বিজ্ঞাপন

বিশ্ব ইজতেমা চেয়ে হাইকোর্টে রিট

January 21, 2019 | 6:39 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: টঙ্গীতে তুরাগ নদীর তীরে তাবলিগ জামায়াতের বাৎসরিক আয়োজন বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনে সরকারের সহযোগিতা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছেন সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী ও তাবলীগের সাথী। একইসঙ্গে গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্রের কার্যকারিতাও স্থগিত চাওয়া হয়েছে রিটে।

সোমবার (২১ জানুয়ারি) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও তাবলীগের সাথী মো. ইউনুছ মোল্লা। রিটে ধর্মমন্ত্রণালয়ের সচিব, উপসচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিবসহ তিন জনকে বিবাদী করা হয়েছে।

আরও পড়ুন- অনিশ্চিত বিশ্ব ইজতেমা

বিজ্ঞাপন

রিটকারী ইউনুছ মোল্লা জানান, আগামীকাল (মঙ্গলবার, ২২ জানুয়ারি) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্টে বেঞ্চে শুনানি হবে।

ওই আইনজীবী জানান, তাবলিগ জামাতের ভেতর দু’টি পক্ষের দ্বন্দ্ব চলছে বেশ কিছু দিন ধরে। এ দ্বন্দ্ব সংঘাতে রূপ নিচ্ছে। এ কারণে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিপত্র জারি করে বাংলাদেশ দাওয়াতে তবলিগের কার্যক্রম সুষ্ঠ, সুন্দর ও সুশৃঙ্খলরূপে পরিচালনার জন্য কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু এ পরিপত্র জারির ছয় দিন পরই অন্য একটি পরিপত্র জারি করে প্রথম পত্রের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এই প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ বেআইনি উল্লেখ করে এ রিট দায়ের করা হয়েছে বলে জানান এ আইনজীবী।

আরও পড়ুন- দেওবন্দে ৪ পক্ষের বৈঠকে আসবে ইজতেমার সিদ্ধান্ত

বিজ্ঞাপন

প্রসঙ্গত, তাবলিগ জামাতের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রথম প্রকাশ্য রূপ পায় ২০১৭ সালে। এরপর গত বছর এই দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। ঘটনা বিবরণে জানা যায়, তাবলিগ জামাতের মুরব্বি ভারতের মাওলানা মোহাম্মদ সা’দ কান্দালভির বক্তব্যের সূত্র ধরেই এ দ্বন্দের শুরু।

সা’দ তার বক্তব্যে বলেছিলেন, ধর্মীয় শিক্ষা বা ধর্মীয় প্রচারণা অর্থের বিনিময়ে করা উচিত নয়। মিলাদ বা ওয়াজ মাহফিলের মতো কর্মকাণ্ডও এর মধ্যে পড়ে বলে মনে করেন তিনি। মাওলানা সা’দের এ বক্তব্যে ক্ষেপে ওঠে বিরোধী পক্ষ। ‍দুই পক্ষের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষও হয়েছে। এর মধ্যে ১ ডিসেম্বরের সংঘর্ষে তাবলিগ জামাতের দু’জন নিহত হন। এ ঘটনায় দুই পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করে। এর মধ্যে জানুয়ারির ১৯ থেকে ২১ ও ২৬ থেকে ২৮ জানুয়ারি— দুই ধাপে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের ঘোষণা দেন সা’দবিরোধীরা। তবে এই সময়ে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের জন্য তুরাগ তীরের ময়দান ব্যবহার না করতে পুলিশ-প্রশাসনের দ্বারস্থ হন মাওলানা সা’দের অনুসারীরা। তবে কোনো পক্ষকেই তুরাগ ময়দান ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি প্রশাসন।

আরও পড়ুন- টঙ্গীতে মুসল্লিদের দুপক্ষের সংঘর্ষ: নিহত ১, আহত অর্ধ শতাধিক

এরও আগে, গত বছর বিশ্ব ইজতেমার প্রধান ইমাম মাওলানা সাদের উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে দুইভাগে ভাগ হয়ে যায় তাবলিগ জামাতের অনুসারীরা। ওই সময় মাওলানা সা’দ দিল্লি থেকে এসে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকা পড়েন। ওই সময় বিমানবন্দরের বাইরের সড়কে সা’দবিরোধীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে মাওলানা সাদকে সুরক্ষা দিয়ে ক্যান্টনমেন্টর ভেতর দিয়ে কাকরাইলে পৌঁছে দেয় পুলিশ। এ নিয়ে কয়েকদিন কাকরাইল মসজিদের আশেপাশে দুই পক্ষের অনুসারীদের সংঘর্ষ বাধে। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে মাওলানা সা’দকে দিল্লিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনা নিয়ে প্রায় সারাবছরই দুই পক্ষের অনুসারীদের কোনো না কোনো ঝামেলা বেঁধেছে। কাকরাইল মসজিদে একপক্ষ আরেক পক্ষকে প্রবেশে বাধা দিয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে পুলিশ কখনো কখনো কাকরাইল মসজিদে দুই পক্ষের কাউকেই প্রবেশ করতে দেয়নি।

এসব বিষয় নিয়ে গত বছরজুড়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে সা’দপন্থি, সা’দবিরোধী ও সরকারপক্ষের মধ্যে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পরে গত ১৫ জানুয়ারি ভারতের দেওবন্দেও এ নিয়ে তিন পক্ষের উপস্থিতিতে বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা ছিল। তবে ভিসা জটিলতায় ২২ জানুয়ারির মধ্যে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব আনিসুর রহমান, পুলিশের ডিআইজি মনিরুজ্জামান ও  সা’দপন্থী চার জন ও সা’দবিরোধী চার জনসহ মোট ১১ জনের দেওবন্দে যাওয়ার কথা রয়েছে।

তবে এর মধ্যেই ১৭ জানুয়ারি দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম মাওলানা আবুল কাসেম নোমানির সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের (সা’দপন্থী ও সা’দবিরোধী) সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কারও সঙ্গেই সম্পর্ক না রাখার ঘোষণা দেয় ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এ নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশের গাজীপুরের টঙ্গীতে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে কি না,  তা নিয়ে সিদ্ধান্ত অনিশ্চিত হয়ে গেল।

সারাবাংলা/এজেডকে/টিআর

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন