বিজ্ঞাপন

দশ ট্রাক অস্ত্র ‘ধরিয়ে দেওয়া’ পুলিশ কর্মকর্তার প্রাণ গেল সড়কে

June 18, 2018 | 7:24 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দশ ট্রাক অস্ত্র ধরিয়ে দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী তৎকালীন পুলিশ সার্জেন্ট হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। ফেনীর রামপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রোববার (১৭ জুন) রাতে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ১০ ট্রাক অস্ত্র ‘ধরিয়ে দেওয়ার অপরাধে’ তিনি নির্যাতনের শিকার হয়ে আলোচনায় এসেছিলেন। হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানার পিআই হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের বন্দর জোনের সহকারী কমিশনার কামরুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার গোবিন্দপুরে নিজ বাড়িতে ঈদ করতে গিয়েছিলেন হেলাল। রোববার কুমিল্লা থেকে গাড়ি চালিয়ে চট্টগ্রাম ফিরছিলেন। ফেনী জেলার রামপুরে তার গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে তিনি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) জেটিঘাটে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালানটি ধরা পড়ে। সেসময় হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া ছিলেন নগরীর বন্দর থানার কয়লার ডিপো পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ।

সিইউএফএল জেটিতে অস্ত্র খালাসের খবরটি প্রথম জানতে পারেন হেলাল এবং তারই সহকর্মী বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আলাউদ্দিন। তারা দু’জন প্রথমেই ওই জেটিতে ছুটে যান এবং অবৈধভাবে অস্ত্র খালাস ধরিয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

বিজ্ঞাপন

দশ ট্রাক অস্ত্র আটকের পর ২০০৫ সালে সেই চালান থেকে দু’টি একে-৪৭ রাইফেল চুরি করে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে হেলাল উদ্দিন ও আলাউদ্দিনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তাদের নামে নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানায় মামলাও হয়েছিল। এই দু’জন পুলিশ সদস্যকে চাকুরিচ্যুতও করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে তাদের মামলা প্রত্যাহার হয়। এরপর ২০১১ সালে দু’জন চাকরি ফিরে পান।

২০১২ সালের ২৯ ও ৩০ জুলাই ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন হেলাল উদ্দিন। এসময় তিনি ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরিয়ে দেওয়ার অপরাধে তাদের গ্রেফতারের পর র‌্যাবের নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের তৎকালীন পিপি কামাল উদ্দিন আহমেদ তখন আদালতে বলেছিলেন, সার্জেন্ট হেলাল উদ্দিন ও আলাউদ্দিনের কারণে দশ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এজন্য বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার তাদের অস্ত্র মামলার আসামি করে ও গ্রেফতার করে নির্যাতন করে। পায়ে ডান্ডাবেড়ি পড়িয়ে আদালতে সাক্ষ্য দিতে এনে তাদের হয়রানি করে।

দ্বিতীয় দফায় দেওয়া সাক্ষ্যে হেলাল উদ্দিন জানিয়েছিলেন, ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের সময় আবুল হোসেন নামে একজন উলফা নেতা তাদের বাধা দিয়েছিলেন। পরে টিআই প্যারেডে (আসামি শনাক্তকরণ) তিনি আসামি মেজর লিয়াকতকে আবুল হোসেন বলে শনাক্ত করেছিলেন।

বিজ্ঞাপন

ওই মামলায় কয়েকজন সাক্ষীর সাক্ষ্যপ্রমাণে এই আবুল হোসেন ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম’র (উলফা) সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া বলে তথ্য এসেছিল।

চোরাচালান ও অস্ত্র আইনে দায়ের হওয়া দুই মামলার রায় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি ঘোষণা করেন চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের সিনিয়র স্পেশাল জজ-১ এস এম মুজিবুর রহমান। চোরাচালান মামলার রায়ে জামায়াতের আমির (যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত) ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৪ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। অস্ত্র মামলার রায়ে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হেলাল উদ্দিনের স্ত্রী ও দুই সন্তান থাকতেন কুমিল্লা শহরে। দুই সন্তানের মধ্যে তার মেয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে গত বছর এইচএসসি পাস করেছেন, ছেলে কুমিল্লা জেলা স্কুলের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

সারাবাংলা/আরডি/এটি

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন