৬০ বিশিষ্ট নাগরিককে সার্চ কমিটির আমন্ত্রণ
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৭:২৪
ঢাকা: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও চার নির্বাচন কমিশনার (ইসি) পদে যোগ্য ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা করবে সার্চ কমিটি। এ জন্য ৬০ বিশিষ্ট নাগরিককে বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আগামী রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে সার্চ কমিটি তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে।
এরই মধ্যে সার্চ কমিটির পক্ষ থেকে বিশিষ্ট জনদের কাছে আলোচনার আমন্ত্রণ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েচে। চিঠি পাওয়ার তথ্য একাধিক বিশিষ্টজন সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, আগামী রোববার বিকেল ৪টায় আলোচনার জন্য সার্চ কমিটি আমাকে চিঠি দিয়েছে। আমি সার্চ কমিটির আলোচনায় অংশ নিতে যথাসময়ে উপস্থিত থাকব।
তিনি বলেন, এর আগে দুইবার সার্চ কমিটির সংলাপে অংশ নিয়ে বোকা হয়েছি। এবার তৃতীয়বার ডাক পেয়ে যেন বোকা না হতে হয়, সে প্রত্যাশা করছি। এবার যদি সার্চ কমিটি স্বচ্ছতা বজায় রেখে যোগ্য ও নিরপেক্ষ লোকদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন না করে, তাহলে দেশের রাজনৈতিক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
আরও পড়ুন-
- সার্চ কমিটির সদস্য হলেন যারা
- ১০ দিনও সময় পাচ্ছে না সার্চ কমিটি
- সার্চ কমিটির কাছে নাম দিতে পারবেন যে কেউ
- গ্রহণযোগ্য-দক্ষদের নিয়ে নিরপেক্ষ ইসি চান বিশিষ্টজনেরা
- নাম চেয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দেবে সার্চ কমিটি
- ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি, রাষ্ট্রপতি মনোনীত সদস্য ছহুল-আনোয়ারা
- রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যোগ্য ব্যক্তিদের নাম চাইবে সার্চ কমিটি
সুজন সম্পাদক বলেন, সার্চ কমিটি নাম যেন কেবল বাছাই না করে। নামগুলো যোগ্য ও নিরপেক্ষ কি না, সেটিও যাচাইও করতে হবে। অতীতের মতো কোনো দল কিংবা জোটের দেওয়া নাম আমলে নিয়েই যেন কমিশন গঠন না করা হয়, এটি প্রত্যাশা থাকবে।
বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করার আগে যেন ধারাবাহিকভাবে নামগুলো জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়। তা না করতে পারলে স্বচ্ছতার মাধ্যমে দক্ষ ও নিরপেক্ষ লোকদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব হবে না।
এর আগে, সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এই তালিকাটি প্রস্তুত করা হবে রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়ার জন্য। সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে নামের তালিকাটি দেবে। রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত নেবেন, তিনি এটি প্রকাশ করবেন কি না।
এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নাম প্রকাশ করলেই বরং প্রক্রিয়াটি আরও বেশি স্বচ্ছ হবে। তাছাড়া আইনেও কোথাও বলা নেই যে রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা তালিকাটি কোথাও প্রকাশ করা যাবে না। ফলে এই তালিকাটি প্রকাশ করলে সেটি অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
এদিকে, সার্চ কমিটি আলোচনার জন্য যাদের ডেকেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম— সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ ও এ জে মোহাম্মদ আলী, সাংবাদিক মাহফুজ আনাম, মুনতাসির মামুন, রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, অ্যাডভোকেট শাহদীন মালিক, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ড. বদিউল আলম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, ইউসুফ হোসেন হুমায়ন।
আমন্ত্রিতদের মধ্যে আরও রয়েছেন অধ্যাপক গোলাম রহমান, অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, আসিফ নজরুল, অধ্যাপক মাকসুদ কামাল, এফবিসিসিআই সভাপতি জসিমউদ্দিন , সাবেক এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদ, ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, সাংবাদিক আবেদ খান, মাহফুজা খানম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, অধ্যাপক কামরুল ইসলাম খান ও এম কে রহমান।
এর আগে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। একইদিন (৫ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে সার্চ কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন— সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন এবং কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সার্চ কমিটি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ অনুযায়ী দায়িত্ব ও কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন। সার্চ কমিটির কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এই কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও চার জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। তবে আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটি নতুন কমিশনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে নাম সুপারিশে সময় পেয়েছে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, আইনি জটিলতা থাকলে সার্চ কমিটি ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য নাম সুপারিশ করতে প্রস্তুত।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর