বিজ্ঞাপন

ধরন দেখে অপরাধী চক্র শনাক্ত, ‘ওরা গাড়ি চালক’

January 29, 2019 | 7:10 pm

।। রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে নতুন একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই চক্রের অধিকাংশ সদস্যই পেশায় গাড়িচালক। তারা গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরুতে থাকে। কৌশলে লোকজনকে গাড়িতে তুলে নিয়ে জিম্মি করে এবং নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালায়।

সম্প্রতি নগরীতে একটি ছিনতাই ও ধর্ষণ ঘটনা ঘটেছে। দুইটি অপরাধ সংঘটনের ধরন একই ছিল। সেই বিষয়টি তদন্তে নেমে নতুন এই চক্র সম্পর্কে জানতে পেরেছে নগর পুলিশ।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মেহেদী হাসান সারাবাংলাকে বলেন, কয়েকদিন আগে মুসলিম হাইস্কুলের সামনে থেকে এক ছাত্রকে প্রাইভেট কারে তুলে জিম্মি করে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে দুর্বৃত্তরা। এরপর গত ২৭ জানুয়ারি দিনে-দুপুরে এক স্কুলছাত্রীকে প্রাইভেট কারে তুলে নিয়ে দু’জন মিলে ধর্ষণ করে। এই দু’টি ঘটনার মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি-না তা আমরা খতিয়ে দেখছি। তবে এটা নিশ্চিত হয়েছি যে, গাড়ি চালানোর আড়ালে একটি সংঘবদ্ধ চক্র নগরীতে এই ধরনের বিভিন্ন অপরাধ করে বেড়াচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, অনেক ব্যবসায়ী-শিল্পপতি, চিকিৎসক, আইনজীবীসহ ধনী পেশাজীবীদের ব্যক্তিগত গাড়িচালক আছেন। যারা সকালে গাড়ি করে কর্মস্থলে যান এবং সন্ধ্যায় ফেরেন। অনেক গাড়ি সকালে শুধু বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যায় এবং বিকেলে নিয়ে আসে। মাঝখানের পুরো সময় গাড়িটা থাকে চালকের নিয়ন্ত্রণে। অনেক প্রতিষ্ঠানেরও এমন গাড়ি রয়েছে। এসব চালকদের নেতৃত্বেই একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে উঠেছে, যারা মাঝখানের ওই সময়টায় গাড়ি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করছে। এই বিষয়ে আমরা সতর্ক হয়েছি, গাড়ির মালিকদেরও সতর্ক হতে হবে।

গত ২৪ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর লালদিঘীর পাড়ে সরকারি মুসলিম হাইস্কুলের সামনে থেকে অপহরণের শিকার হয় ওই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্র। দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে অপহরণকারীরা তাকে নগরীর ঘাটফরহাদ বেগ এলাকায় ছেড়ে দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ নগরীর বিভিন্নস্থানে অভিযান শুরু করে, তবে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

এরপর ২৭ জানুয়ারি একইভাবে একটি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর কোতোয়ালী থানার জামালখানে পিডিবি আবাসিক কোয়ার্টারের সামনে থেকে স্থানীয় একটি মাদরাসার নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে জোর করে প্রাইভেট কারে তুলে নেয় দুর্বৃত্তরা। গাড়িতে চালকসহ দুই যুবক ছিল। তারা গাড়িটি নির্জন সার্সন রোডে নিয়ে গিয়ে গাড়ির ভেতরেই ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ভিডিওচিত্র ধারণের অভিনয় করে তারা এবং সেই ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মেয়েটিকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে।

বিজ্ঞাপন

ঘটনাটি পুলিশকে জানানো হলে, মো. শাহাবুদ্দিন (২৩) ও শ্যামলকে (৩০) গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে মো. শাহাবুদ্দিন (২৩) পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। শ্যামল দে (৩০) পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।

এই প্রসঙ্গে কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, প্রথমে গাড়ি চালাচ্ছিল শ্যামল। শাহাবুদ্দিন মেয়েটিকে জোর করে গাড়িতে তুলে নেয়। গাড়ি সার্সন রোডে নিয়ে পেছনের সিটে শাহাবুদ্দিন মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। তখন শ্যামল মোবাইলে সেটা ভিডিও করার অভিনয় করে। এরপর শাহাবুদ্দিন ড্রাইভিং সিটে বসে, শ্যামল ধর্ষণ করে। এদের সঙ্গে তৃতীয় আরও একজন যুবক ছিল। তার নাম-পরিচয় আমরা জানতে পেরেছি। তবে সে ধর্ষণ করেনি।

কোতোয়ালী থানার ওসি আরও জানিয়েছেন, পুলিশ কৌশলে ধর্ষকদের গ্রেফতারের ফাঁদ পেতেছিল। সোমবার (২৮ জানুয়ারি) শাহাবুদ্দিন ও শ্যামল আবারও মেয়েটিকে ফোন করে তাদের কাছে যেতে বলে। না গেলে তারা ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। পুলিশের পরামর্শ অনুযায়ী, ভুক্তভোগী নগরীর দিদার মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে শাহাবুদ্দিনকে যেতে বলে।

শাহাবুদ্দিন, শ্যামল ও আরেকজন দিদার মার্কেটের সাফা আর্কেডের সামনে এসে মেয়েটিকে গাড়িতে তুলে চকবাজারের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। পুলিশ গাড়িটির পিছু নেয়। গাড়িটি বিভিন্ন সড়ক ঘুরে নগরীর লালদিঘীর পাড় এলাকায় এসে পুলিশের ব্যারিকেডের মুখে পড়ে। তখন তিনজন গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত পালানোর চেষ্টা করে। পুলিশ ওই গাড়ি থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে। এরপর প্রাইভেট কারের সূত্র ধরে নগরীর ডিসি রোড থেকে শ্যামলকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সোমবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার মেরিনার্স রোড থেকে শাহাবুদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়, বলেন মোহাম্মদ মহসীন।

বিজ্ঞাপন

তিনি দাবি করেন, শাহাবুদ্দিনকে গ্রেফতারের সময় সংঘবদ্ধ চক্রের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ হয় পুলিশের। এতে ঘটনাস্থলেই শাহাবুদ্দিনের মৃত্যু হয়। সেখান থেকে ১টি ওয়ান শ্যুটার গান ও ৪ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া বন্দুকযুদ্ধে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) অনুপ কুমার বিশ্বাস ও কনস্টেবল ফারহান আহমেদ রাসেল আহত হন। অপরাধের ধরনে মিল থাকায় শুরুতেই আমাদের সন্দেহ হয়। পরে শ্যামলের কাছ থেকেও কিছু তথ্য পেয়েছি আমরা। এখন পুরো চক্রটিকে শনাক্ত করে তাদের গ্রেফতার করার চেষ্টা করছে পুলিশ।

সারাবাংলা/এটি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন