বিজ্ঞাপন

ঢাকায় আজ ভোগান্তি পথে পথে

March 7, 2018 | 3:26 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা:`উত্তরা থেকে রওনা দিয়েছি সকাল সাতটায়। কাকরাইলে এসে পৌঁছেছি সকাল সাড়ে দশটায়। এটা কোন ধরনের জনসহায়ক রাজনীতি তারা করছেন?’ প্রশ্ন করেন উত্তরার বাসিন্দা নাজিম খান।

কেবল নাজিম খান নন। পুরো ঢাকা জুড়েই আজ কোথাও রয়েছে রাস্তা ফাঁকা, আবার কোথাও কোথাও তীব্র যানজট। কোথাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পুরো রাস্তা। এতে করে ঢাকা শহর জুড়ে নগরবাসী পরেছেন সীমাহীন ভোগান্তিতে। বেলা যত বাড়তে থাকে ততই বেড়ে চলে ভোগান্তি।

বিজ্ঞাপন

বেলা ১২ টায় জিগাতলার বাসা থেকে পুরান পল্টন অফিসের  উদ্দেশ্যে পথে বের হন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের  কর্মী  হাশেম আলী। পরিবহন সংকট আর পথে পথে ব্যারিকেডের কারণে  পায়ে হেঁটেই সাড়ে তিনঘণ্টা পর তিনি  অফিসে পৌঁছান। সারাবাংলাকে তিনি জানান তার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। বলেন, ‘রাস্তায় যেসব বাস চলছে তা রাজনৈতিক কর্মীদের দখলে। রিক্সা কম আর ভাড়াও দ্বিগুণ। পায়ে হেঁটে এসেও তিনবার পুলিশের বেরিকেডে পড়েছি। মানুষ দলে দলে হাঁটছে। অসম্ভব রকমের ভোগান্তি পথে।’

ঐতিহাসিক সাত মার্চ উপলক্ষে আওয়ামী লীগের জনসভা আজ সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে। বিকেল তিনটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসভায় উপস্থিত হন। কিন্তু সকাল থেকেই রাজধানীর চারিদিক থেকে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতা কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে এগুতে থাকে সোহ্‌রাওয়ার্দীর দিকে। আর তাতে করে পুরো রাজধানী জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে যানজট।

বিজ্ঞাপন

একই সঙ্গে কোথাও যানজট আবার কোথাও গণপরিবহনের সংকট। যারা ব্যক্তিগত গাড়িতে করে আজ কাজে বেরিয়েছিলেন তাদেরকে অনেক রাস্তা ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে অনেক রাস্তা আটকে দেওয়ার কারণে।

রাজধানীর ইস্কাটন থেকে পান্থপথে যাবেন নওরীন আক্তার। কিন্তু রাস্তায় নেমেই তিনি পরেন রিক্সা সংকটে। একইসঙ্গে রাস্তায় মিছিলের কারণে ছিল না কোনো গণপরিবহন। নিজের ভোগান্তির কারনে নওরীন সর্তক করেছেন অন্যদের। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘খুব প্রয়োজন না হলে আজকে কেউ বাসা থেকে বের হবেন না।’
একই কথা লিখেছেন সাংবাদিক অপূর্ণ রুবেল। কিছুটা ক্ষোভ নিয়ে ব্যঙ্গ করে তিনি বলেন, ‘আজকে কোথাও কোনো জনদুর্ভোগ নাই।’

 

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলার স্টাফ রিপোর্টার শামীম রিজভী দায়িত্ব পালন করছেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশেই। রিজভী বলেন, ‘আজ দোয়েল চত্বর, শাহবাগ, টিএসসি এবং মৎস্য ভবনে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। সাধারণ মানুষকে এ জায়গাগুলো পার হতে হচ্ছে পায়ে হেটে। এতে করে ভোগান্তিতে পরেছেন মানুষ, বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা।’

রিজভী কথা বলেছেন মিরপুর থেকে আসা মিজানুর রহমানের সঙ্গে। মিজানুর জানিয়েছেন, তিনি মিরপুর থেকে রওনা হয়ে মতিঝিল যাচ্ছিলেন ব্যাংকের কাজে। কিন্তু বাসা থেকে বের হয়ে তিনি বাংলামোটর পর্যন্ত এসে বাস থেকে নেমে যান, পায়ে হেঁটে রওনা দেন। মিজানুর বলেন, বাসে করে আজ মতিঝিল যেতে হলে রাত হয়ে যাবে, তাই পায়ে হেঁটে রওনা হয়েছি।

এ বছর যশোর থেকে এসে ঢাকা কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছেন তপন কুমার দাস। তপন ঢাকা শহরের তেমনটা চেনেন না, কেবল রিক্সায় করে কলেজে যাতায়াত করেন। কিন্তু আজ তার রিক্সা আটকে দেওয়া হয়েছে দোয়েল চত্বরের আসা মাত্র। তাই তিনি যাকে সামনে পাচ্ছেন তাকে ধরেই জানতে চাচ্ছেন ঢাকা কলেজে যাবার পথ কোনটি। তপন বলেন, ‘কোনোদিকে কোথায় যাবো-বুঝতে পারছি না, এমন ভোগান্তিতে পড়তে হবে ভাবিনি।’

ভুক্তভোগীরা বলছেন, ‘জনসভা উপলক্ষে যারা ধানমণ্ডি, শাহবাগ ও ফার্মগেটের দিকে যাচ্ছেন তাদের ভোগান্তিটা আজ খুব বেশি হচ্ছে। তাদেরকে হয় কাকরাইল দিয়ে নয়তো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দিয়ে অনেকটা ঘুরে যেতে হচ্ছে।’

তারা বলছেন, এসব জনসভার সময়ে বিকল্প পথ রাখাটা খুব জরুরি নয়তো। সবার পক্ষে তো পায়ে হাঁটা সম্ভব হয় না। এখানে অনেক নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা রয়েছেন যারা এই রোদের ভেতরে রাস্তায় হাঁটতে পারছেন না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়মাসের শিশু সন্তানকে নিয়ে এসেছিলেন রায়হানা আউয়াল। তিনি এসেছেন মগবাজার থেকে। কিন্তু শাহবাগ ডানে ঘুরে কাটাবনে এসে তিনি দেখেন কাটাবন থেকে ঘুরে আসার পথ ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। পরে তিনি হাতিরপুল ঘুরে আজিজ সুপার মার্কেট ঘুরে আসেন হাসপাতালে। রায়হানা বলেন, ‘এভাবে যদি ভোগান্তিতে পড়তে হয়, তাহলে ভেতর থেকে রাজনীতির প্রতি অনিহা জন্মায়। ভালোবাসা-শ্রদ্ধা আসতে হয় মন থেকে-ভেতর থেকে।’

সারাবাংলা/জেএ/এসআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন