Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৩ শর্তে বিআরটিসি বাসে শিক্ষার্থীদের ভাড়া অর্ধেক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৬ নভেম্বর ২০২১ ১৩:০৪

বাসে হাফ ভাড়ার দাবিতে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা, ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) পরিচালিত বাসে শিক্ষার্থীদের ‘হাফ পাস’ বা অর্ধেক ভাড়ায় যাতায়াতের সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সড়ক পরিহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের এই দাবি মেনে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তিনটি শর্তে ১ ডিসেম্বর থেকে শিক্ষার্থীরা এই ‘হাফ পাস’ সুবিধা পাবে।

বিজ্ঞাপন

মন্ত্রী জানান, বিআরটিসি’র বাসে অর্ধেক ভাড়া দিতে হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকতে হবে বৈধ পরিচয়পত্র। এছাড়া তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের দিনে এই সুবিধা তারা পাবে না। বাকি দিনগুলোতেও কেবল সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অর্ধেক ভাড়া দিতে পারবে শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) সকালে নিজ বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসব তথ্য জানান। বেসরকারি মালিকানাধীন গণপরিবহনগুলোতে ‘হাফ পাস’ চালুর বিষয়ে আগামীকাল শনিবার (২৭ নভেম্বর) বৈঠক হবে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন- ২০১৮ থেকে ২০২১— ছোটরা মনে করিয়ে দিচ্ছে বড়দের প্রতিশ্রুতি [ছবি]

ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনা সরকার জনগণের সরকার। জনঘনিষ্ঠ ও যৌক্তিক কোনো দাবিকে তিনি (শেখ হাসিনা) সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। শিক্ষার্থীদের এই দাবিও তিনি মেনে নিয়েছেন।

মন্ত্রী আরও বলেন, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে এ সিদ্ধান্ত (বিআরটিসির বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাস) কার্যকর হবে। বাসে চড়লে ছাত্র-ছাত্রীদের অবশ্যই নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ইস্যু করা ছবিযুক্ত বৈধ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে প্রদর্শন করতে হবে।

‘হাফ পাস’ সুবিধার জন্য বাকি দুই শর্ত জানিয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিআরটিসি বাসে চলাচলের ক্ষেত্রে এ কনসেশন (অর্ধেক ভাড়া) পাবে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের দিনে এ কনসেশন প্রযোজ্য হবে না। শিগগিরই বিআরটিসি এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।

আরও পড়ুন- ডিএসসিসি’র গাড়ির ধাক্কায় নটরডেমের শিক্ষার্থী নিহত

বিজ্ঞাপন

এদিকে, বেসরকারি মালিকানাধীন পরিবহন কোম্পানি পরিচালিত বাস-মিনিবাসে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘হাফ পাস’ চালুর বিষয়টি আলোচনার জন্য আগামীকাল শনিবার (২৭ নভেম্বর) সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কার্যালয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি সভা হবে।

এ তথ্য জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা আশা করি— সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা ও শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংবেদনশীল থেকে বেসরকারি পরিবহনের মালিকরা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন।

রাজধানীর গণপরিহনে শিক্ষার্থীদের ‘হাফ পাস’ বা অর্ধেক ভাড়ায় চলাচলের সুবিধা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের কথা কাটাকাটি দীর্ঘ দিন ধরেই চলে আসছে। তবে এ মাসের শুরুর দিকে ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহন পরিবহন মালিকরা তিন দিনের অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট পালন করলে বিআরটিএ বৈঠকের মাধ্যমে গণপরিহনের ভাড়া ২৬ শতাংশেরও বেশি বাড়িয়ে দেয়। ওই সময় থেকেই পর পর বেশ কয়েকদিন ‘হাফ পাস’ ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের দ্বন্দ্ব ও এর জের ধরে শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনাও ঘটেছে।

আরও পড়ুন- ‘হাফ পাস’ পাচ্ছেন জবি শিক্ষার্থীরা, সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা

সবশেষ গত শনিবার (২০ নভেম্বর) বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের এক শিক্ষার্থী শনির আখড়া থেকে কলেজে আসার পথে অর্ধেক ভাড়া দিতে চাইলে বাসের হেলপার তার সঙ্গে অসদাচরণ করেন। এক পর্যায়ে ঠিকানা পরিবহনের ওই বাসের হেলপার তাকে ধর্ষণের হুমকি দেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ফুঁসে ওঠে শিক্ষার্থীরা। রোববার (২১ নভেম্বর) বকশী বাজার এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের অন্য শিক্ষার্থীরাও।

পরে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীজুড়ে। এক পর্যায়ে সায়েন্স ল্যাব এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যেই গত বুধবার (২৪ নভেম্বর) গুলিস্তান এলাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) একটি ময়লার গাড়ির ধাক্কায় হত্যার শিকার হয় নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী। এরপর শিক্ষার্থী ‘হাফ পাসে’র পাশাপাশি নিরাপদ সড়কের দাবিতেও আন্দোলন শুরু করে। বৃহস্পতিবারও গুলিস্তান, শান্তিনগর, সায়েন্স ল্যাব, নীলক্ষেত, আসাদ গেট, উত্তরা, রামপুরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে রাখে ওই সব এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছে, ২০১৮ সালে বিমানবন্দর সড়কে বেপরোয়া দুই বাসের প্রতিযোগিতার মুখে প্রাণ হারিয়েছিল শহিদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আব্দুল করিম রাজীব। এরপর দেশজুড়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। টানা কয়েকদিন সড়ক অবরোধের পর তাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলে তারা আন্দোলন স্থগিত করে। এবারে আন্দোলনে নেমে শিক্ষার্থীরা বলছে, বড়রা আমাদের অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আমরা তাদের ওপর আস্থা রেখে রাজপথ ছেড়েছিলাম। বড়রা বলুন, আপনারা কি আপনাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রেখেছেন?

আরও পড়ুন-

সারাবাংলা/এনআর/এএম

অর্ধেক ভাড়া ওবায়দুল কাদের বিআরটিসি বাস সড়ক পরিবহন মন্ত্রী হাফ পাস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর