বিজ্ঞাপন

সুরস্রষ্টার শ্বাসকষ্টে ভক্তের শত কষ্ট!

February 2, 2019 | 2:42 pm

।।কামাল হোসেন মিঠু, নিউইয়র্ক।।

বিজ্ঞাপন

শরৎ বাবুদের কল্যাণে যুগে যুগে প্রেমিকের পাশে ব্যর্থ শব্দটি ক্রেজি গ্লুর মতো লেপ্টে আছে। সফল বা অসফল প্রেমিকের সংজ্ঞা আমি জানি না। শুধু জানি, প্রেমিকের সঙ্গে ব্যর্থ শব্দটি যেন ডাল-ভাতের পাশে এক টুকরো কাগজী লেবু। একটা সময় ছিল আমারও, একটা সময় ছিল আমরাও…। উতলা দুপুরে ছন্নছাড়া যুবক মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি…। এখানে বলে রাখা জরুরি, উতলা দুপুর হবে, সেই উতলা দুপরে কাছে-দূরে কোকিল, বউ কথা কও, নিদেনপক্ষে একটা ঘুঘু ডাকবে অথচ যুবকের খোঁচা খোঁচা দাড়ি থাকবে না—আমাদের সময় বন্ধুমহলে তা রীতিমতো অপরাধ বলেই গণ্য হতো।


আরও পড়ুন :  এবার জর্জ ফার্নান্দেজের বায়োপিক


যাইহোক, যা ভাবছিলাম—সেই মন কেমন করা উদাস দুপুরে গন্তব্যহীন প্রেমিক যখন ব্যর্থ হওয়ার জন্য বড়ই পেরেশান, তখন গালে টোলপড়া তরুণী তাকাবে কিন্তু হাসবে না। বেণীটাকে ইচ্ছাকৃত একটু বেশি দুলিয়ে, নাক ফুলিয়ে হেঁটে যাবে। এমন না হলে বিশ্বাস করুন কিচ্ছু ভালো লাগতো না। তরুণীর চোখের আগুনে যদি ঝলসেই না গেলাম, তবে ওইসব  উদাস দুপুর দিয়ে আমি করতাম টা কী? বলুন না, উদাস দুপুরে বাউলা বাতাসে আমার কী আসতো যেতো, যদি না প্রিয়ার অবহেলায় হেঁটে যাওয়ার সেই কলিজা-কাটা মুহূর্তে রহমত ভাইয়ের চায়ের দোকান থেকে ভেসে না আসতো—

যদি এমন হতো
একটি শ্রাবণ আমায় কাঁদিয়ে
বলে যেতো সে, এইতো মরণ,
এ জীবন তবু কিছু না কিছু পেতো।

বিজ্ঞাপন

একবার যদি কেউ ভালোবাসতো…

অথবা সেই গানটি—

আমায় দিয়ে ভুল ঠিকানা সে আছে কত দূরে
ছেঁড়া তার ভাঙা সেতার বাজে না আগের সুরে
তবু ফেলে আসা পথে যেতে সমুখে দাঁড়ায়, আমারে কাঁদায়।

বিজ্ঞাপন

বুকের বামপাশে চিনচিন ব্যথা, প্রিয়ার চকিত চাউনি, আর সেই সব গান—ব্যস এই হলো সফলতার সঙ্গে একজন ব্যর্থ প্রেমিক হয়ে ওঠার ফর্মুলা। তারুণ্যে আমি একজন সফল ব্যর্থ প্রেমিক ছিলাম। শুধু আমি না, আমাদের পুরো বন্ধুমহলই ছিল একেক জন চৌকষ ব্যর্থ প্রেমিক। আমরা বুকের বোতাম খুলে, গলা ছেড়ে গাইতাম—

‘হয় যদি বদনাম, হোক আরো, আমি তো এখন আর নেই কারো’ কিংবা ‘সুখে থেকো ও আমার নন্দিনী, হয়ে কারো ঘরণী।’  আহা! সেইসব দীর্ঘশ্বাস, অব্যক্ত কষ্ট! সেইসব সুখের অসুখ! সেইসব দিন!

বুঝতেই পারছেন, কোন সে ম্যাজিশিয়ান যার অপূর্ব সৃষ্টি আমাকে সফল করেছিল একজন ব্যর্থ প্রেমিক হয়ে উঠতে! আমার তারুণ্যের, আমার যৌবনের সেই অপরিহার্য ম্যাজিশিয়ানের নামটি হলো সুরস্রষ্টা আলাউদ্দিন আলী। তার সুরের জাদুতে আমার তারুণ্য কেটেছে। এই মধ্যবয়সেও বুকের ভেতর ব্যর্থ প্রেমিকটিকে আমি পরম আদরে আগলে রাখতে পেরেছি। তার সুরে বিশ্বাস রেখে আমি জেনেছি—‘দুঃখ ভালোবেসে প্রেমের খেলা খেলতে হয়’ কিংবা ‘আমার মনের ভেতর অনেক জ্বালা আগুন হইয়া জ্বলে।’

আমি আজীবন সেই যন্ত্রণার, সেই আগুনের চাষবাদ করতে পেরেছি। কৃতজ্ঞ তার কাছে।

বিজ্ঞাপন

ব্যর্থ প্রেমিক দলের এই আমি তার সুরের অমিত উসকানিতে কোনোদিন স্থির হতে পারিনি। সময় খিটমিট করেছে বলে বাহ্যিক পরিবর্তন কিছুটা আনতে হয়েছে বটে, তবে ভেতরের এই আমি সেই বোহেমিয়ান ব্যর্থ প্রেমিকই রয়ে গেছি। নির্দ্বিধায় আমার প্লে-লিস্ট সেই সাক্ষ্য দেবে—

সাক্ষ্য দেবে একান্ত সময়ের সুর,
সাক্ষ্য দেবে—‘এমনও তো প্রেম হয়, চোখের জলে কথা কয়।’
সাক্ষ্য দেবে—‘জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো।’
আমার দেশভক্তি সাক্ষ্য দেবে যতবার আমি গলা খুলে গাইবো,
‘আসি বলে আমায় ফেলে সেই যে গেলো ভাই,
তিনভুবনের কোথায় গেলে ভাইয়ের দেখা পাই
দেবো তারই সমাধিতে আমি তোমার হাতের মালা,
আমি জনম জনম রাখবো ধরে ভাই হারানোর জ্বালা।’

শুনলাম অসুখ আর ওষুধের গন্ধে আমার ম্যাজিশিয়ান ভালো করে শ্বাস নিতে পারছেন না। তার রোদ্দুরের দরজায় খিল দিতে চায় ঝড়। তার আকাশে দৈত্যের মতো দাঁড়িয়ে আছে কালো মেঘ। জাদুকর, আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন বৃষ্টির শব্দ? জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখুন, আমাদের সম্মিলিত আবেদনে কল্যাণিয়া বৃষ্টি নেমেছে। মেঘ কেটে যাচ্ছে দ্রুত। প্রার্থনার অমোঘ শক্তিতে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে ঝড়। তাকিয়ে দেখুন, ভালোবাসার ঈমনকল্যাণ আপনার শয্যাপাশে দাঁড়িয়ে আছে। হাত ধরে আছে। ওরা সুর তুলেছে, সে সুর বড় পবিত্র, বড় কোমল। একে কী করে অবজ্ঞা করবেন ইশ্বর! তিনি তো নিষ্ঠুর নন।

সারাবাংলা/এমএম/এমএনএইচ


আরও পড়ুন :

.   ঢালিউডে নতুন জুটি: নায়ক ঢাকার, নায়িকা কলকাতার

.   জাতীয় বাজেটে চলচ্চিত্রে গুরুত্ব দিলো ভারত

.   চলচ্চিত্রাঙ্গনের অবস্থা এমনই হবার কথা ছিল


বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন