বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গা সংকট: নেপিডোর ফাঁদে সতর্ক ঢাকা

August 3, 2018 | 9:03 am

।। এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে নেপিডোর ফাঁদে সতর্কভাবে পা ফেলছে ঢাকা। অতীতের অভিজ্ঞতার মতো এবারও মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারে— এমন আশঙ্কায় সতর্কভাবে কাজ করছেন ঢাকার কূটনীতিকরা। এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়েই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে সফল হতে চায় ঢাকা।

সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ৮ হাজার ৩২ জনের একটি তালিকা ঢাকার পক্ষ থেকে নেপিডোকে দেওয়া হয়। ওই তালিকার মধ্যে প্রায় ৩ হাজার রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই (ভেরিফিকেশন) শেষ করেছে মিয়ানমার। যাচাই করা প্রায় ৩ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে রাজি আছে এবং প্রত্যাবাসন এখনই শুরু করতে চায় বলে ঢাকাকে চিঠিতে জানিয়েছে নেপিডো।

প্রত্যাবাসন নিয়ে নেপিডোর এই চাপ নতুন কোনো কূটকৌশল কিনা— তা সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ঢাকা। এ ক্ষেত্রে ঢাকার পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, এর আগে নেপিডো একাধিকবার প্রত্যাবাসন শুরু করেও বিভিন্ন অজুহাতে তা বন্ধ করে দিয়েছে। তাই এবার এই প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়েই বাস্তবায়ন করতে চায় ঢাকা, যেন অতীতের মতো প্রত্যাবাসন শুরু হয়েই বন্ধ হয়ে না যায়।

বিজ্ঞাপন

পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সারাবাংলা’কে বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আমরা এখনও আশাবাদী। প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, তা সরেজমিন দেখার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার সফরে যাচ্ছেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের তৃতীয় বৈঠকটি এই আগস্টেই হবে নেপিডোতে।

একাধিক কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বেইজিং সফরে গত ২৯ জুন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াই ই-এর মধ্যস্ততায় মিয়ানমারের মন্ত্রী খ থিন শোয়ে’র সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্বিপক্ষীয়ভাবে বাস্তবায়ন করার ওপর জোর দেয় চীন।

ওই বৈঠকে মন্ত্রী খ থিন শোয়ে জানান, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে এরই মধ্যে প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে মিয়ানমার। খ থিন শোয়ে’র দেওয়া তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে আবুল হাসান মাহমুদ আলী প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের নেওয়া প্রস্তুতি নিজ চোখে দেখার জন্য রাখাইন অঞ্চল সফরের প্রস্তাব দেন।

বিজ্ঞাপন

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৮ আগস্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চল পরিদর্শনে যাবেন বলে সম্মত হয়েছে ঢাকা-নেপিডো। এ ছাড়া ওই সফরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আবুল হাসান মাহমুদ আলী মিয়ানমার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

একাধিক কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বিগত ১৯৭৮ সাল থেকে মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন চালিয়ে তাদেকে দেশ ছাড়া করছে নেপিডোর জান্তা বাহিনী ও দেশটির নীতিনির্ধারকরা। এর আগে একাধিকবার রোহিঙ্গারা অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে জীবন বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

সর্বশেষ গত ২০১৭ সালের আগস্টের পর থেকে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী জীবন বাঁচাতে কক্সবাজারের একাধিক শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগেও মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এখনও বাংলাদেশের একাধিক শিবিরে অবস্থান করছে। সব মিলিয়ে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এখন বাংলাদেশে আশ্রিত।

চলমান এই সংকট নিরসনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার একাধিকার চুক্তি সই করেছে। কিন্তু একবারও চুক্তির বাস্তবায়ন করেনি নেপিডো।

বিজ্ঞাপন

সর্বশেষ, গত নভেম্বরে দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘৯ অক্টোবর ২০১৬ ও ২৫ আগস্ট ২০১৭ সালের পর যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাদেরকে ফেরত নেবে মিয়ানমার। চুক্তি সইয়ের দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।’

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ঢাকার সঙ্গে সই করা চুক্তি বাস্তবায়ন না করে উল্টো বিভিন্ন অজুহাতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ভণ্ডুল করার পাঁয়তারা করছে নেপিডো। একাধিকার মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিথ্যা গল্প ফাঁদতে দেখা গেছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক গত ১৭ মে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের পর গত ২৭ মে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর থেকে ‘কক্সবাজারের শিবির থেকে প্রত্যাবাসনের প্রথম দল অভ্যর্থনা কেন্দ্রে পৌঁছেছে’ শীর্ষক প্রকাশ করা বিবৃতিতে বলা হয়, ‘৫৮ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশের কক্সবাজারের শিবির থেকে প্রত্যাবাসনের পর মিয়ানমারের অভ্যর্থনা কেন্দ্রে পৌঁছেছে।’

ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘রাখাইনের বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য গত বছরের ২৩ নভেম্বর মিয়ানমার-বাংলাদেশ এক চুক্তি সই করে। চুক্তি অনুযায়ী, ফেরত আসা জনগোষ্ঠীকে নাগা খু ইয়া ও তাঙ পিও লিটইউ অভ্যর্থনা কেন্দ্রে রাখার কথা। অভ্যর্থনা কেন্দ্রে সংশ্লিষ্টদের পরিচয় যাচাই শেষে হালা পোহ খুয়াঙ-এর ট্রানজিট শিবিরে প্রাথমিকভাবে রাখা হবে।’

যদিও নেপিডোর ওই বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে কক্সবাজারের শরণার্থী প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম এনডিসি সারাবাংলা’কে বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা আমাদের জানা নেই। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষই এই বিষয়ে ভালো বলতে পারবে।’

সারাবাংলা/জেআইএল/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন