বিজ্ঞাপন

‘পা নাড়াচ্ছেন-চোখ খুলছেন, তবে অবস্থা এখনও ক্রিটিক্যাল’

March 3, 2019 | 5:52 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থার এখনও তেমন উন্নতি হয়নি। তিনি পা নাড়াতে পারছেন, চোখও খুলছেন। তবে তার শারীরিক অবস্থা এখনও ‘ক্রিটিক্যাল’ বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান।

ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ সংবাদ জানাতে রোববার (৩ মার্চ) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে বিএসএমএমইউয়ের মিল্টন হলে এক আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

আরও পড়ুন- এয়ার অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসছে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসক দল

বিজ্ঞাপন

অধ্যাপক আলী আহসান বলেন, ওবায়দুল কাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর যা যা ওষুধ দেওয়া দরকার, সেগুলো তাকে দিয়েছি। তারপর তাকে নিয়ে আসা হয় ক্যাথ ল্যাবে (ক্যাথেটারাইজেশন ল্যাবরেটরি)। এনজিওগ্রাম করে দেখা গেল, তার তিনটি আর্টারি (অক্সিজেনবাহী রক্তনালী, ধমনী) ব্লকড। তার আগে থেকেই ডায়াবেটিস ছিল, সেটাও অনিয়িন্ত্রত ছিল, অনেক বেশি হয়ে গিয়েছিল (রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ)। তার ব্লক হওয়া তিনটি রক্তনালীর মধ্যে বাম পাশের যেটা হৃদযন্ত্রের দুই-তৃতীয়াংশ রক্ত সরবরাহ করে, যেটাকে আমরা এলএডি (লেফট অ্যান্টেরিয়র ডিসেন্ডিং) আর্টারি বলি, সেটা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। সেটা খুলে দিলেই হয়তো একটু উন্নতি হবে।

ক্রিটিক্যাল

এই চিকিৎসক বলেন, প্রাথমিকভাবে পিসিআইয়ের (পারকিউটেনাস করোনারি ইন্টারভেনশন) মাধ্যমে তার ওই ধমনীতে স্টেনটিং (রিং পরানো) করে ব্লকটি খুলে দেওয়া হয়। এরপর তিনি দুই ঘণ্টার মতো ভালো ছিলেন। তারপর দেখা যায়, রক্তচাপ কিছুটা কমে যাচ্ছে, আবার কিছুটা বেড়ে যাচ্ছে। ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স (রক্তে ক্যালসিয়াম, ক্লোরাইড, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম প্রভৃতি পদার্থের মাত্রায় অসামঞ্জস্যতা) ছিল। সবার সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আইএবিপি (ইন্ট্রা-অ্যাওর্টিক বেলুন পাম্প) প্রতিস্থাপন করা হবে, এই যন্ত্র রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রিত রাখে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- লাইফ সাপোর্টে ওবায়দুল কাদের

ওবায়দুল কাদেরের সর্বশেষ অবস্থা প্রসঙ্গে অধ্যাপক আলী আহসান বলেন, আইএবিপি প্রতিস্থাপনের পর তিনি হেমোডাইনামিক্যালি স্ট্যাবল আছেন, চোখ খুলছেন, কথা বলছেন, কিন্তু ক্রিটিক্যাল অবস্থাতে আছেন। তিনি পা নাড়ছেন, চেষ্টা করছেন কথা বলার। এই অবস্থাতেই তিনি আছেন। এই হেমোডাইনামিক্যাল স্ট্যাবিলিটি যদি আরও কিছু সময় থাকে, তার পরবর্তী চিকিৎসার জন্য আমাদের সিদ্ধান্ত হবে দু’টি— আমরা মেডিকেল থেরাপিতে যেতে পারি অথবা বাইপাস সার্জারি করতে পারি। তার অন্যান্য যে আর্টারিগুলোতে ব্লক রয়েছে, সেগুলো খুলে দেয়ার জন্য বাইপাস করতে পারি।

তিনি বলেন, সময়ের সঙ্গে তার শারীরিক অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমি আগেই বলেছি, ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা না গেলে কিছুই বলা যাবে না। উনি এখনও ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী তাকে দেখতে এসে যখন ডাকলেন, তখন তার চোখের পাতা নড়ছিল (ব্লিংকিং)। রাষ্ট্রপতি যখন এলেন, তিনি তখন চোখ বড় করে তাকালেন। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম যখন এলেন, তখনও তিনি তাকিয়েছেন। আমি তার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করছি।

আরও পড়ুন- ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে হাসপাতালে রাষ্ট্রপতি ও স্পিকার

বিজ্ঞাপন

ওবায়দুল কাদেরকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে চিকিৎসকরা বলেন, এ অবস্থায় তাকে দেশের বাইরে পাঠাতে গেলে তার শারীরিক অবস্থা আনস্ট্যাবল হতে পারে। তবে সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসক দল আসছে। তারা যদি মনে করে যে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাদের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও জনবল আছে, তাহলে তারা নিয়ে যেতে পারবে।

আমাদের দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। এ অবস্থায় দেশেই ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসা সম্ভব কি না— এমন প্রশ্নের উত্তরে বিএসএমএমইউয়ের কার্ডিও সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক অসিত বরণ অধিকারী বলেন, উনি কিন্তু সেটেল করেছিলেন, দুই ঘণ্টা ভালোও ছিলেন। কিন্তু তিনি এখন যে অবস্থায় আছেন, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে কিছুটা সময় লাগে। সেটা ৬ থেকে ১২ ঘণ্টা হতে পারে, আবার কখনও কখনও এক থেকে দুই দিনও লাগতে পারে। তারপরও তিনি এই ক্রিটিক্যাল অবস্থাতেও চোখ খুলছেন, বন্ধ করছেন।

আরও পড়ুন- ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী

অধ্যাপক অসিত বরণ বলেন, রাষ্ট্রপতি তাকে দেখতে এসে যখন ডাকলেন, তখনও তিনি চোখ খুলে তাকালেন। তারপরও বলতে পারছি না তিনি শতভাগ শঙ্কামুক্ত (আউট অব ডেঞ্জার)। তবে তার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এখন এই গতি যদি আরও ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকে, তাহলে বলতে পারব তিনি বিপদমুক্ত হতে যাচ্ছেন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে বলব, তিনি সুস্থ হয়েছেন।

বিএসএমএমইউ উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, চিকিৎসকরা যদি মনে করেন, তাহলেই তাকে দেশের বাইরে পাঠানো হবে। আর চিকিৎসকরা যদি মনে না করেন অথবা পরিস্থিতি যদি পাঠানোর মতো না থাকে, ডিটেরিওরেট করার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে কিন্তু তাকে পাঠানো যাবে না।

আরও পড়ুন- ‘ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল নয়’

তিনি আরও বলেন, তাছাড়া বিদেশ থেকে যে টিম আসছে, সেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কোনো জটিলতা তৈরি হলে সেটা ফেস করার মতো বা ট্যাকল করার মতো যে ধরনের প্রযুক্তি, জনবল ও বিশেষায়িত দক্ষতা যদি থাকে, তাহলেই কেবল আমরা অ্যালাউ করব (দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে), নয়তো আমরা (অ্যালাউ) করব না।

ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় সিঙ্গাপুরর থেকে যে টিমটি আসছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, এই টিমের বিষয়ে আমি জানি না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ বিষয়ে যোগাযোগ করছেন।

রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করানো হয় ওবায়দুল কাদেরকে। তার চিকিৎসায় কাজ করছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি মেডিকেল বোর্ড। বিএসএমএমইউ কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আলী আহসানের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডে আরও রয়েছেন অধ্যাপক ডা. চৌধুরী মেশকাত আহমেদ চৌধুরী, অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবব্রত ভৌমিক, অধ্যাপক ডা. একেএম আক্তারুজ্জামান, কার্ডিও সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. রেজওয়ানুল হক, অধ্যাপক অসিত বরণ অধিকারী, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান, ডা. তানিয়া সাজ্জাদ, প্রিভেনটিভ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক প্রমুখ।

সারাবাংলা/জেএ/এনআর/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন