বিজ্ঞাপন

কোটা বাতিল: মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের শাহবাগ অবরোধ

October 3, 2018 | 10:12 pm

।। ঢাবি করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সব সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ সব ধরনের কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তে বিক্ষোভ করছেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের নেতাকর্মীরা। সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের আগ পর্যন্ত তারা অবরোধ অব্যাহত রাখবেন বলে জানান। এরই মধ্যে তাদের এই আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়েছে ছাত্রলীগ।

বুধবার (৩ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার ৪০ থেকে ৫০ জন নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে বিক্ষোভকারীর সংখ্যা বাড়ছে।

বিজ্ঞাপন

শাহবাগে অবস্থান নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তানরা কোটা বাতিল মানতে পারছি না। এই সিদ্ধান্ত জামায়াত-শিবিরের সিদ্ধান্ত। আমরা যতদিন আছি, মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান হতে দেবো না।

সরকারি চাকরিতে কোটা বহাল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, দেশের সব ইউনিটের নেতার্কেীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা ঢাকায় আসবে। তাদের নিয়ে শাহবাগে বড় সমাবেশ হবে।

বিজ্ঞাপন

আল মামুন বলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশ অযৌক্তিক ও মনগড়া বলে আমরা মনে করি। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী। সারাদেশের সব মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা এলে ঢাকা শহর অবরোধ করে দেওয়া হবে। আমরা সরকারকে বলে দিতে চাই, মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র জমা দিয়েছে কিন্তু ট্রেনিং জমা দেয়নি। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের রক্ত বীরের রক্ত।

এসময় তারা তারা ‘মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত মানি না, মানব না’, ‘৩০ শতাংশ কোটা বহাল রাখো’, ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা এক হও, লড়াই করো’, ‘মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

পরে রাত ১০টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের এই অবরোধে একাত্মতা ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগ। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী নেতাকর্মীদের নিয়ে এসে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবিতে একাত্মতা জানান।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের নেতাকর্মীরা শাহবাগে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করায় শাহবাগ মোড়ের আশপাশের সড়কগুলোতে যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে শাহবাগকে ঘিরে প্রতিটি রাস্তাতেই তৈরি হয়েছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি।

এর আগে, বুধবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিলে উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সুপারিশ অনুমোদন দেওয়া হয়। শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ জুলাই রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নির্দেশক্রমে জনপ্রশাসন বিভাগের সচিব ফয়েজ আহমেদের সই করা এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ওই কমিটি গঠন করা হয়।

সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত ৮ এপ্রিল তারা শাহবাগে অবস্থান নিলে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে এবং টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। পরে ‍পুলিশের সঙ্গে আন্দোলকারীদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরই মধ্যে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটে।

পরদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করে কোটা সংস্কারে একমাস সময় নেন। তবে শিক্ষার্থীরা দ্রুত পদক্ষেপের দাবিতে সরকারের আশ্বাস প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যায়। এ আন্দোলন পরে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ে।

একপর্যায়ে গত ১১ এপ্রিল সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। পরে মে মাসে কোটার বিষয়ে একটি কমিটি গঠনের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেই প্রস্তাব অনুযায়ী জুলাইয়ে গঠিত হয় কমিটি। সেই কমিটি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে একাধিক বৈঠকের পর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিলের সুপারিশ করে। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে আগের মতোই কোটা বহালের সুপারিশ করা হয়। সেই সুপারিশই আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন পেয়েছে।

ছবি: হাবীবুর রহমান, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট

সারাবাংলা/কেকে/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন