পঞ্চম দিনের মতো রাজপথে বুয়েট শিক্ষার্থীরা
১২ অক্টোবর ২০১৯ ১৩:৩৬
ঢাকা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে পঞ্চম দিনের মতো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। আবরার হত্যার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা ছাড়াও এবারে তারা পাঁচ দফা দাবিতে অনড় অবস্থান নিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই পাঁচ দফা দাবি মেনে নেওয়া না হলে তারা বুয়েটের আগামী শিক্ষাবর্ষের (২০১৯-২০) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত দেবেন না।
শনিবার (১২ অক্টোবর) দুপুর ১২টা থেকে বুয়েট শহীদ মিনার চত্বরে সমবেত হতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা বুয়েটের উপাচার্যের পদত্যাগও দাবি করেন।
আরও পড়ুন- পাঁচ দফা পূরণ হলে তবেই বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা
আন্দোলনকারীরা বলেন, বুয়েট ক্যাম্পাসে এমন নির্মম র্যাগিং আগেও হয়েছে। উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এসব সম্পর্কে আগে থেকেই জানতেন। তবে তারা কোনো উদ্যোগ নেননি। আগে থেকেই র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে প্রশাসন সোচ্চার হলে আবরারকে খুন হতে হতো না।
এদিকে, শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয় শিক্ষার্থীদের। ওই সংলাপের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি আবরার হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিদের বহিষ্কারও করা হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের যে ১০ দফা দাবি ছিল, তা মেনে নেওয়ারও আশ্বাস দেন উপাচার্য। তবে দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য কয়েকদিন সময় চেয়ে নেন উপাচার্য।
আরও পড়ুন- বুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধ, ১৯ আসামি বহিষ্কার
পরে শিক্ষার্থীরা অল্প সময়ে বাস্তবায়নযোগ্য পাঁচ দাবি তুলে ধরেন উপাচার্যের কাছে। তারা বলেন, এই পাঁচটি দাবি বাস্তবায়ন করা হলে তবেই তারা বুয়েটের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে দেবেন। আজ শনিবারও বিক্ষোভে একই কথা বলেন তারা। উপাচার্যের কথায় আস্থা রাখতে পারছেন না জানিয়ে এসময় তার পদত্যাগও দাবি করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিলও করেন।
বুয়েট শিক্ষার্থীদের ৫ দাবি
১. হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে সাময়িক বহিষ্কার এবং পরে অভিযোগপত্রে যাদের নাম আসবে, তাদেরও স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হবে— এই মর্মে বুয়েট প্রশাসনকে নোটিশ জারি করতে হবে।
২. আবরার হত্যা মামলার সব খরচ বুয়েট প্রশাসনকে বহন করতে হবে এবং তার পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে বুয়েট প্রশাসন বাধ্য থাকবে— এটি নোটিশে লেখা থাকতে হবে।
৩. বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে হলগুলো থেকে অছাত্র ও অবৈধভাবে হলের সিট দখলকারীদের উৎখাত করতে হবে। ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলোর কার্যালয় সিলগালা করতে হবে।
৪. বুয়েটে আগে ঘটে যাওয়া সব শিক্ষার্থী নির্যাতন, হয়রানি ও ভবিষ্যতে এ ধরনের যেকোনো ঘটনা প্রকাশের জন্য বিআইআইএস অ্যাকাউন্টে একটি কমন প্ল্যাটফর্ম যুক্ত করতে হবে এবং এর পূর্ণ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করে শাস্তি দিতে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। বিষয়টি একটি নোটিশের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।
৫. প্রত্যেক হলের সব তলায় সব উইংয়ের দুইপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা যুক্ত করতে হবে এবং এই সিসিটিভি ফুটেজ সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে— এই মর্মে একটি নোটিশ জারি করতে হবে।
আরও পড়ুন-
‘আবরার হত্যা মামলার চার্জশিট শিগগিরই’
আবরার হত্যা: পলাতক আসামি তোহা গ্রেফতার
আবরার হত্যায় স্বীকারোক্তি দিলেন ছাত্রলীগ নেতা সকাল
আবরার হত্যার ঘটনা পুঁজি করে মাঠে নেমেছে ছাত্রশিবির
আবরার হত্যা বাক স্বাধীনতার ওপর নিষ্ঠুরতম আঘাত: টিআইবি
২০১১ নয় ২০০৫ নম্বর রুমে মারা যান আবরার, হত্যায় জড়িত ২২ জন
‘বুয়েট প্রশাসন আরেকটু কেয়ারফুল থাকলে আবরার হত্যা নাও ঘটতে পারত’
আবরারকে মারা হচ্ছে জানলে প্রশাসনের অনুমতির অপেক্ষা করতো না পুলিশ