বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধান আন্তর্জাতিকভাবেই করতে হবে

April 28, 2018 | 9:33 pm

।। এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: প্রতিবেশিদের সঙ্গে সু-সম্পর্ক রাখার নীতিতে বিশ্বাস করে বাংলাদেশ। প্রতিবেশি মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের কখনোই কোনো সংঘর্ষ বা সমস্যা হয়নি। বরং নেপিডোর একাধিক বিপদের সময় পাশে থেকেছে ঢাকা। অথচ মিয়ানমারের সৃষ্টি করা রোহিঙ্গা সঙ্কটের কারণে নানামুখী ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান আন্তর্জাতিকভাবেই করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার ( ২৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট নিজ চোখে দেখতে আসা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলের সদস্যদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।ওই বিফ্রিংয়ে এই তথ্য জানান হয় বলে একাধিক কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। এই সময় তিনি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে তথ্যবহুল প্রতিবেদনও প্রতিনিধি দলের সামনে  তুলে ধরেন বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেয়ার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ টি দেশের ৩০ জন প্রতিনিধি শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ সফরে আসেন। নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট, পেরুর রাষ্ট্রদূত গুস্তাবো মেজা-কুদরার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি সরাসরি কক্সবাজার আসলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম তাদেরকে স্বাগত জানান।

এ ছাড়া বাংলাদেশে জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো’ও প্রতিনিধি দলকে ব্রিফ করেন। মিয়া সেপ্পো তার ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আশ্রয় প্রার্থীর সংখ্যা অনেক কিন্তু ত্রাণের পরিমান সীমিত। সামনের বর্ষা মৌসুমে এই রোহিঙ্গা পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে। তার আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে উদার মানবিকতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে তার জন্য প্রশংসা করে মিয়া সেপ্পো বলেন, ‘রোহিঙ্গা সঙ্কটে বাংলাদেশও ঝুঁকিতে রয়েছে। রোহিঙ্গা নির্যাতনের সুবিচার হওয়া জরুরী।’

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সফররত নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলকে জানান হয়, রোহিঙ্গা সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশকে বহুমুখী ক্ষতি ও ঝুঁকি পোহাতে হচ্ছে। অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা, সীমান্ত নিরাপত্তা, সামাজিক ব্যবস্থা, রাজনৈতিক এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের মতো ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে স্থানীয় বিদ্যালয়গুলো বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয়রা তাদের এলাকাতে এখন সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গা সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশের বনভূমি উজাড় হচ্ছে। প্রতিদিন ৭ শ ৩০ টন গাছ কাটা হচ্ছে। এদের কারণে বণ্য প্রাণী হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। স্থানীয় শ্রম বাজারে সমস্যা হচ্ছে। বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণেও প্রভাব ফেলছে। এর মধ্যে নতুন সমস্যা হচ্ছে, এই রোহিঙ্গাদের খাবারের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আর অনুদান দিতে চাচ্ছে না। আর সমানের বর্ষা মৌষুমে যে কী হবে তা নিয়ে বাংলাদেশ খুবই চিন্তিত।

এর আগে কখনো এমন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়নি। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে বাংলাদেশকে ১০ লাখ মানুষের আশ্রয় দিতে হয়েছে। যার পেছনে রয়েছে রাখাইনের নিরীহ জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের নৃশংসতা, ধর্ষণ, হত্যা, অত্যাচার, নির্যাতন।
এর আগে ১৯৯১-৯১ সালেও মিয়ানমার এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল উল্লেখ করে বলা হয়, তখন মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ বৈঠক করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সমাঝোতা করলেও মিয়ানমার তা মানেনি। ওই সময়ের ৩৪ হাজার রোহিঙ্গা এখনো বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরে রয়ে গেছে।

এরপর ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল এই সময়েও মিয়ানমার রোহিঙ্গা নির্যাতন করেছে। এই সময়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে ৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে। ২০১৬ সালে প্রবেশ করে আশ্রয় নিয়েছে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা।
সর্বশেষ গত বছরের আগস্ট থেকে ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে আশ্রয় নিয়েছে। সব মিলিয়ে এখন বাংলাদেশের একাধিক শিবিরে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে গিয়ে বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে। শুধু কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরেই রয়েছে ৫ লাখ ৪৮ হাজার মানুষ। যা বিশ্বের সর্বোচ্চ বড় আশ্রয় শিবির।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলকে আরো জানান হয়, আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫৮ শতাংশ শিশু। ৩০ হাজারের বেশি নারী সন্তান সম্ভবা। ৩৬ হাজার ৩ শ ৭৩ জন এতিম। আর ৭ হাজার ৭শ ৭১ জন শিশুর কোনো অভিভাবক খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশের ৪ হাজার ৭ শ ৭ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে বনভূমিও রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় চুক্তিসহ যে সকল আনুষ্ঠানিক কাজ শেষ করেছে সেগুলোও প্রতিনিধি দলকে জানান হয়।

সারাবাংলা/জেআইএল/জেডএফ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন