বিজ্ঞাপন

শিশুদের আটকে পড়া গুহায় কমছে অক্সিজেন, বাড়ছে পানি

July 7, 2018 | 11:01 am

|| আন্তর্জাতিক ডেস্ক ||

বিজ্ঞাপন

থাইল্যান্ডের ‘থাম লুয়াং নাং নন গুহায়’ আটকে পড়া ১২ ক্ষুদে ফুটবলার ও তাদের সহকারী কোচকে রাতারাতি উদ্ধার করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে দেশটির কর্মকর্তারা। শনিবার (৭ জুলাই) উদ্ধার কাজের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, ‘না, আজ আর হচ্ছেনা।’

এর মধ্যে জানা গেছে, শিশুরা গুহাটির যে প্রকোষ্ঠে ঠাঁই নিয়েছে সেখানকার অক্সিজেনের মাত্রা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেখানে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়ে ১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। স্বাভাবিকভাবে যেখানে ২১ শতাংশের মতো থাকার কথা ছিল।

তবে চিয়াং রাইয়ের গভর্নর নারোংসাক ওসোত্থানাকর্ন শুক্রবার (৬ জুলাই) বলেছেন, ‘বালকেরা সুস্থ আছে এবং তারা স্বাভাবিকভাবেই শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে পারছে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘কম ঝুঁকির উদ্ধার তৎপরতা বিবেচনা করছি আমরা। কিন্তু সময় আমাদের পক্ষে নেই। তারপরও সঠিক পরিকল্পনা খুঁজে নিয়ে এবং ঝুঁকির মাত্রা কমে আসলে তাদের বের করে আনতে পারবো বলে আশা করছি।’

বিজ্ঞাপন

কিন্তু নতুন বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে মৌসুমি বৃষ্টি। দেশটিতে কেবলই বর্ষাকাল শুরু হয়েছে। এ সময়ে সেখানে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ফলে গুহার অভ্যন্তরে অন্যান্য শুকনো অংশও প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। নারোংসাকের কথাতেই উঠে এসেছে তা। তিনি জানিয়েছেন, ‘শুক্রবার সেঁচের কাজ মাত্র ১২ মিনিটের জন্য বন্ধ রাখার ফলে গুহায় পানির স্তর ৪ ইঞ্চি বেড়ে যায়।’

এমতাবস্থায় কর্মকর্তারা অনেকগুলো পরিকল্পনা বিবেচনা করে দেখছেন। জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধারকাজের জন্য প্রাথমিকভাবে তারা ‘বাডি ডাইভ’ এর কথা বলেছেন। এতে একজন করে অভিজ্ঞ ডুবুরি প্রতি বালকের সঙ্গে সাঁতার কেটে আসবে। এ কাজে থাই ডুবুরিরা নেতৃত্ব দিবে এবং তাদের জন্য অক্সিজেন ট্যাংক বহন করবে মার্কিন ডুবুরিরা।

বিজ্ঞাপন

শনিবার পরিকল্পনাটি থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চান-ও-চা’কে অবহিত করার কথা জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এ সপ্তাহের শেষের দিকে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হতে পারে। তবে আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিনা।’

কারণ হিসেবে উদ্ধারকর্মীরা বলছেন, ১১ থেকে ১৬ বছরের এ বালকেরা কেউই সাঁতার জানে না। তারা ঠিকমতো হাঁটতে পারলেও ডাইভ দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। পুরোপুরি অন্ধকার গুহাটির অনেক জায়গা পানিতে তলিয়ে আছে এবং সেখানে প্রবল স্রোত বইছে। গুহামুখ থেকে বাচ্চাদের কাছে পৌঁছুতে এবং ফিরে আসতে একজন উচ্চ প্রশিক্ষিত ডাইভারের সময় লাগছে কমপক্ষে ১১ ঘণ্টা। স্রোতের অনুকূলে তারা ৫ ঘণ্টা ডুব সাঁতার দিয়ে সেখানে যাচ্ছেন এবং প্রতিকূলে সাঁতরিয়ে ফিরে আসতে তাদের সময় লাগছে ৬ ঘণ্টা।

বিজ্ঞাপন

তারা আরও বলেন, ব্যাপারটি যে কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ তা দেখিয়ে গেছেন সামান গুনান (৩৮)। গত বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই) দিবাগত রাত ২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। গুহাটির ২ কিলোমিটার অভ্যন্তরে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণেই এমন ঘটনা ঘটে। শিশুদের ওই দলটির জন্য অক্সিজেন ট্যাংক পৌঁছে দিয়ে এসময় বাহিরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছিলেন তিনি।

এর আগে, গত শনিবার (২৩ জুন) ওয়াইল্ড বোয়ার নামের এক ফুটবল দলের ওই সদস্যরা উত্তর থাইল্যান্ডের চিয়াং রাই এলাকায় অবস্থিত থাম লুয়াং নাং নন গুহায় প্রবেশের পর নিখোঁজ হয়। এ ঘটনার নয়দিন পর উদ্ধারকাজে যোগ দিতে আসা দুজন ব্রিটিশ ডুবুরি সোমবার (২ জুলাই) রাতে তাদের খুঁজে পান।

এরপর থেকেই তাদের উদ্ধারে কয়েক ডজন থাই নেভি সিলের সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এমনকি যেকোনো উপায়ে দ্রুত শিশুদের সেখান থেকে বের করে আনতে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।

দশ কিলোমিটার দীর্ঘ থাইল্যান্ডের সর্ববৃহৎ এ পাহাড়ি গুহাটির ভেতর এমনভাবে পানি ঢুকে পড়েছে যে তাদের সেখান থেকে বাইরে বেরিয়ে আসার পথটি পুরোপুরি ডুবে গেছে। আর ১৩ জনের ফুটবল দলটি সেই গুহার মধ্যে একটি শুকনো কার্নিশের মতো জায়গায় বসে আছে।

সারাবাংলা/এএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন