বিজ্ঞাপন

সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন আমাদের প্রতিজ্ঞা: এইচ টি ইমাম

September 17, 2018 | 2:26 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, আমরা উন্নত আধুনিক বাংলাদেশ চাই। সেই সঙ্গে চাই গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ এমন একটি দেশ যে দেশ সারাবিশ্বের আদর্শ হবে। এটি আমাদের লক্ষ্য।

‘আমরা সুষ্ঠু, অবাধ, সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন চাই। সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন আমাদের প্রতিজ্ঞা। আমরা আশা করি, আমাদের দলের এবং আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে আমরা কখনো পিছপা হবো না। অতীতেও হইনি, ভবিষ্যতেও হবো না।’

সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) সেলিব্রেটি হলে ‘শান্তিতে বিজয়, শান্তি জিতলে জিতবে দেশ’ শীর্ষক এক জাতীয় ক্যাম্পেইনের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে এ শপথ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ইউএসএআইডি এবং ইউকেএইড’র যৌথ অর্থায়ন এবং ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল ( স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ) এসপিএল প্রকল্পের আওতায় ক্যাম্পেইনটি অনুষ্ঠিত হয়।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খানসহ বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাই কমিশনার অ্যালিসন ব্লেক বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও সারাদেশ থেকে আগত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আমন্ত্রিত নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ও সহনশীল রাজনীতির চর্চা বৃদ্ধিতে, ‘শান্তিতে বিজয়’ ক্যাম্পেইনটি বাংলাদেশের সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও সাধারণ জনগণকে সচেতন করা এবং তাদের অংশগ্রহণ করার সুযোগ তৈরি করার লক্ষ্যে এটি অনুষ্ঠিত হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সারাদেশ থেকে তৃণমূলের ৪০টি জেলার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা রাজনৈতিক সহনশীলতা ও সম্প্রীতির সমর্থনে তাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে সহিংসতার বিরুদ্ধে অঙ্গীকার এবং শপথ গ্রহণ করেন।

বিজ্ঞাপন

স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিবেশ ধীরে ধীরে শান্তিপূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক ও দল হিসেবে আওয়ামী লীগের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন এইচ টি ইমাম।

আরও পড়ুন: সহনশীল ও শান্তিপূর্ণ রাজনীতি চর্চার শপথ

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই যে অগ্রগতিগুলো ধীরে ধীরে হয়েছে। এগুলো আমরা খুব সচেতনভাবে লক্ষ করি না। কিন্তু আমি যেহেতু এগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। তাই লক্ষ করি এবং দেখি আমরা কতদূর এগিয়ে গেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আজকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি, এটি তো বিনা কারণে হয়নি। এদেশের মানুষ সকলে অংশগ্রহণ করেছে বলেই এটি হয়েছে। এই উন্নয়নের পেছনে প্রাইভেট সেক্টর, জনমত, সরকার সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। সরকার দিকনির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু সেটি হলেও দূরে তাকানোর মতো ক্ষমতা থাকতে হবে যে, আমরা ভবিষ্যতে কী রকম বাংলাদেশ চাই।’

বিজ্ঞাপন

‘আমরা, বাংলাদেশ যেমন উন্নত আধুনিক বাংলাদেশ চাই তেমনি সেই সঙ্গে গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ এমন একটি দেশ চাই যেটি সারাবিশ্বের আদর্শ হবে; এটিই আমাদের লক্ষ্য’ বলেন এইচ টি ইমাম।

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সবসময়েই আক্রান্ত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে আক্রান্ত হয়েছে। আমি সেই সমস্ত ঘটনাগুলো বলতে চাই না। কিন্তু আমরা কখনো কাউকে পাল্টা আক্রমণ করিনি।’

সকল দলের সকল নেতা সবাইকে আমি দাবি করতে পারি যে, ‘আমি একজন বর্ষীয়ান মানুষ। কাজেই এদিক থেকে সবার কাছে অনুরোধ করতে পারি, আমরা ভুল মিথ্যা, প্রচারণা থেকে বিরত থাকি। বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণা থেকে বিরত থাকি। আমরা সত্য কথা বলি। সত্যকে সত্য বলব। সাদাকে সাদা বলব। কালোকে কালো বলব। যিনি অন্যায় করছেন সেটি তুলে ধরব।’

‘সেইসঙ্গে অনর্থক আমরা কাউকে গালি দেব না। কারও প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ কথাও বলব না এবং মিথ্যা প্রচারও করব না। এগুলো যদি আমরা পালন করি, বাস্তবে প্রয়োগ করি তাহলে আমি বিশ্বাস করি আমার দৃঢ় প্রত্যয় আছে, আমরা ইনশাল্লাহ আগামীতে যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনটি শান্তিতে করতে পারব, আনন্দে করতে পারব, বাংলাদেশে যেমন উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হয় সেই রকম অতীতে হয়েছে আমরা এবারও করতে পারব আশা করি।’

আয়োজকরা অত্যন্ত আন্তরিকভাবে কাজ করছেন সে জন্য কাজ করছেন এ জন্য অভিনন্দনও জানান তিনি। এছাড়াও অনুষ্ঠানটি সফল করার লক্ষ্যে তৃণমূল থেকে আগত সকল দলের নেতাদের প্রতি ধন্যবাদ জানান তিনি।

এইচ টি ইমাম বলেন, যেহেতু নিজে আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধে অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি। সেইজন্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি সত্যিকারের জনযুদ্ধ। এই জনযুদ্ধে সকলে অংশগ্রহণ করেছেন। কিন্তু জনযুদ্ধের প্রস্তুতিটি দীর্ঘকালের। এই প্রস্তুতিকালে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং যুদ্ধের আহ্বানটি করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

তিনি আমাদের গণতন্ত্রের কথা প্রথম শিখিয়েছেন। তিনিই শিখিয়েছিলেন আমাদের শান্তির কথা। তিনিই শিখিয়েছিলেন আমাদের প্রগতির কথা।

আমরা মুক্তিযুদ্ধে লড়াই করেছিলাম এবং বিশ্বব্যাপী আমাদের সমর্থন ছিল উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করছি যেহেতু আমরা সংখ্যাগরিষ্ট। আমাদের দাবি অগ্রগণ্য। আমরা স্বাধীনতার যুদ্ধের জন্য যুদ্ধ করছি। গণতন্ত্রেরর জন্য যুদ্ধ করছি এবং আমরা চাই আইনের শাসনভিত্তিক একটি দেশ। যেখানে আমরা সকলে একসঙ্গে মিলে-মিশে দেশকে উন্নতির পথে নিয়ে যাব।’

এই যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাগুলো আমি মনে করি, যে যে পার্টিতেই থাকুন না কেন এগুলো সম্পর্কে কারো দ্বিমত নেই। এগুলো যদি ধরে নেন, তাহলে ঐতিহাসিকভাবে আমরা সবসময় শান্তির জন্য চেষ্টা করেছি। আবার শান্তির জন্য অনেক রক্ত দিয়েছি।

একথা ভুললে চলবে না যে, মুক্তিযুদ্ধের পর পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অশান্তির বীজ অনেকেই বুনেছেন। বিশেষ করে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিলেন। তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছেন কিভাবে দেশটিকে পিছিয়ে নেওয়া যায় অথবা মুক্তিযোদ্ধাদের কিভাবে বিনাশ করা যায় বলে আরও যোগ করেন এইচ টি ইমাম।

এতো সবকিছ সত্ত্বেও আজকের বাংলাদেশ যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের শিকড়ে যেখানে আমরা এসে পৌঁছেছি, এটি অবশ্যই জনগণের দ্বারা। কিন্তু নেতৃত্বে যারা ছিলেন তাদের চিন্তাভাবনা অবশ্যই উন্নয়নমূলক ছিল। তারা নিশ্চয়ই অনেক দূরের দিকে দেখিয়েছেন।

‘২০০৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে যে ইশতেহার দিয়েছিলাম আমরা সেটিকে গতানুগতিক কোনো ইশতেহার বলি নাই। আমাদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তিনি জেলে থেকেই অনেকগুলো উদ্ভাবনী জিনিস লিখেছিলেন। পরবর্তীতে সেটি রূপ নেয় রূপকল্প-২০২১। সেখানে প্রথম কথাই বলা হয়েছিল দিন বদলের সনদ। অর্থাৎ আমরা দেশকে উন্নয়নের পথে অগ্রগতির পথে নিয়ে যাব। কিন্তু সেটি করতে হবে অবশ্যই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে। শান্তি না থাকলে গণতন্ত্র না থাকলে কোনো ভালো কাজ সম্ভব নয়। এটি আমি বিশ্বাস করি। আমাদের দলের নেতৃবৃন্দ বিশ্বাস করেন। আমাদের কর্মীরাও বিশ্বাস করেন।

২০০৭/২০০৮ সালে ওই সময় যখন তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিলেন সেই সময় তৎকালীন নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের কাছে আমরা বিভিন্ন দাবি করেছিলাম। আমাদের দাবি ছিল স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স দিতে হবে। এটি কিন্তু আমাদের দলের সভাপতি তিনিই প্রথম দাবি করেছিলেন।

এছাড়াও জাল ভোট বন্ধে ছবিসহ ভোটার তালিকা করার দাবিটির কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকে বলে এসেছি নির্বাচনকে দুটো জিনিস থেকে মুক্ত করতে হবে। পেশীশক্তি এবং অর্থ-এই দুটো ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।’

অনেক বাধা-বিপত্তির পরও এ সব আইন হওয়ার বাস্তবায়িত হয়েছে তার প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আগের দিনে মনোনয়নপত্র দেওয়ার সময় একটা শব্দ ছিল শোডাউন। মানে আমরা বিপুল সংখ্যক লোক নিয়ে যাব। প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানোর জন্য। এই যে ভয়ভীতি প্রদর্শন, এটি কিন্তু ওই মানি এবং মাশল’ এই দুটির ব্যবহার থেকে। এখন গত কয়েক বছর থেকে পাঁচজনের বেশি প্রার্থীর সঙ্গে যেতে পারেন না। কাজেই হইচইও নেই গোলমালও নেই।

নির্বাচনী আচরণবিধির পরিবর্তনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বর্তমানে ব্যানার-ফেস্টুন তোরণে পরিবর্তনের দিকগুলোও উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম।

সারাবাংলা/এনআর/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন