বিজ্ঞাপন

স্বপ্নপূরণের উৎসবে পদ্মা পাড়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

October 14, 2018 | 10:20 am

।। মাওয়া থেকে নৃপেন রায় ।।

বিজ্ঞাপন

দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের মানুষের স্বপ্নপূরণের উৎসবে যোগ দিতে পদ্মা পাড়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (১৪ অক্টোবর) সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন পদ্মা বহুমুখী সেতুর বিশাল কর্মযজ্ঞ।

প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে প্রকল্প এলাকায় দুই পাড়ে খুশির আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। এরইমধ্যে স্থানীয় নেতাকর্মী ও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা উতসব আমেজে মিছিল নিয়ে মাওয়া প্রান্তের সুধী সমাবেশ যোগ দিতে আসতে শুরু করেছেন।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, সেতুর প্রায় ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধনের সময়সীমা রোববারই জনগণের সামনে স্পষ্ট করবেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে পাঠানো কার্যসূচি থেকে জানা যায়, রোববার সকাল সাড়ে দশটায় মুন্সীগঞ্জের মাওয়ার উদ্দেশ্যে রাজধানীর তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে রওনা করবেন। সকাল এগারটায় মাওয়া প্রান্তের পদ্মা সেতুর নামফলক উম্মোচন, এন-৮ মহাসড়কের ঢাকা-মাওয়া এবং পাঁচ্চর-ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি পরিদর্শন, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন, মূল নদীশাসন কাজ সংলগ্ন স্থায়ী নদীতীর প্রতিরক্ষামূলক কাজের শুভ উদ্বোধন ও মোনাজাত এবং পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি পরিদর্শন করবেন। এরপর এগারটা ১৫ মিনিটে মাওয়া টোলপ্লাজা সংলগ্ন গোলচত্বরে সুধি সমাবেশে যোগ দেবেন।

এরপর দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটের দিকে জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর নামফলক উম্মোচন, ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ’ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন এবং মোনাজাতে অংশগ্রহণ শেষে বিকেলে তিনটার মাদারীপুর কাঁঠালবাড়ী ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী ঘাটে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় অংশ নেবেন শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

এর আগে গতকাল শুক্রবার (১২ অক্টোবর) প্রকল্প এলাকা সভাস্থলসহ যাবতীয় প্রস্ততি পরিদর্শনে গিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক অবদান পদ্মা সেতু, এখানে আমাদের কোনো কৃতিত্ব নেই। নেত্রীর নির্দেশ ও পরিকল্পনায় এই পদ্মা সেতু। তিনি আরও বলেন, আনপ্রেডিকটেবল নদী পদ্মা। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে আমাজন থেকেও পদ্মা নদী বেশি আনপ্রেডিকটেবল। তবে খুশির সংবাদ হল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে শুক্রবার মাওয়া প্রান্তে ৪ ও ৫ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যান বসেছে। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী ৭ নম্বর খুঁটিতেই পাইল স্থাপনের কাজ শুরুর মধ্য দিয়ে মূল সেতুর কাজের উদ্বোধন করেছিলেন। পদ্মা সেতুর ৪২টি খুঁটিতে ৪১টি স্প্যান বসবে। এর মধ্যে ১৪টি খুঁটি বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। আর নদীতে ১৮০টি পাইল স্থাপন করা হয়েছে।

দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে ২০০১ সালের ১২ জুলাই মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের কুমারভোগ এলাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু সরকার পরিবর্তন পটভূমিতে ওই ৯ বছর কাজের কোনো অগ্রগতি হয়নি। এরপর ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর ফের সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ঋণ চুক্তি বাতিল করে। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে ২০১৩ সালের ৪ মে নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ সালে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নের মূল পাইলিং কাজের উদ্বোধন করেন। এর আগে শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল কাজ উদ্বোধন করেন।

নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু হচ্ছে অর্থ ব্যয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ প্রকল্প এটি। ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি হবে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ ও দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু। দ্বিতল এই সেতুর নিচতলা দিয়ে ট্রেন চলবে। সড়ক ও রেলপথে যুক্ত হবে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা। প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৮ সালের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলে বিভিন্ন কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এ কারণেই ধারণা করা হচ্ছে রোববার পদ্মা পাড়ে দুই সুধী সমাবেশে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সময়সীমা ঘোষণা করবেন এবং টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের ধারাবাহিকতার সহায়তা চেয়ে নৌকার ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাবেন প্রধানমন্ত্রী।

স্থানীয় নেতারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে ইতোমধ্যে সাজসাজ রব পড়েছে। পদ্মা সেতুর মাওয়া টোল প্লাজার পাশের গোল চত্বরে নৌকার আদলে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে নিরাপত্তা বেষ্টনিসহ কঠোর নিরাপত্তা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রায় তিন বছর পর শেখ হাসিনার মাওয়া সফর নিয়ে পদ্মার দুই পাড়ে উচ্ছ্বাস-উৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর মুখে কবে নাগাদ উদ্ধোধন হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু, সেই সময়সীমাটি জানার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন এলাকাবাসী।

সারাবাংলা/এনআর/এসএমএন

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন